—প্রতীকী চিত্র।
অচেনা নম্বর থেকে হঠাৎ ফোন। মোবাইল স্ক্রিনে ভেসে উঠেছে খাকি উর্দি পরা পুলিশ আধিকারিকের ছবি। ফোন ধরতেই অন্য প্রান্ত থেকে ভারী গলায় নিজেকে পুলিশকর্তা পরিচয় দিলেন ওই ব্যক্তি। এর পরে জানালেন, ফোনের এ পারের ব্যক্তির সন্তান সঙ্গদোষে গুরুতর অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে। শুধু তা-ই নয়, সন্তান আপাতত পুলিশ হেফাজতে আছে বলেও জানানো হল। প্রমাণ স্বরূপ, সন্তানের গলা হুবহু শোনানোর পাশাপাশি তদন্তের স্বার্থে তাকে মারধর করা হয়েছে বলে ফোনে দাবি করলেন ওই ‘পুলিশকর্তা’। ফোনেই শোনানো হল সন্তানের কান্নাকাটির আওয়াজ। এর পরে উদ্বিগ্ন অভিভাবককে কখনও দেওয়া হচ্ছে মীমাংসার প্রস্তাব, কখনও আবার বলা হচ্ছে পাঠানো লিঙ্কে ক্লিক করে তদন্তের মুখোমুখি হতে হবে।
এ ভাবেই সন্তানের অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ার ভয় দেখিয়ে ফোন করে শহরে সাইবার প্রতারণার জাল ছড়াচ্ছে কারবারিরা। ইতিমধ্যেই এমন ফোন পেয়ে অনেকেই মোটা টাকা খুইয়েছেন বলে অভিযোগ। বিষয়টি নজরে আসার পরেই লালবাজারের তরফেও শুরু হয়েছে সচেতনতার প্রচার। বৃহস্পতিবার বেলার দিকে এমন একটি ফোন পেয়েছিলেন বলে জানালেন সিঁথির বাসিন্দা সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। তাঁকে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার নাম করে জানানো হয়, অপরাধমূলক কাজে যুক্ত থাকার অভিযোগে তাঁর মেয়েকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সোমনাথের কথায়, ‘‘আমার মেয়ে দেশের বাইরে থাকায় স্বাভাবিক ভাবে আমি বিচলিত হইনি। ঠান্ডা মাথায় বেশ কিছু সময় কথা বলি। মীমাংসার নামে আমার কাছে ৪০ হাজার টাকা চাওয়া হয়। টাকা পাঠানোর জন্য ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের নম্বরও পাঠায় প্রতারকেরা। টাকা না পাঠানোয় এর পরে লাগাতার আমাকে ফোন করা হয়।’’
জানা যাচ্ছে, গত কয়েক দিনে শহরের পাশাপাশি শহরতলির বাসিন্দাদের অনেকেই এই ধরনের ফোন পেয়েছেন। কখনও কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকের নাম করে, কখনও বা ভিন্ রাজ্যের পুলিশের কর্তার নামে। সন্তানকে আইনি জটিলতার হাত থেকে বাঁচাতে প্রতারকদের পাঠানো লিঙ্কের ফাঁদে পা দিয়েছেন অনেকে। আর সেভাবেই মোটা অঙ্কের টাকাও হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।
সাইবার প্রতারণার নতুন এই ধরন নিয়ে ইতিমধ্যেই লালবাজারে বেশ কয়েকটি অভিযোগ জমা পড়েছে। প্রতারণার এই নয়া কায়দার পিছনে ভরতপুর গ্যাংয়ের যোগ থাকতে পারে বলে মনে করছেন সাইবার বিশেষজ্ঞদের পাশাপাশি লালবাজারের কর্তাদের একাংশ। ভিন্ দেশ থেকেও বিষয়টি নিয়ন্ত্রণের আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। সাইবার বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, সরাসরি ফোন করার পাশাপাশি আইভিআর (ইন্টারঅ্যাকটিভ ভয়েস রেসপন্স) কলের সাহায্যে নিয়েও এই ফোনগুলি করা হচ্ছে। সন্তানের গলার স্বর নকল করতে ব্যবহার করা হচ্ছে ‘ডিপ-ফেক’ পদ্ধতি। সাইবার বিশেষজ্ঞ সন্দীপ সেনগুপ্তের কথায়, ‘‘সাধারণ ভাবে ‘ডিপ-ফেক’ এর সাহায্য নিয়ে কারও গলার স্বর নকল করলে তা বোঝার উপায় থাকে না। ফলে সহজেই মানুষকে উদ্বেগের মধ্যে ফেলা যায়।’’
লালবাজারের তরফে বলা হচ্ছে, এমন কোনও ফোন পেলে সরাসরি নিকটবর্তী থানার সঙ্গে যোগাযোগ করা দরকার। সন্তান বা কোনও আত্মীয়ের অপরাধে জড়িয়ে পড়ার কথা বলা হলেও কোনও রকম লিঙ্কে ক্লিক করার আগে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ফোন করে যাচাই করে নেওয়ার কথাই বলা হয়েছে নির্দেশিকায়। লালবাজারের এক কর্তার কথায়, ‘‘ইতিমধ্যে সাইবার অপরাধের নয়া এই ধরন নিয়ে জন সচেতনতায় আমরা প্রচার শুরু করেছি। সেই সঙ্গে কোন চক্র এর পিছনে জড়িত, তা-ও তদন্ত করে খুঁজে দেখা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy