Advertisement
E-Paper

দিনভর পুলিশের ‘দুর্গ’ পাহারা, ছটের কলুষ-মুক্ত দুই সরোবর

রবিবার, ছটপুজোর দুপুরে রবীন্দ্র সরোবর এবং সুভাষ সরোবর সংলগ্ন এলাকায় এমন বন্দোবস্ত দেখেও যেন নিশ্চিন্ত নন পরিবেশকর্মীরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২২ ০৮:৫৫
তৎপরতা: পুণ্যার্থীদের আটকাতে রবীন্দ্র সরোবরের প্রবেশপথের সামনে বাঁশের ব্যারিকেড। রয়েছে পুলিশি প্রহরাও (বাঁ দিকে)। সুভাষ সরোবরের প্রবেশপথের সামনে মোতায়েন পুলিশ (ডান দিকে)। রবিবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক, নিজস্ব চিত্র।

তৎপরতা: পুণ্যার্থীদের আটকাতে রবীন্দ্র সরোবরের প্রবেশপথের সামনে বাঁশের ব্যারিকেড। রয়েছে পুলিশি প্রহরাও (বাঁ দিকে)। সুভাষ সরোবরের প্রবেশপথের সামনে মোতায়েন পুলিশ (ডান দিকে)। রবিবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক, নিজস্ব চিত্র।

সরোবর তো নয়, যেন দুর্গ রক্ষা করা হচ্ছে! সব ক’টি প্রবেশপথ আগেই ঘিরে ফেলা হয়েছিল বাঁশ দিয়ে। কোনও কোনওটি আবার ঢেকে দেওয়া হয়েছে টিনের আস্তরণে। রবিবার তার উপরে গেটের মুখে বসানো হল বিশাল পুলিশি প্রহরা। ভিতরে প্রবেশ করতে দেওয়া তো দূর, আশপাশের রাস্তার ধারেকাছেও ঘেঁষতে দেওয়া হল না কোনও পুজোমুখী লরিকে।

রবিবার, ছটপুজোর দুপুরে রবীন্দ্র সরোবর এবং সুভাষ সরোবর সংলগ্ন এলাকায় এমন বন্দোবস্ত দেখেও যেন নিশ্চিন্ত নন পরিবেশকর্মীরা। সকাল সকাল তাঁদের অনেকেই চলে এসেছিলেন এলাকা ‘পাহারা’ দিতে। কেউ রবীন্দ্র সরোবরের গেটের মুখে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকলেন লাঠি হাতে, কেউ সুভাষ সরোবরের আশপাশে ঘুরে গেলেন সূর্যাস্ত পর্যন্ত। তাতে দিনের শেষে সরোবর বাঁচল ঠিকই, তবে প্রশ্ন উঠে গেল অন্য একটি বিষয়ে। পরিবেশকর্মীদের দাবি, সরোবর বন্ধ হওয়ায় দেদার গঙ্গা-দূষণ চলেছে এ দিন। সরোবর বাঁচানোর খেসারত কি তবে গঙ্গা-দূষণ? এই প্রশ্নের স্পষ্ট উত্তর মেলেনি পুলিশ বা প্রশাসন কারও কাছেই।

এ দিন দুপুরে রবীন্দ্র সরোবরে গিয়ে দেখা গেল, ১২টি গেটের প্রতিটিতে আলাদা দল গড়ে পুলিশি পাহারা রয়েছে। দু’টি করে গেট ধরে তৈরি হয়েছে বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা। সেখানেই দিনভর এলাকা ঘুরে দেখলেন কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার পদমর্যাদার দু’জন অফিসার। গেটপিছু রাখা হয়েছিল অন্তত এক জন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার পদমর্যাদার আধিকারিককে। ১২ নম্বর গেটের কাছে একটি চায়ের দোকানি বললেন, ‘‘যেন যুদ্ধ লাগতে চলেছে! ভোর থেকে সবাই তৈরি হয়ে বসে রয়েছেন।’’ এই আলোচনায় আবার মন নেই কাছেই মুড়ি-ভেলপুরির দোকান খুলে বসে থাকা সুমন সাঁতরার। বললেন, ‘‘অকারণে এত কড়াকড়ি। এই ভয়ে সকাল থেকে কোনও ক্রেতা আসছেন না। তা ছাড়া এখন সকলেই জানেন, কেউ আর রবীন্দ্র সরোবরে ছটপুজো করতে আসেন না।’’

অন্য একটি গেটের সামনে লাঠি হাতে পাহারায় থাকা পরিবেশকর্মী তথা রবীন্দ্র সরোবরে ছটপুজো বন্ধ করার মূল মামলাকারী সুমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘সূর্য না ডোবা পর্যন্ত কিছু বিশ্বাস নেই। আদালত ২০১৮ সালে রবীন্দ্র সরোবরে ছটপুজো বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিল। তার পরেও সেই নির্দেশ উড়িয়ে সরোবরে ছটপুজো হয়েছিল। ২০১৯ সালে আদালত অবমাননার মামলা হল। সে বার তো প্রায় সব ক’টি গেটের তালা ভেঙে রবীন্দ্র সরোবরে ঢুকেছিলেন পুণ্যার্থীরা। ২০২০-তে অবশ্য করোনার কারণে তেমন কিছু হয়নি। গত বছর আবার নিশানায় পড়েছিল এই জাতীয় সরোবর। লোক ঢুকতে বাধা দেওয়ায় রেললাইনের দিক থেকে পুলিশ আর আমাদের লক্ষ্য করে ইট ছোড়া হয়েছিল। এ বার এখনও তেমন কিছু হয়নি। সোমবার ভোর পর্যন্ত এ ভাবে কেটে গেলেই রক্ষে।’’

কিছু না হওয়ার দৃশ্য পূর্ব কলকাতার বেলেঘাটার কাছে সুভাষ সরোবরেও। সেখানেও এক জন ডেপুটি কমিশনার পদমর্যাদার পুলিশ আধিকারিকের অধীনে কয়েকশো পুলিশকর্মীকে ‘দুর্গ’ পাহারা দিতে দেখা গিয়েছে। ছটের পুণ্যার্থী বোঝাই গাড়ির জন্য রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল বেলেঘাটা থানা এবং নারকেলডাঙা মেন রোডের দিক থেকে। প্রতিদিন সুভাষ সরোবরে স্নান করতে আসা লোকজনের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। যুগলে ঘুরতে আসা কয়েক জনকেও পুলিশ জানিয়ে দেয়, সরোবর আবার খুলবে আজ, সোমবার বিকেলের পরে। তবে এরই মধ্যে চোখে পড়েছে সরোবর ঘিরে অন্য এক অংশের উৎসাহ। ভিতরে পুজো হচ্ছে কি না দেখতে অনেককেই টিনের ঘেরাটোপ ধরে উঁকিঝুঁকি মারতে দেখা গিয়েছে। তবে দিনের শেষে দুই সরোবর বাঁচিয়ে পরিবেশকর্মীদের সংগঠন ‘সবুজ মঞ্চ’-র সদস্য দেবাশিস রায় বললেন, ‘‘এ দিন প্রমাণ হল, চাইলে পুলিশ সব করতে পারে। সরোবর যখন রক্ষা করা গেল, তখন আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও ছটপুজোয় শব্দবাজি আর সাউন্ড বক্সের তাণ্ডব বন্ধ করা গেল না কেন’’

Chhath Puja 2022 rabindra sarobar Subhas Sarobar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy