মহাকরণে কর্তব্যরত অবস্থায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হল এক পুলিশকর্মীর। শুক্রবার তখন বিকেল ৩টে ৩৫। আচমকাই গুলির শব্দ মহাকরণে। দেখা যায়, ছ’নম্বর গেটের কাছে অতিথিদের ঢোকার গেটের ভিতরে চেয়ারে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন এক পুলিশকর্মী। তাঁর চিবুকের তলা থেকে গুলি ঢুকে বাঁ দিকের চোখ ভেদ করে বেরিয়ে গিয়েছে। গোটা শরীর রক্তে ভেসে যাচ্ছে। গুলিবিদ্ধ ওই পুলিশকর্মীকে দ্রুত এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম বিশ্বজিৎ কারক (৩৪)।
পুলিশ সূত্রের খবর, ওই পুলিশকর্মীর সঙ্গে থাকা সার্ভিস রাইফেল থেকেই গুলি চলেছে। কিন্তু তিনি নিজে গুলি চালিয়েছেন, না কি অসাবধানতাবশত ট্রিগারে হাত পড়ে গুলি ছিটকে গিয়েছে, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়। প্রাথমিক ভাবে কলকাতা পুলিশের ডিসি (সেন্ট্রাল) এন সুধীর কুমার জানান, সার্ভিস রাইফেলের অবস্থান এবং যে ভাবে থুতনির নীচ দিয়ে গুলি ঢুকেছে, তা দেখে মনে হচ্ছে, এটি আত্মহত্যার ঘটনা। ময়না-তদন্তের চূড়ান্ত রিপোর্ট হাতে পেয়ে তবেই নিশ্চিত করে বলা যাবে, এটি আত্মহত্যা না দুর্ঘটনা।
বিশ্বজিৎ রাজ্য সশস্ত্র পুলিশের পঞ্চম ব্যাটেলিয়নে কনস্টেবল পদে কর্মরত ছিলেন। এ দিন দুপুর আড়াইটের শিফটে মহাকরণের ছ’নম্বর গেটে তাঁর ডিউটি শুরু হয়। ঘটনার সময়ে ওই গেটের আশপাশে একাধিক পুলিশকর্মী ডিউটি করছিলেন। সূত্রের খবর, ঘটনার আকস্মিকতায় তাঁরা হতচকিত হয়ে যান। ছুটে এসে তাঁরা দেখেন, গুলিবিদ্ধ বিশ্বজিৎ রক্তাক্ত অবস্থায় চেয়ারে এলিয়ে পড়ে আছেন।
আদতে পশ্চিম মেদিনীপুরের রায়পুর ব্লকের বাসিন্দা বিশ্বজিৎ স্ত্রী, আড়াই বছরের ছেলে এবং মাকে নিয়ে লেক টাউনে থাকতেন। তাঁর স্ত্রী আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নার্স। গ্রামের বাড়িতে থাকেন তাঁর বাবা গোপাল কারক এবং দাদা সনজিৎ কারক। গোপালবাবু বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার রাতেও ছেলের সঙ্গে ফোনে কথা হয়। তখনও কি ভাবতে পেরেছি ওটাই শেষ কথা?’’
তবে পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, ২০১১ সাল থেকে মানসিক অবসাদের চিকিৎসা চলছিল বিশ্বজিতের। তার পরে তাঁর বিয়ে হয়। বর্তমানে এসএসকেএমে চিকিৎসা করাচ্ছিলেন তিনি। মাঝে ৬৬ দিনের ছুটিতেও ছিলেন। ২১ মে ফের কাজ যোগ দেন।
যদিও পুলিশের কোনও শীর্ষ কর্তা বিশ্বজিতের মানসিক অসুস্থতার কথা স্বীকার করেননি। কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) শুভঙ্কর সিংহ সরকার জানান, ওই পুলিশকর্মীর পকেট থেকে কিছু ওষুধ মিলেছে। ওঁর পরিবারের সঙ্গে কথা বলে এবং তদন্তে জানা যাবে তা কিসের ওষুধ।
তবে এ দিনের ঘটনার পরে প্রশ্ন উঠেছে, মানসিক অসুস্থতা থাকা সত্ত্বেও সশস্ত্র অবস্থায় তাঁকে কেন ডিউটি দেওয়া হল? এ বিষয়ে
অসুখের বিবরণ না-শুনে এবং তদন্ত না-করে কিছু বলা সম্ভব নয় বলেই জানিয়েছেন ওই কর্তা।