ফাইল চিত্র
কলকাতায় ঢুকে ভরত আস্তানা গেড়েছিল বিমানবন্দরের কাছে একটি হোটেলে। সেখানে ছিলেন তার স্ত্রীও। তবে পঞ্জাবের দুই দুষ্কৃতী জয়পাল সিংহ ভুল্লার ও যশপ্রীত খারার সেখানে ছিল না বলেই জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা। রাজ্য এসটিএফ সূত্রের খবর, ২০ মে রাজ্যে ঢোকার পর জয়পাল ও যশপ্রীতকে বিধাননগরের অন্য একটি আস্তানায় রাখা হয়েছিল। ২৩ মে তারা নিউ টাউনের ফ্ল্যাটে যায়। দুই দুষ্কৃতী বিধাননগরে কোন ঠিকানায় ছিল, তা নিয়েও খোঁজ শুরু করেছেন গোয়েন্দারা।
গোয়েন্দারা আরও জানান, দুই দুষ্কৃতীকে নিয়ে গাড়িতে চেপে কলকাতায় এসেছিল ভরত। তবে তার স্ত্রী এসেছিলেন বিমানে চেপে। ওই গাড়িটি মাস দুয়েক আগে এই রাজ্য থেকেই কেনা হয়েছিল। ইতিমধ্যেই জানা গিয়েছে, পঞ্জাব পুলিশের এক কর্মীর পরিচয়পত্র দেখিয়ে বিভিন্ন রাজ্যের সীমানা পেরিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। অমরজিৎ সিংহ নামে ওই কনস্টেবলকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে পুলিশ। কলকাতায় ভরত ও জয়পালদের ডেরা নিয়েও খোঁজ শুরু হয়েছে। ভরত কলকাতায় এলে বিমানবন্দরের কাছে ওই হোটেলেই উঠত। সেই হোটেলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছেন তদন্তকারীরা। পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, এই তদন্তে বিধাননগর পুলিশের দুই সদস্যের গোয়েন্দা দল শীঘ্রই পঞ্জাবে যেতে পারে। সেখানে এই মামলায় ধৃত ভরত ও সুমিতকে ইতিমধ্যেই জেরা শুরু করেছে পঞ্জাব পুলিশ।
পঞ্জাবের দুই দাগি দুষ্কৃতীর কলকাতায় আশ্রয় নেওয়ার পিছনে নানা তত্ত্ব উঠে আসছে। এসটিএফের একটি সূত্রের দাবি, এই রাজ্য থেকে ভুয়ো পাসপোর্ট নিয়ে বাংলাদেশ হয়ে তাইল্যান্ড পাড়ি দেওয়ার ছকও কষেছিল জয়পাল ও যশপ্রীত। এই রাজ্যে বসে কী ভাবে ভুয়ো পাসপোর্ট তৈরি করা হত, তা নিয়েও তদন্তকারীদের মনে প্রশ্ন রয়েছে। ভরত ও সুমিতকে জেরা করে সে ব্যাপারে সূত্র পেতে চাইছেন তাঁরা। অনেকেই মনে করছেন, এই সূত্র ধরে এগোলে এ রাজ্যে ভুয়ো পাসপোর্ট চক্রের হদিসও মিলতে পারে।
নিউ টাউনের ওই ফ্ল্যাট থেকে এক বাক্স নম্বরহীন সিম কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে। তার মধ্যে একটি সিম ছিল পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলার এক ব্যক্তির নামে। পুলিশ সূত্রের দাবি, ভরত ও সুমিত মিলে ভিআইপি নম্বরের সিম কার্ডের চোরা ব্যবসা করত। ২০১৫ সাল থেকেই এই কাজে অংশীদার তারা। সুমিত কুমারের নামেই নিউ টাউনের ফ্ল্যাট ভাড়া নেওয়া হয়েছিল। ফলে এই নম্বরহীন সিম কার্ড ভরত ও সুমিতই সরবরাহ করেছিল বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।
তবে ভরত ও দুই দুষ্কৃতী কলকাতায় ঘাঁটি গাড়ার সময়ে ভরতের স্ত্রীও কেন কলকাতায় এলেন, তা নিয়েও পুলিশ খোঁজ করছে। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, ওই হোটেল থেকেই ভরতের স্ত্রী চারু মার্কেট এলাকায় তাঁর মা-বাবার কাছে গিয়েছিলেন।
পুলিশ সূত্রের দাবি, নিহত দুষ্কৃতীদের ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হওয়া পাঁচটি অস্ত্রের মধ্যে তিনটি পাকিস্তানে তৈরি। বাকি দু’টির একটি চেক প্রজাতন্ত্রের এবং অন্যটি আমেরিকার। এসটিএফ সূত্রের দাবি, পাকিস্তানে তৈরি অস্ত্র থেকেই সে দিন দু’জনে চার রাউন্ড গুলি চালিয়েছিল। ফরেন্সিক পরীক্ষায় নিহতদের হাতে বারুদের দাগও মিলেছে। পুলিশের তরফে ৩৬ রাউন্ড গুলি চালানো হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে দাবি করা হয়েছে।
ঘটনাচক্রে, সম্প্রতি পঞ্জাব পুলিশ বিপুল অস্ত্র বাজেয়াপ্ত করেছে। সেই অস্ত্রের সঙ্গে নিহত দুই দুষ্কৃতী এবং ভরত-সুমিতের যোগ রয়েছে কি না, তা দেখা হচ্ছে। সেই সূত্রে এর আগে জয়পাল ও যশপ্রীত কিংবা তার দলবল কলকাতায় এসেছিল কি না, কিংবা স্থানীয় কোনও চক্রের সঙ্গে এদের যোগ রয়েছে কি না তাও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy