Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Kolkata East West Metro

‘সাত সাগর তেরো নদী’ পেরিয়ে এল রেললাইন

জাহাজে চেপে জলপথে প্রায় সাড়ে সাত হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর ১৭০০ টন রেললাইন কলকাতায় এসে নেমেছে।

অস্ট্রিয়া থেকে আসা সেই রেললাইন। নিজস্ব চিত্র

অস্ট্রিয়া থেকে আসা সেই রেললাইন। নিজস্ব চিত্র

ফিরোজ ইসলাম
শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০২০ ১০:০০
Share: Save:

যেন সাত সাগর আর তেরো নদী পেরিয়ে আসা। দানিয়ুব নদী, কৃষ্ণসাগর, ভূমধ্যসাগর, নীল নদ, সুয়েজ খাল, লোহিত সাগর, ভারত মহাসাগর, আরব সাগর, বঙ্গোপসাগর— এই দীর্ঘ জলপথ পেরিয়ে অস্ট্রিয়া থেকে কলকাতায় এসেছে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর রেললাইন।

মেট্রো সূত্রের খবর, ভিয়েনার নদী বন্দর থেকে কলকাতা বন্দর। জাহাজে চেপে জলপথে প্রায় সাড়ে সাত হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর ১৭০০ টন রেললাইন কলকাতায় এসে নেমেছে। গঙ্গার নীচে থাকা সুড়ঙ্গে অস্ট্রিয়া থেকে আনা বিশেষ ভাবে নির্মিত ওই রেললাইনের উপরেই ছুটবে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো।

বছর দু’য়েক হতে চলল হাওড়া ময়দান থেকে এসপ্লানেড পর্যন্ত সুড়ঙ্গ খননের কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। মাস খানেক আগে ওই দূরত্বে রেললাইন বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। সে জন্য সুড়ঙ্গের ভিতরে কংক্রিটের স্তর তৈরি করা হয়েছে। ওই কংক্রিটের উপরে বসছে অস্ট্রিয়া থেকে আনা রেললাইন। রেললাইন পাতার বরাতপ্রাপ্ত একটি বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে ওই কাজ হচ্ছে।

কিন্ত সুদূর অস্ট্রিয়া থেকে রেললাইন আনা হল কীসের জন্য?

মেট্রো সূত্রের খবর, সব ধরনের যাত্রিবাহী ট্রেন চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো নির্মাণ এবং প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ইউরোপের দেশগুলি সব সময়েই এগিয়ে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মধ্যে অস্ট্রিয়ার রেললাইন তৈরির উপযোগী ইস্পাত উৎপাদনে বিশেষ দক্ষতা রয়েছে। মেট্রোর কাজে সে জন্যই অস্ট্রিয়া থেকে রেললাইন আমদানি করা হচ্ছে। বিশেষ প্রযুক্তিতে তৈরি ওই রেললাইন ট্রেন চলার ফলে ক্রমাগত ঘর্ষণ এবং তাপ উৎপাদনের জেরে ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। সাধারণ রেললাইনের চেয়ে ওই লাইনের চাপ সহ্য করার ক্ষমতা অনেকটাই বেশি।

মালগাড়ির ক্ষেত্রে রেললাইনের উপরে ভার বেশি পড়ে। তার তুলনায় মেট্রো অনেকটাই হাল্কা হয়। তবে, মেট্রোর ক্ষেত্রে খুবই অল্প সময়ের ব্যবধানে অনেক বেশি সংখ্যায় ট্রেন চলায় লাইনের ঘর্ষণ এবং তাপ উৎপাদনের মাত্রা অনেকটাই বেশি হয়। পাশাপাশি এক বার রেললাইন পাতার পরে মেট্রোর ক্ষেত্রে কয়েক বছরের ব্যবধানে তা বদলের সুযোগ খুব কম। মাটির উপরে চলা ট্রেনের ক্ষেত্রে ওই কাজ করা তুলনামূলক ভাবে সহজ। এই সব সমস্যার কথা মাথায় রেখেই নিদেনপক্ষে ১০০ বছর আয়ুর কথা মাথায় রেখে মেট্রোর লাইন পাতা হয়।

বিশেষ প্রয়োজনের কথা ভেবে মেট্রোর জন্য ব্যবহৃত রেললাইনের মাথা (যেখানে ট্রেন চলে) অতিরিক্ত মজবুত করে তৈরি করা হয়। যাতে বার বার ট্রেন চললেও তার মধ্যে কোনও বিকৃতি না আসে। সাধারণ লাইনের চেয়ে পীড়ন সহ্য করার ক্ষমতা ওই লাইনের অনেকটাই বেশি।

আধিকারিকেরা জানান, নির্দিষ্ট গুণমানের কথা ভেবেই অস্ট্রিয়া থেকে ওই রেললাইন আমদানি করা হয়েছে। এক একটি লাইনের দৈর্ঘ্য প্রায় ১২০ ফুটের মতো। ক্রোমিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ-সহ নানা উপকরণ ওই ইস্পাত তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। সাধারণ রেললাইনের চেয়ে দামে অনেকটা বেশি হলেও তার কার্যকারিতার কথা মাথায় রেখেই ওই রেললাইন বেছে নেওয়া হয়েছে বলে খবর।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মেট্রোর এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর ক্ষেত্রে সেরা প্রযুক্তি এবং সেরা উপকরণ ব্যবহার করার চেষ্টা হচ্ছে। যাতে পৃথিবীর অন্য শহরের তুলনায় কোথাও পিছিয়ে না থাকে এই মেট্রো।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kolkata East West Metro Railway Track Vienna
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE