Advertisement
E-Paper

ভোটের হাওয়ায় উপেক্ষিতই রইল বায়ুদূষণ

সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, বাতাসের গুণমানের ভিত্তিতে দেশের সবচেয়ে দূষিত শহরগুলির মধ্যে কলকাতা জায়গা করে নিয়েছে বারবার। গত শীতের মরসুমে ধারাবাহিক ভাবে দিল্লির থেকে শহরের বাতাসের গুণমান খারাপ থেকেছে।

দেবাশিস ঘড়াই

শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০১৯ ০০:৩১
ভরসা: দূষণ থেকে বাঁচতে মাস্ক ব্যবহার পড়ুয়াদের। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

ভরসা: দূষণ থেকে বাঁচতে মাস্ক ব্যবহার পড়ুয়াদের। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিক পরিসরে উত্তাপ বেড়েছে। হিংসা বেড়েছে। প্রায় তারই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বায়ুদূষণ। অথচ রাজনৈতিক প্রচারে বা প্রার্থীদের বক্তৃতায় দূষণের উল্লেখটুকু নেই।

সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, বাতাসের গুণমানের ভিত্তিতে দেশের সবচেয়ে দূষিত শহরগুলির মধ্যে কলকাতা জায়গা করে নিয়েছে বারবার। গত শীতের মরসুমে ধারাবাহিক ভাবে দিল্লির থেকে শহরের বাতাসের গুণমান খারাপ থেকেছে। অথচ সেই প্রসঙ্গটি আশ্চর্যজনক ভাবে প্রার্থীদের প্রচারে ‘উহ্য’ থাকায় স্বাভাবিক ভাবেই পরিবেশবিদ থেকে শুরু করে পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন মানুষদের একটা বড় অংশ প্রশ্ন তুলেছেন, দূষণের প্রসঙ্গটি অগ্রাহ্য করে নেতা-নেত্রীরা কোন ভবিষ্যতের কথা বলছেন? কোন প্রতিশ্রুতি রাখার কথা বলছেন তাঁরা?

রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তথ্য বলছে, শেষ ১৫ বছরে শহরের বাতাসের মান ধারাবাহিক ভাবে খারাপ হয়েছে। গত শীতের মরসুমে দূষণের মাপকাঠিতে শহরের বাতাসের মান ‘খারাপ’ ও ‘খুব খারাপ’-এর মধ্যে ঘোরাফেরা করেছে। শুধু শীতেই নয়, কয়েক মাস আগে শহরের বায়ুদূষণ নিয়ে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কাছে যে রিপের্ট দিয়েছে ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট’ (নিরি), তাতে গ্রীষ্মেও দূষণের মাত্রা তুলনামূলক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে বলা হয়েছে।

গত ১৫ বছরের তথ্য ঘাঁটলে দেখা যাচ্ছে, ২০০৪ সালে কলকাতায় লোকসভা নির্বাচন হয়েছিল ১০ মে। সে দিন বেহালা চৌরাস্তায় ভাসমান ধূলিকণার (পিএম ১০) পরিমাণ ছিল প্রতি ঘনমিটারে ৭২ মাইক্রোগ্রাম। মৌলালি, সল্টলেক ও তপসিয়ায় ওই পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৭৫, ৫৯ ও ৮৭ মাইক্রোগ্রাম। কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের মাপকাঠি অনুযায়ী বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার সহনশীল মাত্রা প্রতি ঘনমিটারে ১০০ মাইক্রোগ্রাম। অর্থাৎ, ওই বছরের লোকসভা ভোটে বাতাসের মান ছিল ‘সন্তোষজনক’।

ছবিটা বদলে যায় পরের লোকসভা নির্বাচনে, অর্থাৎ ২০০৯ সালে। সে বার কলকাতায় ভোট ছিল ১৩ মে। ওই দিন বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার পরিমাণ ‘সহনশীল’ মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। সে দিন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে দুপুর ২টোয় ভাসমান ধূলিকণার পরিমাণ ছিল প্রতি ঘনমিটারে ১৪২ মাইক্রোগ্রাম। যে ধারাবাহিকতা বজায় ছিল ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনেও। ওই বছরের ১২ মে ভোট ছিল কলকাতায়। সে দিন দুপুর ২টোয় রবীন্দ্রভারতী চত্বরে পিএম ১০-এর পরিমাণ ছিল ১২২। অর্থাৎ, দূষণের মাপকাঠি সে বারও যথেষ্টই লঙ্ঘিত হয়েছে। পরিবেশ বিজ্ঞানীদের একাংশ জানাচ্ছেন, শীতের তুলনায় গরমে দূষণের মাত্রা এমনিতে কম থাকে। কিন্তু তখনও যদি ‘সহনশীল’ মাত্রা লঙ্ঘিত হয়, তা হলে বুঝতে হবে কোথাও বড় কোনও সমস্যা রয়েছে।

এ বারের প্রচারে দল নির্বিশেষে প্রার্থীরা অবশ্য দূষণ নিয়ে আলাদা করে তেমন মাথা ঘামাচ্ছেন না। কলকাতা (দক্ষিণ) লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী মালা রায় বললেন, ‘‘নির্দিষ্ট করে বায়ুদূষণের প্রসঙ্গ বলা না হলেও প্লাস্টিক বর্জন করুন, এমন তো প্রায়ই বলে থাকি।’’ কলকাতা (দক্ষিণ) কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী চন্দ্র বসুর আবার দাবি, ‘‘অন্যেরা কে কী করছেন জানি না, কিন্তু আমাদের তরফে গ্রিন সিটি ও সবুজায়নের কথা বলা হচ্ছে।’’

প্রার্থীরা দাবি করছেন বটে, কিন্তু সেই দাবি উড়িয়ে দিচ্ছেন শহরের নাগরিকদের একাংশ। উত্তর কলকাতার এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘দূষণ যে বাড়ছে, সেটা তো সকলেই বুঝতে পারছেন। কিন্তু সে ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলির কেন এই উদাসীনতা, বোঝা যাচ্ছে না। দূষণকে অগ্রাহ্য করে কোন ভবিষ্যতের কথা যে তাঁরা বলছেন, তা-ও তো বুঝতে পারছি না। আমাদের কাছে এসে কেউ দূষণ প্রসঙ্গ তোলেননি।’’ দক্ষিণ কলকাতার আর এক ভোটার বলছেন, ‘‘নবীন প্রজন্মের কারও মুখেও এ বিষয়ে কিছু শুনছি না। সেই প্রার্থীদের তো এ বিষয়ে সচেতন হওয়া উচিত। কেন তাঁরা ভুলে যাচ্ছেন, জনপ্রতিনিধি হিসেবে এটা তাঁদের প্রাথমিক কর্তব্য। এ বিষয়ে রাজনীতি করলে আমাদেরই ক্ষতি।’’

Lok Sabha Election 2019 Air Pollution Kolkata
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy