Advertisement
E-Paper

মধ্যরাতের দূষণ ভাঙল রেকর্ড, হাওয়া ‘খুব খারাপ’

গত রবিবার রাত ৮টার পর থেকে বাজি ফাটতে শুরু হওয়ার পরেই পরিবেশকর্মীদের একাংশ আশঙ্কা করেছিলেন, শহরের বাতাসের মানের অবনমন ঘটবে। কিন্তু তা যে অতীতের সমস্ত রেকর্ড ভেঙেচুরে দিতে পারে, তা তখনও তাঁরা আঁচ করতে পারেননি।

দেবাশিস ঘড়াই

শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৯ ০২:২৪
আস্তরণ: কালীপুজোর রাতে বিদ্যাসাগর সেতুতে ধোঁয়াশা। রবিবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী

আস্তরণ: কালীপুজোর রাতে বিদ্যাসাগর সেতুতে ধোঁয়াশা। রবিবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী

বেপরোয়া ভাবে বাজি ফাটানোর মনোভাব। আর সে কারণেই বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার নিরিখে গত সাত বছরের মধ্যে সব চেয়ে দূষিত কালীপুজোর মধ্যরাত উপহার পেল শহর! যেখানে বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার (পিএম ১০) পরিমাণ হল সহনশীল মাত্রার থেকে ১৬ গুণ বেশি। যার জন্য কালীপুজো ও দীপাবলিতে দিল্লির ‘খুব খারাপ’ বাতাসের মানের পাশাপাশি, এ শহরের অনেক জায়গায় বাতাসের মানও হয়ে দাঁড়াল ‘খুব খারাপ’।

গত রবিবার রাত ৮টার পর থেকে বাজি ফাটতে শুরু হওয়ার পরেই পরিবেশকর্মীদের একাংশ আশঙ্কা করেছিলেন, শহরের বাতাসের মানের অবনমন ঘটবে। কিন্তু তা যে অতীতের সমস্ত রেকর্ড ভেঙেচুরে দিতে পারে, তা তখনও তাঁরা আঁচ করতে পারেননি। বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার নির্ধারিত মাত্রা হল প্রতি ঘনমিটারে ১০০ মাইক্রোগ্রাম। পরিসংখ্যান বলছে, গত বছর কালীপুজোয় রাত ১২টায় বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার পরিমাণ ছিল প্রতি ঘনমিটারে ৭২০.৪১ মাইক্রোগ্রাম। যা সহনশীল মাত্রার থেকে সাত গুণ বেশি। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর কালীপুজোয়, অর্থাৎ রবিবার রাত ১২টায় বি টি রোডের রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার পরিমাণ ছিল প্রতি ঘনমিটারে ১৬৫৭.৭০ মাইক্রোগ্রাম, অর্থাৎ সহনশীল মাত্রার চেয়ে ১৬ গুণ বেশি। প্রায় একই অবস্থা ছিল রবীন্দ্র সরোবর, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল এলাকাতেও। ওই দু’টি এলাকায় রাত ১২টায় বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার পরিমাণ ছিল যথাক্রমে প্রতি ঘনমিটারে ১০০০.৭০ মাইক্রোগ্রাম ও ৫০৪.৫০ মাইক্রোগ্রাম (সহনশীল মাত্রার থেকে যা যথাক্রমে দশ গুণ ও পাঁচ গুণ বেশি)। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের এক কর্তার কথায়, ‘‘বাজি ফাটানো হলে বাতাসে মূলত পিএম ১০-এর মাত্রাটাই বেড়ে যায়। তাই আমাদের নজর সেদিকেই বেশি থাকে। তা ছাড়া অন্য দূষক তো রয়েছেই।’’

পরিবেশকর্মীদের একটা বড় অংশ জানাচ্ছেন, এমনিতে বাজি ফাটানো শুরু হলে তার কিছুক্ষণ পর থেকে বাতাসে তার প্রভাব পড়তে থাকে। সেই মতো বাতাসের মানের অবনমন শুরু হয়।

রবিবার প্রধানত বাজি ফাটতে শুরু করেছিল রাত সাড়ে ৯টার পর থেকে। আর তার প্রভাবই গিয়ে পড়েছে পরবর্তী সময়ে। পর্ষদের এক কর্তার কথায়, ‘‘বাজির দূষণ সরতেও সময় লাগে। প্রভাব থাকে অনেক দিন পর্যন্ত। এর মধ্যেই আবার ঠান্ডা পড়ে যায়। ফলে দূষণের মাত্রা ক্রমশ বাড়তে থাকবে।’’

সে কারণে সোমবার দিনের বেলাতেও একই ভাবে শহরের বিভিন্ন জায়গায় বাতাসের মানের অবনতি হয়েছে। শুধু তাই নয়, রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তথ্য জানাচ্ছে, এ দিন বিকেল সওয়া ৪টে নাগাদ ফোর্ট উইলিয়াম, যাদবপুর, রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, রবীন্দ্র সরোবর, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল-সহ একাধিক জায়গার বাতাসের মান ‘খুব খারাপ’ ছিল। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এর আরও অবনতি শুরু হয়। এ দিন রাত ১০টায় রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পিএম ১০-এর পরিমাণ দাঁড়ায় প্রতি ঘনমিটারে ৫৮৪.৯০ মাইক্রোগ্রাম, সহনশীল মাত্রার থেকে যা পাঁচ গুণ বেশি। এক পরিবেশকর্মীর কথায়, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের রায় ছিল, রাত ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত বাজি ফাটানো যাবে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, নিষিদ্ধ বাজি ফাটানো যাবে। কিন্তু বাস্তবে যা হল, সময়ের নিয়ম মেনে বাজি ফাটানো তো হয়ইনি, এমনকি দেদার ফেটেছে নিষিদ্ধ বাজিও।’’

Kolkata Air Quality Index Pollution Kali Puja 2019
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy