আমার-আপনার স্বাস্থ্য এখন বিমা ফড়েদের হাতে। সে ‘আয়ুষ্মান ভারত’ই হোক বা ‘স্বাস্থ্যসাথী’। সবই বাজারের কব্জায়। জনগণ ও সরকারের মাঝে রয়েছে কার্ড। পৃথিবী যখন দৌড়চ্ছে সর্বজনীন স্বাস্থ্যের দিকে, তখন স্বাস্থ্যের সংজ্ঞা বদলে দিচ্ছে কেন্দ্র-রাজ্য।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া স্বাস্থ্যের সংজ্ঞা— ‘পূর্ণ শারীরিক, সামাজিক এবং মানসিক’ সুস্থতা। এ জন্য সব থেকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা প্রাথমিক এবং প্রতিষেধক স্বাস্থ্যে। প্রয়োজন সবার জন্য পরিস্রুত জল, দূষণহীন পরিবেশ, মা-শিশুর পুষ্টি, জন্ম পরবর্তী পরিচর্যা, টিকাকরণ। ওই সংস্থার মতে, রাষ্ট্রের স্বাস্থ্য ব্যয়ের ৭০ শতাংশ প্রাথমিক চিকিৎসায় করা উচিত। বিনামূল্যে জীবনদায়ী ওষুধ এবং পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকা উচিত। বিজ্ঞানের উন্নতি মানুষের গড় আয়ু বাড়িয়ে দিয়েছে। দেশের বিপুল জনসংখ্যার উচ্চ রক্তচাপ, সুগার, হার্ট ও ফুসফুসের অসুখ, ক্যানসার তাই স্বাস্থ্যের অগ্রাধিকারের তালিকায়। কিন্তু দেশের বেসরকারি বিমার পরিসরে সে সব না থাকায় জনগণ প্রতিদিনের চিকিৎসা পেতে পকেট থেকেই খরচ করে দারিদ্রসীমার নীচে চলে যাচ্ছেন।
ফলস্বরূপ সর্বজনীন স্বাস্থ্য দিতে অঙ্গীকারবদ্ধ দেশগুলির মধ্যে ভারত ১৪৭তম স্থানে। সব থেকে বেশি অপুষ্ট শিশু এবং যক্ষ্মা রোগীর বাসও ভারতেই। অনেক স্বাস্থ্য-সূচকে প্রতিবেশী বাংলাদেশ, নেপালের থেকেও পিছিয়ে এ দেশ। আমাদের স্বাস্থ্যে ব্যয় মোট জাতীয় উৎপাদনের (জিডিপি) এক শতাংশ! অথচ নেপাল, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশও এই খরচে এগিয়ে। এমন পরিস্থিতিতে যেটুকু সরকারি কোষাগার আছে, সেটাও বাজারের হাতে তুলে দিলে প্রশ্ন উঠবেই। ব্যবসা করতে আসা বিমা সংস্থাগুলি লাভ ছাড়া কিছু বুঝবে কেন? একটি উদাহরণেই বিমা ব্যবসার লাভ সম্পর্কে ধারণা হবে। এক বিমা সংস্থা মহারাষ্ট্রের একটি জেলার বিশেষ ফসলে প্রিমিয়াম পেয়েছিল ১৭৩ কোটি টাকা। কেন্দ্র ৭৭ কোটি, রাজ্য ৭৭ কোটি ও কৃষকেরা দিয়েছিলেন ১৯ কোটি টাকা। খরায় ফসল নষ্ট হওয়ায় ওই সংস্থা মোট ক্ষতিপূরণ দেয় ৩০ কোটি টাকা। বাকিটা সংস্থার পকেটে।