জলপাইগুড়ি কারাগারে দুই কর্মীর মারপিটের ঘটনায় বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছিল ২০১৬ সালে। ন’বছর পেরিয়ে গেলেও সেই তদন্ত ‘অসম্পূর্ণ’। কারা দফতর বলছে, ওই ঘটনা ব্যতিক্রমী নয়। এমন কয়েক ডজন বিভাগীয় তদন্ত এখনও অসম্পূর্ণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন সংশোধনাগারে। সেগুলি শুরু হয়েছিল অনেক আগে। বিষয়টি নজরে আসায় ক্ষুব্ধ কারা কর্তৃপক্ষ। সূত্রের খবর, এর পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার কারা দফতরের এডিজি লক্ষ্মীনারায়ণ মীনা একটি নির্দেশিকা জারি করেছেন। তাতে ৪১টি এমন ঘটনার উল্লেখ রয়েছে, যেগুলির তদন্ত এখনও শেষ হয়নি। দশ দিনের মধ্যে সেগুলির তদন্ত শেষ করে তদন্তকারী আধিকারিকদের রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে এডিজি (কারা) বলেন, ‘‘এগুলি সবই রুটিন বিষয়। এ নিয়ে বলার কিছু নেই।’’ কারা দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘সংশোধনাগারে বিভিন্ন ঘটনা ঘটে। সে সব ঘটনার বিভাগীয় তদন্ত হয়। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, নানা কারণে তদন্ত গতি হারিয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তদন্ত শেষ হয় না। এর ফলে যাঁদের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, চাকরিজীবনে তাঁদের নানা সমস্যায় পড়তে হয়। অনেক ক্ষেত্রে সাসপেন্ড হয়ে থাকতে হয় তাঁদের। আবার তদন্ত শেষ না হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে অবসরের পরেও ‘প্রভিশনাল পেনশন’ নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় কর্মীদের। তদন্ত শেষ না হওয়ায় পদোন্নতিও আটকেথাকে। এই অনাবশ্যক বিলম্ব কখনওই কাম্য নয়। সেই কারণেই এমন নির্দেশ।’’ জানা গিয়েছে, কারা দফতরের ২২ জন আধিকারিকের উদ্দেশ্যে এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দশ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে তাঁদের। কোন আধিকারিকের কাছে কতগুলি তদন্ত অসম্পূর্ণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে, তার তালিকাও নির্দেশিকায় দেওয়া রয়েছে।
কারা দফতর সূত্রের খবর, যে ৪১টি ক্ষেত্রে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছিল, সেই ঘটনাগুলির কোনওটি ঘটেছিল ২০১৬ সালে, কোনওটি ২০২২ বা ২০২৪ সালে। জানা গিয়েছে, বেশির ভাগ তদন্তই শুরু হয়েছিল ওয়ার্ডারদের (কারারক্ষী) বিরুদ্ধে। এক আধিকারিক বলেন, ‘‘এই ৪১টি তদন্তের মধ্যে সব থেকে পুরনোটি শুরু হয়েছিল ২০১৬ সালে। শুধু দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে ঘটেছিল ১৫টি ঘটনা। সেগুলির তদন্তও শেষ হয়নি। তালিকায় বর্ধমান, সিউড়ি, হাওড়া, বারুইপুর সংশোধনাগারে ঘটা বেশ কিছু ঘটনার উল্লেখ রয়েছে, যেখানে তদন্ত শুরু হলেও শেষ হয়নি। তদন্ত শুরুই হয়নি, এমন ঘটনাও রয়েছে। আবার কিছু ক্ষেত্রে তদন্ত হলেও তার রিপোর্ট এখনও কারা দফতরে জমা পড়েনি। কোনও কোনও ক্ষেত্রে আদালতে মামলা হওয়ায় তদন্ত প্রক্রিয়া থমকে রয়েছে।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)