জেলে বসেই বাইরে অপরাধের সাম্রাজ্য চালাতে চেয়েছিল বিহারের কুখ্যাত দুষ্কৃতী রাকেশ দাস। এ রাজ্যে সেই কাজের মাথা হিসাবে সে বেছেছিল বরাহনগরে সোনার দোকানে ডাকাতি ও খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত সঞ্জয় মাইতিকে। চুক্তি হয়েছিল, প্রতিটি কাজের জন্য সঞ্জয় নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা দেবে রাকেশকে। বদলে ডাকাতিতে ভিন্ রাজ্যের দুষ্কৃতী সরবরাহ করবে রাকেশ। সেই মতো বরাহনগরে ডাকাতি ও খুনের ঘটনায় বিহারের ওই দুষ্কৃতীর বাবাকে সাত লক্ষ টাকা দিয়েছিল সঞ্জয়।
বরাহনগরের শম্ভুনাথ দাস লেনে স্বর্ণ ব্যবসায়ী শঙ্কর জানাকে খুন করে গয়না লুটের ঘটনার তদন্তে এমনই তথ্য উঠে এসেছে। ঘটনার নেপথ্যের কাহিনি জানতে প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারে গিয়ে রাকেশকে জিজ্ঞাসাবাদও করেছেন ব্যারাকপুর সিটি পুলিশের তদন্তকারীরা। অন্য দিকে, বিহার থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে রাকেশের বাবা রঞ্জিত দাস ও ভাই প্রিন্স দাসকে। সঞ্জয়কে সাহায্য করতে ভাই ও তার দুই বন্ধু, চন্দন মণ্ডল এবং প্রিন্স কুমারকে পাঠিয়েছিল রাকেশ। আর, গত ৪ অক্টোবর ডাকাতির পরে রাতে টাকা নিতে কলকাতায় এসেছিল রঞ্জিত। এ রাজ্যে অপরাধের সাম্রাজ্য চালাতে সঞ্জয়কে বেছে নিলেও তাকে সবটা ছেড়ে দেয়নি রাকেশ। বরং নিজের বাবা ও ভাইকেও রেখেছিল। কারণ, রাকেশ তার অবর্তমানে ভাই প্রিন্সকে সব কিছুর দায়িত্বে রাখতে চেয়েছিল।
গত ৪ অক্টোবর ‘অপারেশন’ শেষ করে প্রিন্স দাস, চন্দন ও প্রিন্স কুমার প্রথমে কোন্নগর গিয়েছিল। সেখান থেকে ট্রেনে হাওড়ায় গিয়ে বিহার ও ঝাড়খণ্ডে চলে যায় তারা। সঞ্জয় যায় বেদিয়াপাড়ার বাসিন্দা পাঁচু সামন্তের বাড়িতে। সোনার গয়না রেখে পাঁচু ১০ লক্ষ টাকা দিয়েছিল সঞ্জয়কে। সেই টাকা সঞ্জয় তার শাগরেদ সুরজিৎ শিকদারকে দেয়। নারকেলডাঙার বাসিন্দা সুরজিতের সঙ্গে ওই দিন রাতে বিহার থেকে এসে দেখা করে রঞ্জিত। রঞ্জিতকে সাত লক্ষ টাকা দেয় সুরজিৎ। সেই টাকা নিয়ে বিহারে ফিরে ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা প্রিন্স কুমার ও চন্দন মণ্ডলকে এক লক্ষ টাকা করে দেয় রঞ্জিত। বাকি পাঁচ লক্ষ টাকা ছিল রাকেশের। রঞ্জিত ও তার ছোট ছেলে প্রিন্সকে গ্রেফতারের পাশাপাশি ৪ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তবে, এই কাজের জন্য প্রিন্স টাকা নেয়নি। কারণ, ডাকাতির সময়েই সে নিজের পকেটে গয়না ভরে নিয়েছিল।
পুলিশ জানায়, রাকেশ ও তার ভাই প্রিন্স ঝাড়খণ্ডে চন্দনদের বাড়ির কাছে ভাড়া থাকত। সেই সূত্রে তাদের পরিচয়। তাই জেলবন্দি দাদার থেকে সুপারি আসতেই চন্দন ও প্রিন্স কুমারকে ডেকে নেয় প্রিন্স দাস। এক ব্যক্তির মাধ্যমে কলকাতায় এসে সঞ্জয়ের সঙ্গে দেখা করে তিন দুষ্কৃতী। সঞ্জয় ও রাকেশের ভাই পুরো অপারেশনের ছক সাজিয়েছিল। তাতে সুরজিৎ ঢোকার কত ক্ষণ পরে বাকিরা ঢুকবে, তা-ও স্থির করা হয়। ব্যারাকপুরের নগরপাল মুরলীধর শর্মা বলেন, ‘‘সাত জন ধরা পড়েছে। এক জনের খোঁজ চলছে। যে তিন দুষ্কৃতীকে এখানে এনেছিল।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)