Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

হোমে অযত্নের চিহ্ন প্রকট, চিঠি পুলিশের

সম্প্রতি পঞ্চসায়র থানা এলাকার একটি হোম থেকে রাতে বেরিয়ে গিয়েছিলেন মানসিক ভাবে অসুস্থ এক যুবতী। পরে তাঁকে ট্যাক্সিতে তুলে গণধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। রাতে নরেন্দ্রপুর থানার পুলিশ যুবতীকে উদ্ধার করে সোনারপুরের একটি হোমে রাখে।

পঞ্চসায়র হোমের ঘটনার পরেই নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ। নিজস্ব চিত্র

পঞ্চসায়র হোমের ঘটনার পরেই নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ। নিজস্ব চিত্র

শুভাশিস ঘটক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:০৯
Share: Save:

স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা পরিচালিত সরকারি হোমগুলির অব্যবস্থা নিয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনকে চিঠি দিল বারুইপুর জেলা পুলিশ।

সম্প্রতি পঞ্চসায়র থানা এলাকার একটি হোম থেকে রাতে বেরিয়ে গিয়েছিলেন মানসিক ভাবে অসুস্থ এক যুবতী। পরে তাঁকে ট্যাক্সিতে তুলে গণধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। রাতে নরেন্দ্রপুর থানার পুলিশ যুবতীকে উদ্ধার করে সোনারপুরের একটি হোমে রাখে। কিন্তু সেখান থেকেও তিনি কোনও ভাবে বেরিয়ে যান। পরে যুবতীর পরিজনেরা পুলিশের কাছে অভিযোগে জানান, পঞ্চসায়রের ওই হোমে নজরদারিতে গাফিলতি রয়েছে।

বারুইপুর জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘পঞ্চসায়রের হোম থেকে ওই যুবতী রাতে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পরেই হোমের পরিকাঠামো এবং নজরদারির বিষয়টি সামনে আসে। সম্প্রতি সোনারপুর থানা এলাকার কয়েকটি হোমের বিরুদ্ধেও পরিকাঠামোয় ঘাটতি এবং নজরদারিতে গাফিলতির একাধিক অভিযোগ উঠেছে। পুলিশের তরফে হোম কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করা সত্ত্বেও অবস্থার পরিবর্তন ঘটেনি।’’ এই ঘটনাগুলি উল্লেখ করেই দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই পুলিশকর্তা।

বারুইপুর জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত মার্চে সোনারপুরের একটি হোম থেকে নিখোঁজ হয়ে যায় দুই নাবালিকা। পরে তাদের উদ্ধার করা হয়। এর পরে অক্টোবরে সোনারপুরেরই একটি হোমের আবাসিক, বাংলাদেশি এক নাবালিকাকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বারুইপুর মহকুমা হাসপাতালে। হোমের তরফে এক মহিলা তার উপরে নজরদারির দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু চিকিৎসা চলাকালীন পালিয়ে যায় কিশোরী। পরে বারুইপুর মহিলা থানার পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। এক পুলিশকর্তা জানান, ওই কিশোরীকে বাংলাদেশ থেকে পাচার করা হয়েছিল। পাচার-মামলায় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী সে। মামলাটি এখনও বিচারাধীন। কিশোরীর খোঁজ না পাওয়া গেলে আদালতে পুলিশকেই ভৎর্সনার মুখে পড়তে হত।

বারুইপুর জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে‌, কয়েক মাস আগে সোনারপুরের একটি হোমে জলে ডুবে মৃত্যু হয় এক নাবালিকার। পাঁচিলে ঘেরা ওই হোমের ভিতরে গাছে উঠেছিল মেয়েটি। কোনও ভাবে গাছ থেকে পুকুরে পড়ে তলিয়ে যায়। অভিযোগ ওঠে, ওই নাবালিকার কোনও খোঁজ রাখেননি হোমের কর্মীরা। মেয়েটির মৃতদেহ উদ্ধারের পরে ঘটনাটি জানাজানি হয়। এই ঘটনায় অনিচ্ছাকৃত ভাবে মৃত্যু ঘটানোর অভিযোগে মামলা রুজু হয়েছে। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘বিচারাধীন বিভিন্ন মামলার সাক্ষী নাবালিকা ও নাবালকদের রাখা হয় ওই হোমগুলিতে। তা ছাড়া, নানা রোগে আক্রান্তেরাও থাকেন। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা পরিচালিত ওই হোমগুলির বিরুদ্ধে নজরদারিতে গাফিলতির গুরুতর অভিযাগ উঠেছে।’’ পুলিশকর্তারা জানাচ্ছেন, ওই হোমের আবাসিকদের পর্যাপ্ত খাবার দেওয়া হয় না বলেও অভিযোগ। আরও অভিযোগ, সেখানে থাকার সুবন্দোবস্ত নেই

বারুইপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত সুপার ইন্দ্রজিৎ বসু বলেন, ‘‘এই সব বিষয়গুলিই লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনকে।’’ আদতে ওই হোমগুলি সমাজকল্যাণ দফতরের অধীনে থাকলেও সেগুলি দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার অতিরিক্ত মহকুমা শাসক (জমি অধিগ্রহণ)-এর দফতর। অতিরিক্ত মহকুমা শাসক (জমি অধিগ্রহণ) মৃণালকান্তি রানো বলেন, ‘‘আমরা পুলিশের চিঠি পেয়েছি। ওই হোমগুলির পরিস্থিতি যাচাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। প্রয়োজনে ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Homes NGO Panchasayar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE