এসএসকেএম হাসপাতাল
দান করা অঙ্গ রাজ্যের সরকারি হাসপাতালে প্রতিস্থাপন করে বহু মুমূর্ষু নতুন জীবন পাচ্ছেন, ঠিক। তবে একই সঙ্গে উঠে আসছে অন্য প্রসঙ্গও। তা হল, অঙ্গ প্রতিস্থাপন করতে গিয়ে যদি অন্য গুরুতর অসুস্থের চিকিৎসা পরিষেবা ব্যাহত হয়, সেটা কতটা যুক্তিযুক্ত? আপাতত এ নিয়েই এসএসকেএমের অন্দরে মতবিরোধ তুঙ্গে।
কারণ, রাজ্যে সাম্প্রতিক মস্তিষ্কের মৃত্যুর ঘটনায় অঙ্গ প্রতিস্থাপনের সিংহভাগই হয়েছে এসএসকেএমে। অঙ্গ প্রতিস্থাপন করতে গিয়ে ইউরোলজি বিভাগে ভর্তি রোগীদের অস্ত্রোপচার আটকাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে। জরুরি অস্ত্রোপচার এক-দেড় সপ্তাহ করে পিছিয়ে যাওয়ায় সমস্যায় গুরুতর অসুস্থ রোগীরা। পরিজনেদের অভিযোগ, এর জেরে অনেকের অবস্থার অবনতি হচ্ছে।
এসএসকেএম সূত্রের খবর, শুধু কিডনি নয়, হৃদ্যন্ত্র এবং লিভার প্রতিস্থাপন করতে গিয়েও পিছিয়ে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলির জরুরি অস্ত্রোপচার। ক্ষুব্ধ ওই সব বিভাগের চিকিৎসকদের অনেকেই। যে হেতু ‘ডিজ়িজ়ড ডোনার’ থেকে নেওয়া অন্য অঙ্গগুলির প্রতিস্থাপন কিডনির তুলনায় কম, তাই সমস্যা বেশি হচ্ছে ইউরোলজি বিভাগে বলে দাবি চিকিৎসকদের একাংশের।
সাধারণ রোগীদের অস্ত্রোপচার কেন আটকাচ্ছে? এর অন্যতম কারণ, এখনও এই সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ‘ডিজ়িজ়ড ডোনার ট্রান্সপ্লান্ট’-এর আলাদা অপারেশন থিয়েটার তৈরি হয়নি। ফলে টানা প্রায় দু’দিন নির্ধারিত সব অস্ত্রোপচার বন্ধ করে সেই কাজ হচ্ছে। ইউরোলজি বিভাগ সূত্রের খবর, প্রতিদিন ওই অপারেশন থিয়েটারে গড়ে ৭-৮টি বড় এবং ৯-১০টি মাঝারি ও ছোট অস্ত্রোপচার হয়। দু’দিন ওটি আটকে যাওয়ার অর্থ, ৩৫ জন রোগীর অস্ত্রোপচার পিছিয়ে যাওয়া। ফলে আটকে যাবে অতগুলি শয্যাও।
চিকিৎসকদের মতে, অঙ্গ প্রতিস্থাপনে মরণাপন্ন রোগীরা জীবন পাচ্ছেন ঠিকই। তবে অস্ত্রোপচার আটকে যাওয়ায় ইউরোলজি বিভাগে গুরুতর অসুস্থ রোগীর জীবনও সঙ্কটাপন্ন হচ্ছে। দু’দিকেই রোগীর স্বার্থ রয়েছে। একটি দিককে অগ্রাধিকার দেওয়া মুশকিল। হাসপাতালের গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি বিভাগের প্রধান অভিজিৎ চৌধুরী অবশ্য এ সব অভিযোগ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘নিয়মিত কিছু অস্ত্রোপচার পিছিয়ে যাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু বড় কিছু করতে গেলে এমন তো হবেই।’’ রাজ্য স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘‘বিষয়টি জানা ছিল না। অবশ্যই খতিয়ে দেখব।’’
হাসপাতালের নেফ্রোলজি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক অর্পিতা রায়চৌধুরী আবার ‘রিজিওন্যাল অর্গান অ্যান্ড টিসু ট্রান্সপ্লান্ট অর্গানাইজেশন’ (রোট্টো)-এর যুগ্ম অধিকর্তা। তিনি বলেন, ‘‘পূর্ত দফতর শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে অস্থি বিভাগের প্রস্তাবিত ঘর এখনও শেষ করেনি। অস্থি বিভাগ এসএসকেএমে নেফ্রোলজির জায়গা দখল করে আছে। তাই ইউরোলজির ওটিতেই অস্ত্রোপচার হচ্ছে। তাই অঙ্গ প্রতিস্থাপনের নির্দিষ্ট হাসপাতাল চালু করা যাচ্ছে না। ঠিক হতে তিন মাস লাগবে।’’ এর পরেই তাঁর মন্তব্য, ‘‘ডিজ়িজ়ড ডোনার ট্রান্সপ্লান্টের অস্ত্রোপচারে ইউরোলজির ডাক্তারেরা এখন না হয় রপ্ত হন। আগে তো এ ধরনের অস্ত্রোপচারে তাঁদের সমস্যা হত। যে কারণে কিছু মৃত্যুও হয়েছে। পরপর কয়েকটি অস্ত্রোপচার করে তাঁদের হাত পাকছে।’’ পাশাপাশি তাঁর দাবি, ‘‘রবিবার জমে থাকা অস্ত্রোপচার করতে হচ্ছে বলেই হয়তো এ নিয়ে কথা হচ্ছে।’’
হাসপাতালের ইউরোলজি বিভাগের প্রধান দিলীপ পাল বলেন, ‘‘কর্তৃপক্ষ যা করার করবেন।’’ হাত পাকানো প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘‘সরকার মুখ দেখে প্রফেসর বা অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর করেনি।’’ এসএসকেএমের অধিকর্তা মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায় হোয়্যাটসঅ্যাপে জানান, তিনি বাইরে আছেন। এ নিয়ে কিছু বলা সম্ভব নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy