Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
পাটুলিতে সিন্ডিকেট-রাজ

মাল না-নেওয়ায় মার প্রোমোটারকে, গ্রেফতার ১

সিন্ডিকেটের বাড়বাড়ন্ত নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ্যে যতই হুঁশিয়ারি দিন না কেন, রাজারহাট-নিউটাউন থেকে এই সংক্রামক ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র। যার সর্বশেষ উদাহরণ, দক্ষিণ শহরতলির পাটুলিতে স্থানীয় সিন্ডিকেটের কাছ থেকে মাল কিনতে অস্বীকার করায় তিন যুবক বাড়ি এসে বেধড়ক পিটিয়ে গেল এক প্রোমোটারকে।

প্রহৃত দীপক সাহা —  নিজস্ব চিত্র

প্রহৃত দীপক সাহা — নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৬ ০৪:০৫
Share: Save:

সিন্ডিকেটের বাড়বাড়ন্ত নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ্যে যতই হুঁশিয়ারি দিন না কেন, রাজারহাট-নিউটাউন থেকে এই সংক্রামক ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র। যার সর্বশেষ উদাহরণ, দক্ষিণ শহরতলির পাটুলিতে স্থানীয় সিন্ডিকেটের কাছ থেকে মাল কিনতে অস্বীকার করায় তিন যুবক বাড়ি এসে বেধড়ক পিটিয়ে গেল এক প্রোমোটারকে। তাদের সিন্ডিকেটের কাছ থেকে মাল না কিনলে ওই প্রোমোটারকে এলাকায় কোনও কাজ করতে দেওয়া হবে না বলেও তারা হুমকি দিয়েছে বলে অভিযোগ।

প্রহৃত প্রোমোটার থানায় অভিযোগ করার পরে পুলিশ অভিযুক্তদের একজনকে গ্রেফতার করেছে। বাকি দু’জন এখনও অধরা। এবং তারা এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে বলেই অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওই এলাকায় শাসক দলের এক নেতার ঘনিষ্ঠ বলেই ওই দু’জনকে পুলিশ ধরেনি। যদিও পুলিশের দাবি, ওই দু’জন গা ঢাকা দিয়েছে। এর আগে, রাজারহাট-নিউটাউন এলাকায় শাসক দলের মদতে চলা সিন্ডিকেটের দাপটে অনেক প্রোমোটার কাজ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। পুলিশে অভিযোগ জানালে সেই প্রোমোটারদের আরও হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। পরপর অভিযোগ পেয়ে মুখ্যমন্ত্রী কড়া মনোভাব নেওয়ায় রাজারহাট এলাকায় সিন্ডিকেট-রাজ বর্তমানে কিছুটা ব্যাকফুটে। তার মধ্যেই পাটুলি এলাকায় শাসক দলের স্থানীয় নেতার মদতে সিন্ডিকেট-রাজ আরও সক্রিয় হয়ে উঠছে বলে অভিযোগ।

ঠিক কী হয়েছে পাটুলিতে?

সোমবার বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ পাটুলির বাঘাযতীন স্টেশন রোড সংলগ্ন এলাকার বিপ্লবী উল্লাসকর দত্ত রোডে নিজের অফিসে বসেছিলেন প্রোমোটার দীপক সাহা। তাঁর অভিযোগ, এলাকার তিন যুবক হঠাৎ করেই তাঁর অফিসে ঢুকে পড়ে। প্রথমে গালাগাল, তার পরেই মারধর শুরু করে তারা। মঙ্গলবার দীপকবাবু বলেন, ‘‘সোমবার সকাল সাড়ে এগারোটা নাগাদ আমার বাড়ির নীচের অফিসে ঢুকে গালাগালি দিতে শুরু করে সুরজিৎ দাস, প্রদীপ দাস এবং অসিত মণ্ডল নামে এলাকার তিন যুবক। ওরা বলে, ‘সব কাজ বন্ধ রাখতে হবে। আমরা যখন মাল দেব, তখনই কাজ হবে। অন্য কারও থেকে একটা ইটও কেনা যাবে না।’ তার পরেই তিন জনে মিলে আমাকে চড়-থাপ্পড়-ঘুষি মারতে শুরু করে।’’ ঘটনার পরেই তিন জনের বিরুদ্ধে পাটুলি থানায় লিখিত অভিযোগ করেন দীপকবাবু।

কে এই সুরজিৎ, প্রদীপ আর অসিত?

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, তৃণমূলের মিছিলে-সভায় ওই তিন জনকে সব সময়েই দেখা যায়। গত পুর নির্বাচনে এলাকায় তৃণমূল প্রার্থী জিতে কাউন্সিলার হওয়ার পরে ওদের দাপট বেড়েছে। তার পর থেকেই ওরা ইমারতি দ্রব্য সরবরাহের সিন্ডিকেট খুলে বসে। এলাকার সব প্রোমোটারকে ওদের থেকেই মাল কিনতে হবে বলে হুঁশিয়ারিও দেয়। স্থানীয় কাউন্সিলারের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় এলাকার অন্য সিন্ডিকেট ছেড়ে প্রোমোটারেরা বাধ্য হয়ে অসিতদের থেকেই মাল কিনতে বাধ্য হচ্ছিলেন। দীপকবাবুও তাই।

তা হলে তাঁর উপরে হামলা হল কেন?

দীপকবাবুর বক্তব্য, বাঘাযতীন স্টেশন রোড এবং পাটুলি এলাকায় এখনও পর্যন্ত তিনি যে আটটি বহুতল নির্মাণ করেছেন, সব ক্ষেত্রেই ইমারতি দ্রব্য সরবরাহের বরাত পেয়েছিল ওই সিন্ডিকেট। কিন্তু সম্প্রতি ওরা সময় মতো জিনিস দিতে না পারায় তিনি অন্য একটি সিন্ডিকেটের কাছ থেকে জিনিস কিনতে শুরু করেন। আর তাতেই রাগ।

থানায় অভিযোগ জানানোর পাশাপাশি দীপকবাবু বিষয়টি স্থানীয় (১০১ নম্বর ওয়ার্ড) তৃণমূল কাউন্সিলার বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্তকে জানান। মঙ্গলবার বাপ্পাদিত্য বলেন, ‘‘ঘটনার কথা শুনেছি। পুলিশকে কোনও রং না দেখে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। এই ধরনের কাজকে কখনও সমর্থন করা হবে না।’’ তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে তাঁর এই মন্তব্যের পরেই গ্রেফতার হন প্রদীপ।

দীপকবাবুর বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করেছেন অভিযুক্তেরা। তাঁদের দাবি, দীপকবাবুর কাছে ইমারতি দ্রব্য সরবরাহ করে টাকা পাননি। প্রায় দু’লক্ষ টাকা বকেয়া রয়েছে। পরোক্ষে একই কথা বলেছেন কাউন্সিলরও। অভিযুক্তদের দাবি, বকেয়া টাকা চাইতে তাঁরা সোমবার দীপকবাবুর অফিসে যান। এক অভিযুক্তের কথায়, ‘‘টাকা চেয়েছি বলেই ফাঁসানো হয়েছে।’’

যা শুনে দীপকবাবুর পাল্টা দাবি, পুজোর আগেই তিনি দু’লক্ষ টাকা দিয়ে দিয়েছেন। আরও প্রায় এক লক্ষ টাকা বকেয়া আছে। যে চুক্তিতে তিনি জিনিস কিনেছিলেন, সেই চুক্তি অনুযায়ী ওই টাকা দেওয়ার সময় এখনও হয়নি।

বাপ্পাদিত্য সিন্ডিকেটের রমরমাকে সমর্থন করেন না বলে জানিয়েছেন। তা হলে এত দিন কী করে তাঁর এলাকায় এটা চলছে? কেনই বা তাঁর ঘনিষ্ঠদের নাম উঠছে?

বাপ্পাদিত্য বলেন, ‘‘আমি মাত্র দেড় বছর হল কাউন্সিলার হয়েছি। আসলে সিপিএমের জমানায় যাঁরা সিন্ডিকেটের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, এখন তাঁরাই আমাদের দলের নাম নিচ্ছেন। এঁরা আমাদের দলের কেউ নন। তবে প্রদীপ আমাদের সমর্থক। তা হলেও তাঁর এই ধরনের
কাজ সমর্থন করি না।’’ স্থানীয়দের অভিযোগ, কাউন্সিলারের মদতেই প্রদীপদের বাড়বাড়ন্ত।

এলাকার মানুষের অভিযোগ, বাপ্পাদিত্যর মাথায় রাজ্যের মন্ত্রী ও তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের হাত রয়েছে। পার্থবাবু সেই অভিযোগকে আমল না দিয়ে বলেন, ‘‘অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ তার কাজ করেছে। তৃণমূল কাউকে সিন্ডিকেট করতে বলেনি। আমরা সিন্ডিকেট বন্ধ করতে চাই বলেইতো পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেফতার করছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Promoter
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE