ভোরের বিমানে ওঠার কিছু আগে ৯ বছরের আয়ুষের ‘বড়’ বাথরুম পেয়ে গিয়েছিল। ততক্ষণে বোর্ডিং কার্ড নিয়ে নিয়েছেন আয়ুষের বাবা আনন্দ রায়। স্ত্রী-পুত্রকে নিয়ে কলকাতা থেকে গোয়া বেড়াতে যাচ্ছিলেন রহড়ার ওই যুবক। সঙ্গে ছিল বন্ধু অতনু চট্টোপাধ্যায়ের পরিবার।
ভোর ৬টায় ইন্ডিগোর ওই বিমান ছাড়ার কথা। তখনও প্রায় ৪০ মিনিট বাকি বিমান ছাড়তে। একতলার বোর্ডিং গেট ছেড়ে ছেলেকে নিয়ে আনন্দ বিমানবন্দরের দোতলায় খেতে গিয়েছিলেন। কিন্তু, সেখানে পৌঁছনোর একটু পরেই আয়ুষকে নিয়ে শৌচালয়ে ছুটতে হয়। তার পরেই স্ত্রী সুশ্রিতার ফোন আসে, ‘‘তাড়াতাড়ি এসো। এরা বিমান ছেড়ে দেবে বলছে।’’ তড়িঘড়ি ছেলেকে নিয়ে একতলায় নেমে আনন্দ দেখেন, অতনু পরিবারের চার জনকে নিয়ে বাসে উঠে পড়েছেন। সুশ্রিতাকে আটকে দেওয়া হয়েছে বোর্ডিং গেটের সামনে।
আনন্দ বলেন, ‘‘কেন দেরি করেছি, এই যুক্তিতে আমাদের বিমানে উঠতেই দেয়নি। দুর্ব্যবহার করে তাড়িয়ে দিয়েছে। যখন এটা ঘটে, তখন বাজে ৫টা ৪০। বিমান ছাড়তে বাকি ২০ মিনিট। আমাদের কাছে বোর্ডিং কার্ড ছিল। মালপত্র ছিল বিমানের পেটে। তার পরেও কেন উঠতে দেওয়া হল না, জানি না। বিমানসংস্থার তরফে আমাদের নাম ডেকে ঘোষণাও করা হয়নি।’’ আনন্দর দাবি, তর্কাতর্কির সময়ে এক অফিসার সুশ্রিতাকে জিজ্ঞাসা করেন, আপনি কি নেতা-নেত্রী যে আপনার জন্য বোর্ডিং গেট খুলে দিতে হবে?’’
ঘটনাটি গত ২৪ জানুয়ারির। আনন্দর অভিযোগ, বেশ কিছুক্ষণ তর্ক চলার পরে গেটে থাকা ইন্ডিগোর দুই কর্মী তাঁদের বোর্ডিং কার্ড ছিঁড়ে ফেলে দেন। ছিঁড়ে ফেলা হয় হাতব্যাগে থাকা ট্যাগও। আনন্দদের টিকিটে ইন্ডিগোর এক অফিসার লিখে সই করে দেন, তাঁরা ৫টা ৪০ মিনিটে গেটে আসেন এবং তাঁদের উঠতে দেওয়া হয়নি।
আনন্দদের ফিরিয়ে আনা হয় টার্মিনালে। তাঁদের মালপত্র নিয়ে অতনুরা হায়দরাবাদ ঘুরে গোয়ায় উড়ে যান। আনন্দ জানিয়েছেন, তাঁদের তিন জনের ও অতনুদের পরিবারের চার জনের টিকিট আলাদা ভাবে কাটা হয়েছিল। তবে, অতনুর বোর্ডিং কার্ডের পিছনেই দু’টি পরিবারের চারটি স্যুটকেসের ব্যাগেজ-ট্যাগ আটকে দেওয়া হয়।
বিমান পরিবহণ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ডিরেক্টরেট জেনারেল অব সিভিল অ্যাভিয়েশন (ডিজিসিএ)-এর কাছে আনন্দ অভিযোগ করেছেন, তাঁদের টার্মিনালে ফিরিয়ে আনার আগে বলা হয়েছিল, গোয়ায় যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। কিন্তু টার্মিনালে ফেরার পরে বলা হয়, সকাল সাড়ে এগারোটায় কলকাতা-গোয়া সরাসরি উড়ানে তাঁরা যেতে পারবেন। কিন্তু, সে জন্য অতিরিক্ত ২৮ হাজার ৩৬২ টাকা দিতে হবে!
আনন্দর অভিযোগ, তিনি ভোরের উড়ানে তিনটি টিকিট কেটেছিলেন ৯ হাজার ৮৫০ টাকায়। উপরন্তু, তাঁকে আরও ২৮ হাজার ৩৬২ টাকা দিয়ে ফের টিকিট কাটতে বাধ্য করা হয়। আনন্দর কথায়, ‘‘কী করব? একে তো হোটেল বুক করে রেখেছিলাম। তার উপরে আমাদের মালপত্রও গোয়ায় পৌঁছে গিয়েছিল। আমার সন্দেহ, যে সরাসরি বিমানে আমরা কলকাতা থেকে গোয়া গিয়েছিলাম, সেই বিমানে কিছু আসন খালি ছিল এবং সেগুলি চড়া দামে বিক্রি করার জন্যই ইন্ডিগো এমন করেছে।’’
২৪ জানুয়ারি, ঘটনার দিন অতনুরা হায়দরাবাদ ঘুরে গোয়া পৌঁছনর ১৫ মিনিট পরে সরাসরি উড়ানে গোয়ায় পৌঁছন আনন্দরা। তবে, অতিরিক্ত ২৮ হাজার ৩৬২ টাকা দিয়ে। আনন্দ কলকাতায় ফেরেন ২ ফেব্রুয়ারি। ডিজিসিএ ছাড়াও তিনি অভিযোগ জানিয়েছেন ইন্ডিগো এবং রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা দফতরে। তাঁর অভিযোগ, ‘‘যে অফিসারেরা দুর্ব্যবহার করেছিলেন, তাঁদের নাম করে অভিযোগ করেছি। ওঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। আমার টাকাও ফেরত দেওয়া উচিত।’’ আনন্দর আরও অভিযোগ, ওই ঘটনার পরে তাঁর ৯ বছরের ছেলে মানসিক ভাবে এতটাই বিপর্যস্ত যে বাড়ির বাইরে আচমকা কোথাও প্রকৃতির ডাক এলে সে ঘাবড়ে যাচ্ছে।
ডিজিসিএ-র এক কর্তার কথায়, ‘‘নির্দিষ্ট সময়ে বিমান ছাড়ার জন্য অনেক সংস্থাই কড়াকড়ি করছে। এটা ডিজিসিএ-র নিয়ম নয়। চাইলে বিমানসংস্থা নিয়েই যেতে পারত ওই যাত্রীদের। তবে না নিয়ে গেলেও কিছু বলার নেই। তবে যে যাত্রীকে নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তার মালপত্র নিয়ে উড়ে যাওয়াটা অপরাধ।’’ বিমান সংস্থার প্রতিনিধি জানিয়েছেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সংস্থার কেউ দোষী প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে তার জন্য সময় লাগবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy