Advertisement
E-Paper

কতটা নিয়ম মানল বাজি বাজার, উঠছে প্রশ্ন

রবিবার কালীপুজো ও দীপাবলির রাতে শব্দদৈত্যের হানায় আক্রান্ত শহরবাসীর অনেকেরই প্রশ্ন, কেন এ দিন ময়দানে বাজির বাজার খুলে রাখতে দিল পুলিশ?

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায় ও কৌশিক ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৯ ০১:৪৪
 ধর্মতলার বাজি বাজারে খোলা কয়েকটি দোকান। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

ধর্মতলার বাজি বাজারে খোলা কয়েকটি দোকান। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

খাতায় কলমে রবিবারেই কালীপুজো এবং দীপাবলি শেষ। তার পরেও সোমবার ময়দানে বাজির বাজার খোলা রইল। ফলে সেখানে বাজি কিনতে জড়ো হলেও ক্রেতারাও।

ঘটনার পরে প্রশ্ন উঠেছে প্রশাসনের নজরদারি নিয়ে। রবিবার কালীপুজো ও দীপাবলির রাতে শব্দদৈত্যের হানায় আক্রান্ত শহরবাসীর অনেকেরই প্রশ্ন, কেন এ দিন ময়দানে বাজির বাজার খুলে রাখতে দিল পুলিশ? উল্লেখ্য, দীপাবলির দিন খাস রাজধানী দিল্লির বহু জায়গাতেই আতসবাজি পাওয়া যায়নি। তা হলে কলকাতায় কালীপুজো, দীপাবলির পরেও বাজি বিক্রি হবে কেন, সেই প্রশ্ন উঠেছে।

লালবাজারের এক কর্তা জানান, প্রতি বার কালীপুজোর পরের দিন দীপাবলি হয়। সেই হিসেবে বাজারের অনুমতি দেওয়া হয়। এ বারে তিথি মেনে কালীপুজোর দিনই দীপাবলি হয়ে গিয়েছে ঠিকই। কিন্তু পুরনো নিয়ম অনুযায়ী বাজি বাজার দু’দিন খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে এ দিনের পরে আর বাজি বিক্রি করতে দেওয়া হবে না।

সোমবার বাজির বাজার খুলে রাখা নিয়ে অনেক বাজি ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, তিথি অনুযায়ী রবিবার দীপাবলি হয়ে গেলেও সোমবার দীপাবলির ছুটি অধিকাংশ জায়গাতেই। তাই বাজির চাহিদা ছিল। সেই কারণেই বাজার বসেছে। তবে বিক্রেতাদের একাংশকে অবশ্য দেখা যায় দুপুরেই তল্পিতল্পা গুটিয়ে স্টলের ঝাঁপ বন্ধ করে দিতে। বাজি ব্যবসায়ী সুদীপ আগরওয়াল বলেন, ‘‘দীপাবলি এবং কালীপুজোর আগেই বাজি বিক্রি হয়। তার পরে বিক্রি হলেও তা খুবই সামান্য। তাই আমি এবং আমার মতো এই বাজারে অংশগ্রহণকারী অনেকেই দোকান বন্ধ করে দিয়েছি।’’ তবে কালীপুজো ও দীপাবলি শেষ হলেও ছটের দিনেও দেদার শব্দবাজি ফাটে প্রতিবারই।

এ দিন সকালে ময়দানের ওই বাজি বাজারে গিয়ে দেখা গেল, মাঠের ভিতরে ইতস্তত বিক্রি করা হচ্ছে তুবড়ি, রংমশাল ফুলঝুরি-সহ বিভিন্ন বাজি। বড়বাজার থেকে আসা ক্রেতা রাহুল সোলাঙ্কি বলেন, ‘‘দীপাবলির পরের দিনেও আমাদের পাড়ায় বাজি পোড়ানো হয়। তবে শব্দবাজি নয়।’’

সারা বাংলা আতসবাজি উন্নয়ন সমিতি-র চেয়ারম্যান বাবলা রায় বলেন, ‘‘সরকার আমাদের দীপাবলির পরেও এক দিন বাজির বাজার করার অনুমতি দিয়েছিল। তাই বাজার রয়েছে। তবে খরচের জন্য অনেক ব্যবসায়ীই এ দিন আর ব্যবসা করতে চাননি।’’

উল্লেখ্য, বাজি বাজার কলকাতা পুলিশের অনুমোদিত হলেও সেখানে নিয়ম ভাঙার অভিযোগ একাধিক বার সামনে এসেছে। কালীপুজোর আগের দু’দিন, অর্থাৎ শুক্র ও শনিবার উত্তর কলকাতার বাজির বাজার থেকেই চোরাগোপ্তা নিষিদ্ধ বাজি বিক্রি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে কালীপুজোর সকালে ওই বাজারে গিয়ে খানিক ঘোরাফেরা করতেই কানে এসেছে এক দোকানদার ও এক ক্রেতার কথোপকথন। দোকানদারের কাছে জনৈক ক্রেতার জিজ্ঞাসা, ‘‘ভাল বাজি কী হবে? উপরে উঠে আলো জ্বলবে।’’ দোকানদারের জবাব, ‘‘সবই ভাল। তবে আপনি কি শেল খুঁজছেন?’’ এ বার ক্রেতার বক্তব্য, ‘‘শেল তো পুলিশ নিষেধ করেছে!’’ এ বার দোকানের এক কর্মচারীর বক্তব্য, ‘‘যারা বারণ করছে, তাদের অনেকেই কিনছে। লাগলে বলুন।’’ এর পরে ওই ক্রেতা আর আপত্তি করেননি। একটু দূরে দাঁড়িয়ে দেখা গেল ওই দোকানের কর্মীটি শেলের বাক্স এনে ক্রেতার ব্যাগে পুরে দিলেন।

সূত্রের খবর, প্রশাসনের ছাড়পত্র পাওয়া বাজি দিয়ে বাজার সাজানো হলেও ব্যবসায়ীদের অনেকেই নিষিদ্ধ বাজি মজুত রেখেছিলেন। চাহিদা অনুযায়ী সে সব পৌঁছে গিয়েছে ক্রেতাদের হাতে। এক বাজি ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘আকাশে উঠে বিভিন্ন নকশা তৈরি করে ওই সব বাজি। ফলে শেলের চাহিদা সব সময়ে থাকে। এ বারেও ছিল।’’ সেই চাহিদা এবং জোগানের ফলাফল যে কী, তা কালীপুজো এবং দীপাবলির রাতে হাড়েহাড়ে টের পাওয়া গেছে। শব্দবাজির দাপটে কান পাততে পারেননি বহু এলাকার লোকজন।

আতসবাজি উন্নয়ন সমিতি-র চেয়ারম্যান বাবলাবাবুর অবশ্য দাবি, ‘‘কেউ তেমন কোনও অভিযোগ জানাননি। তবে নির্ধারিত ডেসিবেলের মধ্যে হলে শেল বিক্রি করা যেতেই পারে।’’

Kali Puja 2019 Firecracker Market Kolkata Police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy