Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

দেহটাই শুধু এখানে, মন পড়ে রয়েছে নেপালে

শনিবার দুপুর থেকেই অস্থির হয়ে পড়েছিলেন তাঁরা। সময় যত গড়িয়েছে, ততই অস্থিরতা বেড়েছে। কেউ লাগাতার ফোনে চেষ্টা করেছেন ‘দেশে’ পড়ে থাকা পরিজনদের, কেউ আবার একটা টিকিটের জন্য হত্যে দিয়েছেন রেলের অফিসে! ওরা আদতে নেপালের বাসিন্দা। কিন্তু বহু বছর ধরে কলকাতায় থাকতে থাকতে চলনে বলনে বাঙালিই হয়ে গিয়েছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:২১
Share: Save:

শনিবার দুপুর থেকেই অস্থির হয়ে পড়েছিলেন তাঁরা। সময় যত গড়িয়েছে, ততই অস্থিরতা বেড়েছে। কেউ লাগাতার ফোনে চেষ্টা করেছেন ‘দেশে’ পড়ে থাকা পরিজনদের, কেউ আবার একটা টিকিটের জন্য হত্যে দিয়েছেন রেলের অফিসে!

ওরা আদতে নেপালের বাসিন্দা। কিন্তু বহু বছর ধরে কলকাতায় থাকতে থাকতে চলনে বলনে বাঙালিই হয়ে গিয়েছেন। কিন্তু শনিবার দুপুরে নেপালে ভয়াবহ ভূমিকম্পের খবর শোনার পর থেকে দেশ আর পরিজনদের জন্য উতলা হয়ে উঠেছেন তাঁরা। যেমন দক্ষিণ গড়িয়ার মুক্তিনাথ ঢাকাল। দেশের বাড়ি নেপালের গোর্খা জেলার গোহোর গ্রামে। যার অদূরেই ভূমিকম্পের উৎসস্থল। মুক্তিনাথ বলছেন, বৃদ্ধ বাবা-মা, ভাইদের খোঁজ নিতে শনিবার থেকে কয়েকশো বার বাড়িতে ফোন করেছেন তিনি। কিন্তু লাইন মেলেনি! অন্য একটি সূত্র থেকে জেনেছেন, গ্রামের সব বাড়ি ভেঙে গিয়েছে। খোলা জায়গায় রয়েছেন লোক জন।

২৭-২৮ বছর ধরে বড়বাজারের বাসিন্দা লোকপ্রসাদ শর্মার বাড়ি পোখরার কাছে গণেশপুরে। দিন পাঁচেক আগেই দেশ থেকে ফিরেছেন। ঘটনার পরে এক বার দাদার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ হয়েছিল। ‘বাড়ি ভেঙে গিয়েছে’—শুধু এটুকুই বলতে পেরেছিলেন লোকপ্রসাদের দাদা। তার পর আর কোনও খবর পাননি।

একই অবস্থায় কলকাতার বিভিন্ন যৌনপল্লীতে বাস করা নেপালি যুবতীদের। পেটের টানে বাবা-মা-সন্তান ছেড়ে আসা এই মানুষগুলোও অস্থির হয়ে উঠেছেন শনিবার দুপুর থেকে। খবর পাওয়ার পর থেকে কাজও বন্ধ রেখেছেন ওরা। সারা ক্ষণই শুধু বাড়ির কথা মনে পড়ছে। বারবার ফোন করেও লাইন পাননি তাঁরা। সোনাগাছির বাসিন্দা এক নেপালি যুবতীর কথায়, ‘‘বাচ্চাগুলোর মুখ চোখে ভাসছে। কলকাতায় থাকলেও শনিবার থেকে মনটা দেশের বাড়িতেই চলে গিয়েছে।’’

এ দিনই কনস্যুলেটের কর্তাদের সঙ্গে দেখা করেন ‘ভারত-নেপাল জন মৈত্রী সাংস্কৃতিক মঞ্চে’র সদস্যরা। সংগঠনের তরফে নারায়ণপ্রসাদ হোমাগাই বলেন, ‘‘ভারত সরকারের সঙ্গে কথা বলে বিশেষ ট্রেনের কিংবা রক্সৌল, গোরক্ষপুরমুখী ট্রেনে অতিরিক্ত কামরার ব্যবস্থা করতে কনসাল জেনারেলের কাছে অনুরোধ করেছি।’’ নেপালি দূতাবাসের এক মুখপাত্র জানান, দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এ দিন থেকে বিপর্যয়ের খবরাখবরের জন্য একটি বিশেষ হেল্পলাইনও চালু করা হয়েছে।

রবিবার সকাল থেকে কাঠমান্ডুতে বিমান পরিষেবা চালু করেছে স্পাইসজেট। তাঁরা জানিয়েছে, এ দিন সকাল থেকে দিল্লি থেকে দু’টি উড়ান কাঠমান্ডু যাতায়াত করেছে। দলে দলে মানুষ নেপাল থেকে ফেরায় দিল্লিমুখী সব উড়ানই ভর্তি। এ দিন রাতে ত্রাণ ও উদ্ধারকারী দল নিয়ে একটি বিশেষ বিমান কাঠমান্ডু পৌঁছে গিয়েছে।

ত্রাণ সংগ্রহে উদ্যোগী হয়েছে কলকাতার নেপালি দূতাবাস। তারা জানিয়েছে, শহর থেকে ত্রাণ সংগ্রহের ব্যবস্থা করা হয়েছে। একটি বিশেষ গুদামে তা রাখা হবে। এয়ার ইন্ডিয়া নিখরচায় ত্রাণ নিয়ে যাবে। ত্রাণের ব্যাপারে বিভিন্ন বণিকসভা ও বণিক সংগঠনও এগিয়ে এসেছে। অর্থ সাহায্য সংগ্রহের জন্য একটি বিশেষ ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও খোলা হবে। কলকাতায় নেপালের কনসাল জেনারেল চন্দ্রকুমার ঘিমিরে জানান, কলকাতা বন্দরে আসা ত্রাণ যাতে দ্রুত ‘ক্লিয়ার’ করা হয়, তার জন্য বন্দর ও শুল্ক দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।

উদ্ধারকাজে সামিল হওয়ারও আর্জি জানিয়েছে নেপালি দূতাবাস। সেই আর্জি মেনে রবিবার পশ্চিমবঙ্গ রেডিও ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা অম্বরীশ নাগ বিশ্বাসের নেতৃত্বে এক দল ‘হ্যাম’ রেডিও অপারেটর নেপালি দূতাবাসে দেখা করেন। অম্বরীশবাবু জানান, তাঁদের নেপালের প্রত্যন্ত এলাকার কাজ করতে হবে। দূতাবাস নেপালে যাওয়ার ব্যবস্থা করলেই তাঁরা রওনা দেবেন। কনসাল জেনারেল জানান, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গেও সাহায্য নিয়ে কথা হয়েছে। কূটনৈতিক রীতি অনুযায়ী, সেই সাহায্য বিদেশ মন্ত্রকের মাধ্যমে পাঠানোর অনুরোধ করেছেন কনসাল জেনারেল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE