Advertisement
E-Paper

গভীর রাতে পুলিশ চড়াও ক্যারাটে-কন্যার বাড়িতে

আগের দিন লড়াই করে ইভটিজারদের রুখে দিয়েছিল ১৭ বছরের যে মেয়ে, পরদিন রাত দেড়টা নাগাদ তার বাড়িতেই কড়া নাড়ল পুলিশ। এক যুবকের ছবি দেখিয়ে জানতে চাইল, ঘটনার দিন সে ছিল কি না?

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০১:৫৫
প্রশিক্ষণ নিচ্ছে মুন্না। মঙ্গলবার, বারাসতের রথতলায়। ছবি: সুদীপ ঘোষ।

প্রশিক্ষণ নিচ্ছে মুন্না। মঙ্গলবার, বারাসতের রথতলায়। ছবি: সুদীপ ঘোষ।

আগের দিন লড়াই করে ইভটিজারদের রুখে দিয়েছিল ১৭ বছরের যে মেয়ে, পরদিন রাত দেড়টা নাগাদ তার বাড়িতেই কড়া নাড়ল পুলিশ। এক যুবকের ছবি দেখিয়ে জানতে চাইল, ঘটনার দিন সে ছিল কি না? পুলিশের এই ভূমিকায় প্রশ্ন উঠেছে। বিষয়টিতে ক্ষুব্ধ খোদ রাজ্য পুলিশের ডিজি এ নিয়ে রিপোর্ট চাইবেন বলে জানিয়েছেন।

রবিবার দোলতলার কাছে দুই ইভটিজারকে মেরে তাড়িয়ে দেওয়ার পরে মধ্যমগ্রাম থানায় অভিযোগ জানায় মুন্না দাস নামে ওই কিশোরী। বকুনির ভয়ে ব্যাপারটা বাড়িতে জানায়নি সে। মঙ্গলবার মুন্না বলে, ‘‘সোমবার রাতে পুলিশ ফোন করলে তাই বলেছিলাম, এত রাতে বাড়ি আসবেন না। সকালে থানায় গিয়ে দেখা করব।’’ কিশোরীর অভিযোগ, সে কথা মানতে চায়নি পুলিশ। বলে, রাতের মধ্যেই দু’জনকে ধরতে হবে। তাই শনাক্ত করতে হবে। মুন্নার দাবি, বাধ্য হয়েই অত রাতে একা বাড়ি থেকে বেরিয়ে সামনের গলিতে দাঁড়ায় সে। সেখানেই মধ্যমগ্রাম থানার পুলিশ এসে একটি ছবি দেখায়। তা ইভটিজারদের কারও নয় বলে জানিয়ে দেয় সে। তার অভিযোগ, ‘‘ওদের সঙ্গে মহিলা পুলিশও ছিল না।’’

গভীর রাতে পুলিশ অভিযোগকারী এক নাবালিকার বাড়িতে গেল কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। রাতে পুলিশ এ ভাবে কোনও মহিলার বাড়ি যেতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন ডিজি জিএমপি রেড্ডি। মঙ্গলবার তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ যদি এমন করে থাকে, তা ঠিক হয়নি। জেলা পুলিশ কর্তৃপক্ষের কাছে এর ব্যাখ্যা চাইব।’’

পুলিশ যে গভীর রাতে কিশোরীটির বাড়িতে গিয়েছে, তা জানা ছিল উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার তন্ময় রায়চৌধুরীর। তবে ডিজির মন্তব্য জানার পরে তিনি বলেন, ‘‘নো কমেন্টস।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘মেয়েটি সাহসিকতার কাজ করেছে। পুলিশকে সহযোগিতাও করছে। ওকে আমরা পুরস্কৃত করব।’’ যে পুলিশকর্মীরা মেয়েটির বাড়ি গিয়েছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না প্রশ্ন করলে তার জবাবও দেননি তন্ময়বাবু।

মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুনন্দা মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘আইনেই আছে, সূর্যাস্ত থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত কোনও মহিলাকে জিজ্ঞাসাবাদ এমনকী জেরার জন্যও ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়া পুলিশ যেতে পারে না। মেয়েটি অভিযোগ জানালেই আমরা ব্যবস্থা নেব।’’

কেন ওই রাতেই কিশোরীর বাড়ি যেতে হল পুলিশকে? জেলা পুলিশেরই একাংশের ব্যাখা, বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছিল। কিশোরীকে বারবার থানায় ডেকে বিব্রত করতে না চেয়ে তার কাছে যাওয়া হয়েছিল। শনাক্তকরণের জন্য কেন সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করা গেল না? পুলিশের ব্যাখা, এক জনকে ধরার পরে অন্য জন যাতে পালিয়ে না যায়, তাই তাড়াহুড়ো করেছে পুলিশ।

মঙ্গলবার রাতে স্থানীয় তৃণমূল নেতা সুকুমার মণ্ডল মেয়েটির বাড়ি যাওয়ায় ফের প্রশ্ন উঠছে। মুন্না বলে, ‘‘আমি বা বাবা তখন বাড়ি ছিলাম না। ওই নেতা মাকে বলে গিয়েছেন, আমি যেন সকালে ওঁর বাড়ি যাই।’’ মেয়েটির বাড়ি গেলেন কেন? ওই নেতার জবাব, ‘‘ওরা আমার পড়শি। মেয়েটি আমাকে কাকু বলে। সাহায্য করতে চাই, তাই গিয়েছিলাম।’’

রবিবার বিকেেল দোলতলার মেঠোপাড়ার বাড়ি থেকে বারাসতের রথতলায় ক্যারাটে ক্লাসে যাচ্ছিল মুন্না। দু’টি ছেলে সাইকেলে পিছু নেয়। মুন্নার কথায়, ‘‘ওরা বাজে ভাষায় কথা বলে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করছিল। কুপ্রস্তাবও দেয়। প্রথমে ওদের সতর্ক করি। বলি, বাড়াবাড়ি করলে মুশকিলে পড়বে! ছেলে দু’টি বলে, ‘কী করবে?’ সাফ বলি, মারব।’’ অভিযোগ, এর পরেই একটি ছেলে ওই কিশোরীকে ধাক্কা দিয়ে মারতে আসে। পাল্টা মারে মুন্না। তার কথায়, ‘‘ওরা বুঝতে পারেনি, মারামারিটা আমি জানি। পরে পেরে উঠবে না বুঝতে পেরে সাইকেল নিয়ে পালায়।’’

তবে তারা হুমকি দেয়, আরও ছেলে এনে হামলা করবে। সেই আশঙ্কাতেই রবিবার রাতে ক্যারাটে শিক্ষক ভোলানাথ সাউয়ের সঙ্গে গিয়ে এফআইআর করে মুন্না। অভিযুক্তেরা যখন অধরা, তখন রাতে ওই কিশোরীকে কেন বাড়ির বাইরে ডেকে শনাক্তকরণের প্রয়োজন হল, সেই প্রশ্নও উঠেছে। মুন্নার আরও অভিযোগ, ‘‘থানা থেকে বারবার ফোন আসছে। ইভটিজারদের চিনি কি না, জানতে চাওয়া হচ্ছে। রাস্তায় কেউ অসভ্যতা করলে তার নাম ঠিকানা সব জেনে রেখে দিতে হবে? তা হয় কখনও?’’

এ সবের উত্তরও অবশ্য মেলেনি।

madhyamgram police munna das carate girl north 24 pargana police super women rights commission carate girl munna das MostReadStories
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy