Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়

প্রবেশিকা পরীক্ষা নিয়ে বারবার জটিলতা কেন

পরপর দু’বার। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক স্তরের প্রবেশিকা পরীক্ষা নিয়ে গত বছরও সমস্যা তৈরি হয়েছিল। অভিযোগ, এ বছরও কার্যত নাস্তানাবুদ হতে হচ্ছে ওই পরীক্ষায় বসার জন্য আবেদনকারী ছাত্র-ছাত্রী ও তাঁদের অভিভাবকদের।

সুপ্রিয় তরফদার
শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৬ ০০:০০
Share: Save:

পরপর দু’বার। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক স্তরের প্রবেশিকা পরীক্ষা নিয়ে গত বছরও সমস্যা তৈরি হয়েছিল। অভিযোগ, এ বছরও কার্যত নাস্তানাবুদ হতে হচ্ছে ওই পরীক্ষায় বসার জন্য আবেদনকারী ছাত্র-ছাত্রী ও তাঁদের অভিভাবকদের।

প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর, ভর্তি প্রক্রিয়া সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করতে ২০১৫ থেকেই প্রবেশিকা পরীক্ষার দায়িত্ব পশ্চিমবঙ্গ জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডের কাঁধে তুলে দেন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তার পর থেকেই একের পর এক অভিযোগ। গত বছর পরীক্ষার এক দিন আগেও অ্যাডমিট কার্ড সংগ্রহ করে উঠতে পারেননি অনেকে। এ বছরও বোর্ডের ওয়েবসাইটে রেজিস্ট্রেশন করার পরে কোনও ভাবেই টাকা জমা দেওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ। এমনকী ব্যাঙ্কে গেলেও খালি হাতেই ফিরতে হচ্ছে। তাই প্রশ্ন উঠেছে আদৌ প্রবেশিকা পরীক্ষার দায়িত্ব জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডের উপরে ছাড়া উচিত কি না। কারণ ভর্তি প্রক্রিয়া জয়েন্ট বোর্ডের উপরে দেওয়া পর থেকেই জটিলতা শুরু হয়েছে।

আবেদনকারী এক পড়ুয়ার অভিভাবক বলেন, ‘‘রেজিস্ট্রেশন করা হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ওয়েবসাইটে ফর্ম পূরণ করতে গিয়ে নির্দিষ্ট জায়গায় ডেবিট কার্ডের নম্বর দিলেও প্রত্যুত্তর আসছে না। আবেদন সম্পূর্ণ করতে পারছি না।’’ জয়েন্ট বোর্ড জানায়, এলাহাবাদ ব্যাঙ্ক থেকেও টাকা জমা দেওয়া যাবে। কিন্তু সেখানে গিয়েও দেখা যাচ্ছে লিঙ্ক না থাকার কথা বলে দায় এড়াচ্ছে ব্যাঙ্ক।

এক দিকে পরিকাঠামোর অভাবে ধুঁকছে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা। পরিকাঠামো ভাল না হওয়ায় কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের করা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় ৪২ নম্বরে ঠাঁই হয়েছে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের। একের পর এক শিক্ষক ছেড়ে চলে যাওয়ায় বার বার বিতর্কের মুখে পড়েছেন কর্তৃপক্ষ। পরীক্ষা সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করতে নিজেদের প্রতিষ্ঠানে প্রবেশিকা পরীক্ষার দায়িত্ব জয়েন্ট বোর্ডের উপরে দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বদলায়নি চিত্র।

প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ অমল মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘১৯৭০ থেকে প্রেসিডেন্সি নিজেই প্রবেশিকা পরীক্ষা নিয়ে আসছে। ঐতিহ্য ভেঙে বহিরাগত কোনও সংস্থাকে সেই কাজের দায়িত্ব দেওয়া অপদার্থতার পরিচয়। নিজেরাই পরীক্ষা নিলে যে দায়বদ্ধতা থাকত, বাইরের সংস্থার তা থাকে না। তাই এই অবস্থা।’’ প্রেসিডেন্সির ছাত্র প্রান্তিক বসু বলেন, ‘‘ভর্তি ঘিরে এমন জটিলতায় সকলের সম্মান যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের যে ন্যূনতম রাশ থাকা উচিত সেটাই নেই।’’ তবে এ বছর শুধু টাকা জমা দেওয়া নিয়েই নয়, প্রথম থেকেই নানা বিভ্রান্তি ছড়িয়েছিল বোর্ডের একাধিক বিজ্ঞপ্তিতে।

এ বছর উচ্চ মাধ্যমিকের ফল প্রকাশিত হয় ১৬ মে। আগে থেকে নির্দিষ্ট ভাবে তারিখটি জানা না থাকলেও সকলেরই মোটামুটি একটা ধারণা ছিল। কিন্তু সে সব কিছু কার্যত পাত্তা না দিয়েই জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডের তরফে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয় ফর্ম পূরণের শেষ দিন ৫ মে। অথচ তখন রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন চলায় ফল প্রকাশের কোনও সম্ভাবনাই ছিল না। প্রশ্ন ওঠে কোন নম্বরের ভিত্তিতে ফর্ম পূরণ করবেন আবেদনকারীরা? মার্চ থেকে দীর্ঘ দিন ওয়েবসাইটে সেই বিজ্ঞপ্তি থাকলেও টনক নড়েনি বোর্ড বা প্রেসিডেন্সি কর্তৃপক্ষের। সংবাদমাধ্যমের নজরে তা আসার পরে এপ্রিলের মাঝামাঝি জানানো হয় শুধুমাত্র রেজিস্ট্রেশন করা যাবে ৫ মে পর্যন্ত।

পরে পড়ুয়াদের চাপে ভর্তি ও রেজিস্ট্রেশনের শেষ তারিখ করা হয় ১ জুন। প্রশ্ন ওঠে যে বোর্ড জয়েন্ট-এর মতো একটি পরীক্ষা আয়োজন করে সেখানে প্রেসিডেন্সির শুধুমাত্র প্রবেশিকা পরীক্ষার আয়োজনে প্রতি বছর এত বিভ্রান্তি কেন? বোর্ড সূত্রের খবর, গত বছরে মুম্বইয়ে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়ে সার্ভার খারাপ থাকায় অসুবিধা হয়ছিল। তা হলে এ বছর কেন একই অবস্থা? জয়েন্ট বোর্ডের চেয়ারম্যান সজল দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘টাকা জমা না দিতে পারার সমস্যা হওয়ার কথা নয়। দ্রুত খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’

উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়াকে শনিবার এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘বাড়িতে অনুষ্ঠান চলছে। তা ছাড়া আমি ভর্তির বিষয়টি দেখি না। রেজিস্ট্রারকে জিজ্ঞাসা করুন।’’ এর পরে রেজিস্ট্রার দেবজ্যোতি কোনারকে বহু বার ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।

প্রবেশিকা পরীক্ষা ও ভর্তি নিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে প্রতি বছর একটি ভর্তি কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটির আহ্বায়ক গান্ধীকুমার কর বলেন, ‘‘এই সমস্যা সম্পর্কে আমরা অবহিত। জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডকে ই-মেলে সমস্যার কথা জানানো হয়েছিল। কিন্তু এখনও যে তা মেটেনি, এটা দুর্ভাগ্যজনক।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Presidency university Entrance exam
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE