Advertisement
১৬ মে ২০২৪
Kolkata Bus Fire

রক্ষণাবেক্ষণের খামতি থেকেই বার বার আগুন, প্রশ্নে যাত্রীদের সুরক্ষা 

গুরু নানক সরণি দিয়ে যাওয়ার পথে হাওড়ামুখী বাসটির সামনে থেকে আচমকাধোঁয়া বেরোতে দেখা যায়। আতঙ্কে বাস থামিয়ে নেমে পড়েন চালক। নেমে আসেন যাত্রীরাও। দমকলের একটি ইঞ্জিন গিয়ে বাসের আগুন নেভায়।

An image of buses

—প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২৩ ০৭:২২
Share: Save:

দিনকয়েক আগের ঘটনা। সকালে যাত্রী নিয়ে দৌড় শুরু করেছিল একটি বেসরকারি বাস। গুরু নানক সরণি দিয়ে যাওয়ার পথে হাওড়ামুখী বাসটির সামনে থেকে আচমকাধোঁয়া বেরোতে দেখা যায়। আতঙ্কে বাস থামিয়ে নেমে পড়েন চালক। নেমে আসেন যাত্রীরাও। দমকলের একটি ইঞ্জিন গিয়ে বাসের আগুন নেভায়। তবে, ওই ঘটনায় কোনও জীবনহানি হয়নি।

এই শহরে চলন্ত বাসে আগুন লাগার ঘটনা এর আগেও একাধিক বার ঘটেছে। তবে, এ থেকে যে বড় অঘটন ঘটতে পারে, সেটাই দেখিয়ে দিল মহারাষ্ট্রে এক্সপ্রেসওয়ের বাসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। চলন্ত বাসেই ২৫ জনের দগ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে সেই ঘটনায়। বার বার বাসে আগুন লাগার কারণ হিসাবে রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়াকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞেরা। বাসে আচমকা আগুন লাগা প্রসঙ্গে অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারেরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শর্ট সার্কিটকে দায়ী করে থাকেন। তাঁদের মতে, নির্দিষ্ট সময় অন্তর গাড়িরইঞ্জিন-সহ বেশ কিছু জিনিসের পরিবর্তন এবং ওয়্যারিং-ব্যাটারির পরীক্ষা প্রয়োজন। ওয়্যারিংয়ে গলদের জেরেও এমন ঘটনা ঘটে বলে জানা যাচ্ছে।

একটি বেসরকারি সংস্থার অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ার শান্তনু মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ছোট গাড়ির ক্ষেত্রে কোম্পানি থেকেই ওয়্যারিংয়ের বিষয়টি হয়ে আসে। বাসের ক্ষেত্রেও একই। তবে, খরচ কমাতে বহু মালিক গাড়িরইঞ্জিন-সহ গোটা কাঠামো কিনে শহরের গ্যারাজ থেকে বাকি কাজ করিয়েনেন। তখন খরচ বাঁচাতে নিম্ন মানের জিনিস ব্যবহার করা হয়। কখনও গ্যারাজের তরফেই লভ্যাংশবাড়াতে অসৎ উপায় বেছে নেওয়া হয়। ফলে বাস রাস্তায় নামানোর পরেই গলদ নজরে আসে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘নির্দিষ্ট সময় অন্তর এগুলো পরীক্ষা না করলেই বিপদ বেড়ে যায়।’’

বাসমালিকদের একাংশ আবার দীর্ঘ দিন ধরে বাসের ভাড়া নাবাড়ানোকেই এ সবের জন্য দায়ী করছেন। তাঁদের বক্তব্য, ট্র্যাফিকের জরিমানা ও জ্বালানির দাম অনেকটা করে বেড়েছে। কিন্তু গত কয়েক বছরে বাসের ভাড়া বাড়েনি। ফলে বাধ্য হয়েই গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণে কাটছাঁট করতে হচ্ছে। এক বাসমালিকের কথায়, ‘‘করোনাকালে দীর্ঘ দিন বাস বসে ছিল। এখন রাস্তায় নেমেছে ঠিকই, কিন্তু খরচও কয়েক গুণ বেড়েছে।’’

বাসমালিকেরা জানাচ্ছেন, আগে চালু বাসের ক্ষেত্রে তিন-চার মাস অন্তর ইঞ্জিন অয়েল, ক্লাচ,প্লেট-সহ প্রয়োজনীয় জিনিস গ্যারাজে রেখে পরীক্ষা এবং বদল করার রেওয়াজ ছিল। সে সব এখন মানা হয় না। রক্ষণাবেক্ষণের এই গাফিলতির জেরেই যাত্রীদের সুরক্ষারবিষয়টিও প্রশ্নের মুখে পড়ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা।

‘সিটি সাবার্বান বাস সার্ভিসেস’-এর সাধারণ সম্পাদক টিটো সাহার দাবি, ‘‘গণ পরিবহণে যাত্রী সুরক্ষায় গাফিলতি আমরা চাই না। সরকারকেও আমাদের দিকটা ভাবতে হবে। পরিবহণ শিল্পকে বাঁচাতে হলে সরকারকে ভাড়া বাড়াতেই হবে।’’ পরিবহণ দফতরের এক কর্তার পাল্টা দাবি, ‘‘যাত্রী-সুরক্ষা সব থেকে বড়। সেখানে গাফিলতি বরদাস্ত করা হয় না। নজরদারিও থাকে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

bus fire Kolkata Bus Bus Services Fire incidents
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE