Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

জল জমা রুখতে চাই নিকাশির আরও সংস্কার

প্রাক বর্ষার প্রথম বর্ষণেই জল জমল শহরের বেশ কিছু এলাকায়। গত এক বছর ধরে শহরে জলছবির চেহারা রুখতে চেষ্টার কসুর করেনি বলে দাবি পুর প্রশাসনের।

সংস্কারের অভাবে এমনই হাল বেলেঘাটা খালের।

সংস্কারের অভাবে এমনই হাল বেলেঘাটা খালের।

অনুপ চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০১৬ ০৭:০৫
Share: Save:

প্রাক বর্ষার প্রথম বর্ষণেই জল জমল শহরের বেশ কিছু এলাকায়। গত এক বছর ধরে শহরে জলছবির চেহারা রুখতে চেষ্টার কসুর করেনি বলে দাবি পুর প্রশাসনের। তবুও সোমবারে গড়ে ৩০-৩৫ মিলিমিটার বৃষ্টিতে জল থইথই হল দক্ষিণ কলকাতা এবং দক্ষিণ শহরতলির কিছু এলাকা। বাদ যায়নি খোদ মুখ্যমন্ত্রীর এলাকা ভবানীপুরও। আশুতোষ কলেজের পিছনের রাস্তাতেও জল জমে যায় ঘণ্টাখানেকের বৃষ্টিতে। পুরকর্তারা অবশ্য এটাকেই তাঁদের অনেকটা সাফল্য বলে মনে করছেন। নিকাশি দফতরের এক ইঞ্জিনিয়ারের কথায়, ‘‘একটা সময় ছিল যখন এ রকমই বৃষ্টির পরে তিন-চারদিন ধরে জল জমে থাকত একাধিক রাস্তায়। এখন মাত্র ২-৩ ঘণ্টায় তা নেমে যায়।’’

মুখে যাই বলুন না কেন, শহরের নিকাশি ব্যবস্থা এখনও যে স্বাভাবিক করা যায়নি, তা মেনে নিচ্ছেন একাধিক কাউন্সিলরও। বিশেষ করে সংযোজিত কলকাতার হাল অনেকটাই খারাপ। যাদবপুর ও বেহালা অঞ্চলে জলছবির চিত্র এখনও অস্বস্তিতে ফেলে শাসক দলের কাউন্সিলরদের। খোদ মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ও মানেন সে কথা। আর এর পিছনে কেইআইআইপির ভূমিকার সমালোচনাও করেছেন বার বার। পুরসভা সূত্রেরই খবর, গত কয়েক বছরে কোটি কোটি টাকা খরচ করে হয়েছে সংযোজিত কলকাতার নিকাশি ব্যবস্থা বদলানোয়। কিন্তু বিজ্ঞানসম্মত ভাবে তা করা হয়নি। কোথাও দেখা গিয়েছে নালার মুখ চওড়া হয়ে বেরোনোর সময় তা ক্রমশ সরু হয়ে গিয়েছে। তাতে জল প্রবাহে অসুবিধা বেড়েছে। কোথাও বা দু’পাশের নালা তৈরি হয়েছে, কিন্তু মাঝেরটাই বাদ। বেহালার কয়েকটি ওয়ার্ডে এমনই অপরিকল্পিত কাজের জন্য এখনও ভারী বর্ষণ হলেই আশঙ্কিত হন এলাকাবাসী। তা স্বীকারও করে নিয়েছেন বেহালার একাধিক কাউন্সিলর।

সোমবারের বৃষ্টির পর মঙ্গলবার বেহালার বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডের নিকাশির হাল দেখতে যান মেয়রও। পুরসভার নিকাশি দফতরের মেয়র পারিষদ তারক সিংহ জানান, শহরের প্রধান রাস্তার নিকাশি ব্যবস্থা অনেকটা উন্নত করা গেলেও বেহালা, যাদবপুর, মুকুন্দপুর টালিগঞ্জ, গার্ডেনরিচ এবং চেতলার কিছু গলিতে এখনও সমস্যা রয়েছে। দীর্ঘদিন রাস্তার গালিপিট এবং ইটের নিকাশি কাঠামোর ভেতরে পলি সরানোর কাজ করা হয়নি। একটু ভারী বর্ষণ হলেই দ্রুত জল জমে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যেত। তবে গত এক বছর ধরে অনেক জায়গাতেই পলি তোলার কাজ হয়েছে। তাতে বৃষ্টির পরিমাণ বেশি হলে জল জমছে ঠিকই, তবে অল্প সময়েই তা সরে যাচ্ছে।

অল্প বৃষ্টিতেই জলমগ্ন সল্টলেক।

শহরের নিকাশি ব্যবস্থা কীসের উপর নির্ভর করে?

মেয়র পারিষদ জানান, কলকাতা শহরের নিকাশি কাঠামো এমন তাতে ঘণ্টায় ৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে জল জমবে না। তা নালা দিয়ে বেরিয়ে যাবে। কিন্তু তার বেশি বৃষ্টি হলে জল জমার প্রবণতা বাড়ে। তাঁর কথায়, ‘‘এখন যে নিকাশির কাঠামো রয়েছে তাতে মূল শহরে (সংযোজিত এলাকা নয়) ঘণ্টায় ৫০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টি হলে জল জমবে ঠিকই, তবে ৩-৪ ঘণ্টার ভিতরে সেই জল সরেও যাবে। কিন্তু ৫০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হলে জমা জল সরতে সময় আরও বেশি লাগবে।

কিন্তু কেন?

তারকবাবু জানান, ১০০ বছরের বেশি আগেকার নিকাশি প্রণালি। তখন শহরে জলের ব্যবহার কম ছিল। খালগুলোর নাব্যতাও ভাল ছিল। তাই জল বেরোতে অসুবিধা ছিল না। এক শ্রেণির বাসিন্দার সচেতনতার অভাবে এখন খালের নাব্যতা কমেছে। এ ছাড়া কখনও কখনও গঙ্গার জলসীমা বেড়ে শহরে ঢুকে পড়ে। এতেও শহরে জল জমে। তাঁর ব্যাখ্যা, শহরের নিকাশি জল খালের মধ্য দিয়ে গঙ্গায় পড়ে। তাই জোয়ারে বা অন্য সময় গঙ্গার জল বাড়ে তখন শহরের লকগেট বন্ধ রাখতে হয়। সে সময় বৃষ্টির ফলে শহরের জমা জল বেরোতে পারে না। তাতে শহরে জল জমে থাকে।

পুরকর্তারা যাই বলুন না কেন, শহরের নিকাশি পরিকাঠামো য়ার উপর নির্ভরশীল সেই নালাগুলোর হাল কেমন তা দেখতে নজরে পড়ল বেলেঘাটা ক্যানেলের চিত্র। দিন কয়েক আগেই প্রাক বর্ষার প্রস্তুতি নিয়ে এক বৈঠক হয় পুরসভায়। সেখানে হাজির ছিলেন মেয়র তথা রাজ্যের আবাসনমন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁরা বলেছিলেন নিকাশি ব্যবস্থা সুষ্ঠু রাখার জন্য খালগুলির সংস্কার করা হচ্ছে। এর পরেও দেখা গিয়েছে মধ্য ও পূর্ব কলকাতার নিকাশি ব্যবস্থার অন্যতম ওই খাল আর্বজনা এবং গাছগাছালিতে ভর্তি। এই খাল দিয়ে নিকাশির কাজ কতটা সম্ভব তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে পুরমহলেই।

নিজস্ব চিত্র

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE