Advertisement
E-Paper

‘শব্দবাজি ফাটাবই, যার যা করার করে নিক!’

নিষিদ্ধ বাজি ধরার জন্য পুলিশের তরফেও সক্রিয়তা শুরু হয়েছে, সেখানে প্রকাশ্যে ‘শব্দবাজি ফাটানো চলবেই’ বলার মতো স্পর্ধা কী ভাবে তৈরি হয়, সেই প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।

দেবাশিস ঘড়াই

শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৯ ০২:০০
ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

শব্দবাজি-বিরোধী মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন এ শহরের একাধিক স্কুলপড়ুয়া এবং নাগরিকদের একাংশ। আর সেই ‘অপরাধেই’ সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁদের বিরুদ্ধে তোপ দাগল আর এক দল। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে প্রকাশ্যেই জানানো হল—‘ও সব শব্দবাজি বন্ধের কথা বলে লাভ নেই। কালীপুজো, দীপাবলিতে শব্দবাজি ফাটানো চলবেই। যার যা করার করে নিক!’

যেখানে শব্দবাজি নিয়ে সচেতনতা তৈরির পাশাপাশি রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ শাস্তির কথাও ভাবছে, নিষিদ্ধ বাজি ধরার জন্য পুলিশের তরফেও সক্রিয়তা শুরু হয়েছে, সেখানে প্রকাশ্যে ‘শব্দবাজি ফাটানো চলবেই’ বলার মতো স্পর্ধা কী ভাবে তৈরি হয়, সেই প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। তাঁদের প্রশ্ন, যা খুশি করে পার পাওয়া যাবে এমন কোনও নিশ্চিন্ত মনোভাবই কি তবে এ ক্ষেত্রে কাজ করছে?

ঘটনার সূত্রপাত গত মঙ্গলবার। শব্দবাজিকে ‘না’ বলতে সে দিন এলগিন রোড থেকে ইলিয়ট পার্ক পর্যন্ত মিছিলে যোগ দিয়েছিল স্কুলপড়ুয়ারা। ছিলেন সমাজের বিভিন্ন স্তরের নাগরিকেরাও। সেই মিছিলের ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়ার পরেই শুরু হয় বিপত্তি! ফেসবুকে সেই ভিডিয়োর নীচে মিছিলের বিরোধিতা করে মন্তব্য বাড়তে থাকে। শুরু হয় শাসানি-হুমকি, এমনকি উদ্যোক্তাদের গালিগালাজও। অন্য ধর্মীয় অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে কোনও প্রতিবাদ করা হয় না, তবে কেন দীপাবলিকেই ‘টার্গেট’ করা হচ্ছে— এমন প্রশ্নও তোলেন কেউ কেউ।

বাজিবিরোধী মিছিলের উদ্যোক্তাদের তরফে পরিবেশকর্মী অজয় মিত্তল বলছেন, ‘‘যে ভাবে মিছিল নিয়ে ধর্মীয় মেরুকরণ করার চেষ্টা হল, যে ভাবে প্রকাশ্যে ‘শব্দবাজি ফাটাবই’ বলে হুমকি দেওয়া হল, তাতে আমরা বিস্মিত। পড়ুয়াদের নিয়ে সচেতনতা মিছিলের বিরোধিতা যে এই স্তরে এবং এই ভাষায় হতে পারে, তা অকল্পনীয়।’’

ফেসবুকে মিছিলের ভিডিয়োর নীচে যাঁরা শব্দবাজির পক্ষে মন্তব্য করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে কয়েক জনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা হয়। অধিকাংশই এ নিয়ে মুখ খুলতে চাননি। অনেকের আবার বক্তব্য, ওই স্কুলপড়ুয়াদের ‘ভুল বুঝিয়ে’ মিছিলে আনা হয়েছিল। অনেকেই মনে করছেন, পরিবেশ দূষণের বাকি কারণগুলিকে বাদ দিয়ে শুধুমাত্র শব্দবাজিকেই ‘টার্গেট’ করা অনুচিত। ওই মিছিলের সমালোচনা করা গৌরব তয়ালের কথায়, ‘‘সব ধর্মীয় অনুষ্ঠানের বিরুদ্ধেই তা হলে মিছিল করা উচিত। বাড়িতে এসি চালালেও দূষণ হয়। তা হলে তা-ও বন্ধ করে রাখতে হবে। শুধুই কালীপুজো-দীপাবলি নিয়ে বলা ঠিক নয়।’’ শব্দবাজির পক্ষে মন্তব্য করা, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আর এক ব্যক্তির প্রতিক্রিয়া, ‘‘সারা বছরই আমরা দূষণে থাকি। দু’দিনের দূষণে আর কী এমন বাড়তি ক্ষতি হয়? এমন তো নয় যে, বাকি দিনগুলো সব ঠিক থাকে।’’

কিন্তু শব্দবাজি ফাটানোর ফলে দূষণের মাত্রা যে বহু গুণে বেড়ে যায়, তা কি অস্বীকার করা যায়? সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে রাজি হননি কেউ। মিছিলের ভিডিয়োর নীচে প্রায় হুমকির স্বরে যারা বলেছে ‘পটাকা জ্বলেগা, বাম্পার জ্বলেগা’, তাদের সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমেই যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়েছিল। তবে উত্তর মেলেনি। এক পরিবেশকর্মীর কথায়, ‘‘এই যে শব্দবাজি ফাটাব অথচ কিছু হবে না, এই মনোভাব কিন্তু একদিনে আসেনি। বছরের পর বছর শব্দবাজি ফাটালেও কোনও শাস্তি না হওয়ায় এই মনোভাব তৈরি হয়েছে।’’

প্রশ্ন উঠেছে, শব্দবাজি ফাটানোর সদর্প ঘোষণার পরেও পুলিশ কেন এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে না? মন্তব্যগুলি যে হেতু সোশ্যাল মিডিয়ায় করা হয়েছে, তাই এদের খুঁজে বার করাও তেমন কঠিন নয়। কলকাতা পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা জানিয়েছেন, বিষয়টি তাঁদের নজরে এসেছে। যথাযথ পদক্ষেপ করা হবে।

তবে সেই পদক্ষেপ করতে করতে কালীপুজো, দীপাবলি পেরিয়ে যাবে কি না, সেই সংশয় রয়েছে অনেকেরই।

Kali Puja 2019 Firecracker Environment Sound Pollution Kolkata Police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy