Advertisement
১৪ অক্টোবর ২০২৪
Durga Puja 2023

সরকারি বিধিতে বাড়তি গুরুত্ব শ্রমিক-সুরক্ষায়, কার্যকর হবে তো?

যদিও পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, নিয়ম পালনে ফাঁক দেখা যাচ্ছে বলেই সংশ্লিষ্ট বিধিতে শ্রমিকদের সুরক্ষার বিষয়টি বাড়তি গুরুত্ব পেয়েছে।

An image of workers

ঝুঁকি: কোনও রকম নিরাপত্তার ব্যবস্থা ছাড়াই উঁচু বিজ্ঞাপনী কাঠামোয় কাজ শ্রমিকদের। —ফাইল চিত্র।

দেবাশিস ঘড়াই
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২৩ ০৮:০০
Share: Save:

গত পাঁচ বছরের পরিসংখ্যান বলছে, নির্মাণস্থলে কর্মরত অবস্থায় কলকাতা-সহ এ রাজ্যে একাধিক শ্রমিকের প্রাণহানি হয়েছে। এর মধ্যে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় জলাধারের নির্মাণকাজ চলার সময়ে ভারা ভেঙে পড়ে গিয়ে যেমন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে, তেমনই এ শহরেই কখনও বেসরকারি হাসপাতালে, কখনও নির্মীয়মাণ বাড়িতে কাজ করতে গিয়ে পড়ে মৃত্যু হয়েছে একাধিক শ্রমিকের। আবার গত জুনে গড়িয়াহাটের বহুতলে কাজ করার সময়ে পড়ে গিয়ে একই ভাবে মৃত্যু হয়েছিল এক জনের। নির্মাণস্থলে প্রয়োজনীয় সুরক্ষা-বিধি পালনে গাফিলতি থাকায় দুর্ঘটনার কারণে শ্রমিক-মৃত্যু অব্যাহত বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।

সেই পরিপ্রেক্ষিতেই ঘন বসতিপূর্ণ এলাকায় পুরনো বাড়ি বা নির্মাণ ভেঙে নতুন নির্মাণ করার ক্ষেত্রে অতি সম্প্রতি রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের দেওয়া ১৯ দফার নিয়মবিধিতে শ্রমিকদের নিরাপত্তার দিকটি যে ভাবে গুরুত্ব পেয়েছে, তাকে স্বাগত জানিয়েও অনেকের সংশয়, এই বিধি আদৌ বাস্তবে পালন করা হবে তো?

যদিও পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, নিয়ম পালনে ফাঁক দেখা যাচ্ছে বলেই সংশ্লিষ্ট বিধিতে শ্রমিকদের সুরক্ষার বিষয়টি বাড়তি গুরুত্ব পেয়েছে। যেমন, নির্মাণস্থলে কোনও বিপদ এড়াতে আগাম সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে ওই নির্মাতা সংস্থা, মালিককে কোনও বিশেষ প্রযুক্তি বা যন্ত্র (‘ওয়ার্নিং ডিভাইস’) রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। উপর থেকে কোনও ইট বা সামগ্রী পতনের আশঙ্কার ক্ষেত্রে কর্মরত শ্রমিক আইএস ছাপযুক্ত (আইএস ২৯২৫: ১৯৮৪) সেফটি হেলমেট ব্যবহার করছেন কি না, তা নিশ্চিত করতে হবে নির্মাতাকে। কোনও দেওয়াল, মেঝে, প্লাস্টার ভাঙার সময়ে ইটের টুকরো, ভাঙা প্লাস্টার, ধুলো-সহ একাধিক জিনিস ঢুকে চোখের ক্ষতি আটকাতে কর্মীদের সেলুলয়েড লেন্সের চশমা সরবরাহ করতে হবে।

নির্মাণ ভাঙার সময়ে শ্রমিকদের চামড়া বা রবারের গ্লাভস পরার কথা বলা হয়েছে। ধুলো-দূষণের হাত থেকে শ্রমিকদের স্বাস্থ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করার বিষয়টিও গুরুত্ব পেয়েছে সংশ্লিষ্ট ১৯ দফা বিধিতে। দফতরের এক কর্তা জানাচ্ছেন, যে কোনও উচ্চতার নির্মাণের ক্ষেত্রেই সেফটি বেল্ট বাধ্যতামূলক করতে হবে নির্মাতাকে। তাঁর কথায়, ‘‘প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জাম (ফার্স্ট এড) তো রাখতেই হবে। তা ছাড়া, কোনও রকম দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে সঙ্গে সঙ্গে যাতে চিকিৎসকের সাহায্য পাওয়া যায়, আগাম সেই ব্যবস্থা করে রাখতে হবে। অগ্নি-বিপর্যয় এড়াতেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রাখতে হবে।’’ নিয়মবিধি পালন নিশ্চিত করার জন্য সামগ্রিক কাজ এক জন নথিভুক্ত ও স্বীকৃত নির্মাণবিদের তত্ত্বাবধানে করার কথা বলা হয়েছে।

তবে এক নির্মাণবিদ জানাচ্ছেন, নির্মাণস্থলের শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও সামগ্রিক জীবনের সুরক্ষার জন্য দ্য বিল্ডিং অ্যান্ড আদার কনস্ট্রাকশন ওয়ার্কার্স (রেগুলেশন অব এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড কন্ডিশনস অব সার্ভিস) অ্যাক্ট, ১৯৯৬ এবং ২০০৪-এ এই সংক্রান্ত নিয়ম রয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘তার পরেও ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজ়েশনের সমীক্ষা অনুযায়ী, নির্মাণস্থলে দুর্ঘটনার কারণে ভারতে শ্রমিক-মৃত্যুর সংখ্যা সর্বাধিক। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন নির্মাণস্থলে কমপক্ষে ৩৮টি গুরুতর দুর্ঘটনা ঘটে।’’

নির্মাণস্থলে শ্রমিকদের সুরক্ষার সঙ্গে বিন্দুমাত্র আপস করা উচিত নয় বলে জানাচ্ছেন স্থপতি সুবীর বসু। তাঁর বক্তব্য, এমনিতে শ্রমিকদের সুরক্ষার বিষয়ে আগে থেকেই আইন রয়েছে। নির্মাণস্থলের শ্রমিকদের বাধ্যতামূলক বিমা করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট নির্মাতা সংস্থা বা মালিকের। কিন্তু তার পরেও অনেক নির্মাতা সংস্থা, মালিকই সে নিয়ম মানেন না। তাঁর কথায়, ‘‘মনে রাখতে হবে, শ্রমিকেরা যে কোনও নির্মাণকার্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই শুধুমাত্র আইন খাতায়কলমে থাকলেই হবে না। রুটি-রুজির খোঁজে এসে শুধুমাত্র এক শ্রেণির নির্মাতাদের গাফিলতিতে এক জন শ্রমিকেরও প্রাণহানি কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা যাবে না। প্রয়োজনে সেই নির্মাতা সংস্থার লাইসেন্স বাতিল করা জরুরি। নিদর্শনমূলক শাস্তি না হলে যে আইন রয়েছে, তা বলবৎ করা যাবে না।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Durga Puja Pandals Workers Safety
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE