Advertisement
১৮ মে ২০২৪
ন্যাশনাল মেডিক্যাল

রোগী-মৃত্যু, ফের হামলা হাসপাতালে

মেরেকেটে ২৪ ঘণ্টা কেটেছিল। তার মধ্যেই কলকাতার আরও এক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে হামলা চালাল মারমুখী, উচ্ছৃঙ্খল জনতা। রবিবার রাতে এমনই একটা দল ঢুকে পড়েছিল নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে। সেখানে মাটিতে ফেলে মারধর করা হয়েছিল জুনিয়র ডাক্তারদের।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০১৬ ০০:৫০
Share: Save:

মেরেকেটে ২৪ ঘণ্টা কেটেছিল। তার মধ্যেই কলকাতার আরও এক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে হামলা চালাল মারমুখী, উচ্ছৃঙ্খল জনতা। রবিবার রাতে এমনই একটা দল ঢুকে পড়েছিল নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে। সেখানে মাটিতে ফেলে মারধর করা হয়েছিল জুনিয়র ডাক্তারদের।

মঙ্গলবার সকালের হামলাবাজেরা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসকদের মারধর না-করলেও ধাক্কাধাক্কি করেছে বলে অভিযোগ। অকথ্য গালিগালাজের পাশাপাশি তারা ভেঙে দেয় কার্ডিওলজি ওয়ার্ডের জানলার কাচ। তাদের তাণ্ডবে এ দিন সকালের সব চেয়ে ব্যস্ত সময়ে ঘণ্টাখানেকের জন্য পুরো বন্ধ করে দিতে হয় হাসপাতালের কার্ডিওলজি আউটডোর। যার ফলে চূড়ান্ত হেনস্থা হতে হয় গুরুতর অসুস্থ হৃদ্‌রোগীদের।

বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই হাসপাতালে আক্রমণকারীদের রাগের কারণ থাকে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ। এ ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হয়নি। হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত এক ব্যক্তিকে ইমার্জেন্সিতে নিয়ে আসার পরে তাঁর মৃত্যু হলে ভুল চিকিৎসা ও দেরিতে চিকিৎসার অভিযোগ তুলে উন্মত্ত হয়ে ওঠে ওই রোগীর সঙ্গে আসা প্রায় দুশো লোকের ভিড়। সূত্রের খবর, সকলেই মূলত মৃতের পাড়া-পড়শি।

এই ঘটনার পরে মৃতের ছেলে এবং নিকটাত্মীয়েরা অবশ্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন, চিকিৎসা নিয়ে তাঁদের কোনও অভিযোগ নেই, ডাক্তারদের উপরে ক্ষোভও নেই!

তা হলে ভাঙচুর করা হল কেন? মৃতের ছেলে বলেন, ‘‘আমরা এটা চাইনি। কিন্তু প্রচুর উল্টোপাল্টা লোক এসেছিল। তারা কোনও কথা শুনল না। খুব খারাপ লাগছে।’’

যখন মৃতের বাড়ির লোকেদের হাসপাতাল নিয়ে কোনও ক্ষোভ নেই, তখন বাইরের লোকেদের এই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে হামলার কারণটা ঠিক কী?

এখানেও চারপাশে ক্রমাগত বাড়তে থাকা হিংসাত্মক প্রবণতা, উত্তেজনা, ধৈর্যহীনতা দেখতে পাচ্ছেন সমাজতাত্ত্বিকেরা। তাঁদের একটা অংশ জানাচ্ছেন, অধিকাংশ মানুষ এখন ভিতরে ভিতরে নানা রকম হতাশায় ভোগেন। এমন ধরনের পরিস্থিতিতে ভিতরের সেই হতাশাই তাঁরা মারধরের মধ্যে দিয়ে বার করেন। অনেকে আবার এই সব করে গুরুত্ব পাওয়া বা প্রচারের আলোয় আসার চেষ্টা করেন। যে কোনও ভাবেই হোক, মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চান।

হাসপাতাল সূত্রের খবর, এ দিন সকাল ১০টা নাগাদ তিলজলার শিবতলা লেনের বাসিন্দা মহম্মদ ইদ্রিসকে (৬০) হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। ইমার্জেন্সি বিভাগে নেওয়ার পরে তাঁর ইসিজি করে দেখা যায়, মারাত্মক ভাবে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়েছেন তিনি। বেলা বারোটা নাগাদ তাঁকে খাতায়কলমে ভর্তি করে বাড়ির লোককে আউটডোর থেকে টিকিট করে আনতে বলা হয়। তাতে মিনিট দশেক সময় যায়। ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়ার পরেই ইদ্রিসের মৃত্যু হয়। এর পরে জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। মৃতের ইসিজি রিপোর্ট দেখিয়ে তাদের বারংবার বোঝানোর চেষ্টা করা হয়, হার্টের অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে রোগীর বাঁচার কথা নয়। কিন্তু ক্ষুব্ধ জনতা কিছুই বুঝতে চায়নি। তার পরেই ইচ্ছেমতো তাণ্ডব শুরু করে দেয় তারা।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ক্ষোভ, ‘‘সরকারি হাসপাতালে ঢুকে যা ইচ্ছে তা-ই করে পার পেয়ে যাওয়াটা দস্তুর হয়ে গেলে তো এখানে আর কাজ চা4লানোই যাবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kolkata government hospital
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE