দিল্লির শাহিনবাগের প্রতিবাদ। ছবি- এপি।
প্রীতীশের মতে, এর ফলে, জাতপাতের ভোটের শতাংশের হিসাবটা এলোমেলে হয়ে যায়। কমে, বাড়ে। ধর্ম নিয়ে রাজনীতিতে যেটা একেবারেই হয় না। কারণ, কোনও ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে সেই বিভাজনরেখা থাকে না বললেই চলে। ধর্মের নামে সকলকে একই দিকে ছোটানো যায়। একবগ্গা। যুক্তি-তক্কোর পরোয়া না করে। খ্রিস্টানে বড়জোর দু’টো ভাগ। ক্যাথলিক, প্রোটেস্টান্ট। ইসলামেও তাই। শিয়া ও সুন্নি। হিন্দুদের মধ্যে সেই বিভাজনরেখাটা যদিও বা কিছু থেকে থাকে, রেষারেষি, মারামারি, কাটাকাটি নেই অন্তত।
হিন্দুত্বের ছাতাটা ক্রমশই বড় হচ্ছে!
হিন্দু বলে বোঝাতে হিন্দুত্বের ছাতাটাও কি বড় করা না হচ্ছে না ইচ্ছাকৃত ভাবে? উত্তরোত্তর।
প্রীতীশ মনে করেন, সেটা খুবই দৃষ্টিকটূ ভাবে হচ্ছে এখন ভারতে। বিভিন্ন তফশিলি জাতিকেও হিন্দু বলে চালানো হচ্ছে। শিখ, বৌদ্ধ, জৈনদেরও আনা হচ্ছে হিন্দু ছাতার তলায়! এখনও ছাতার বাইরে থাকা তফশিলি জাতিগুলিকে সেই ছাতার তলায় আনারও চেষ্টা চলছে। অথচ, তফশিলি জাতির মানুষকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে উচ্চ বর্ণের হিন্দুদের হাতে নিগৃহীত, অত্যাচারিত হতে হচ্ছে।
হিন্দুইজমের ‘ওয়েপনাইজ্ড ভার্সান’ মোদীর হিন্দুত্ব!
প্রীতীশের কথায়, ‘‘ভারতে হিন্দুত্ব বলে এখন যেটাকে চালানো হচ্ছে, তার সঙ্গে হিন্দুইজম বা হিন্দু ধর্মের কোনও মিল তো দূরের কথা, যোগাযোগও নেই বিন্দুমাত্র। নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহের হিন্দুত্ব আসলে ওয়েপনাইজ্ড ভার্সান অফ হিন্দুইজম। আর সেটাকে কার্যকর করতে গিয়ে রাজনীতির দেদার দুর্বৃত্তায়ন (‘লুম্পেনাইজেশন’) হচ্ছে। আর তাকে বৈধতা দেওয়া হচ্ছে (‘লেজিটিমাইজ্ড’)। এটা হাস্যকর। এখন হিন্দু ও মুসলিমের মধ্যে কাটাকাটি, খুনোখুনির যত ঘটনা ঘটে চলেছে, দেশভাগের ঠিক পরেও সেই ভয়াবহতা ছিল না। থাকলে মুসলিমরা কবেই ভারত ছেড়ে পাকিস্তানে চলে যেত! বরং এ দেশে মুসলিমরা স্বাধীনতার পর রাজখাতিরই পেয়েছেন। এখনও পান, সেটা নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহের পছন্দ না-ও হতে পারে।’’
আরও পড়ুন- ‘শিল্পী, বিজ্ঞানী, অধ্যাপকরা মুখ ফেরাচ্ছেন বিজেপি থেকে’, আড্ডায় একমত তিন নন্দী
আরও পড়ুন- সিএএ নিয়ে বইমেলার অশান্তি আঁচ ছড়াল বিধাননগর থেকে যাদবপুর
প্রীতীশ মনে করেন, ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করতে নামলে পিছনে সমর্থনের একটা সুন্দর ইজিচেয়ার থাকে। যেটা মট করে ভেঙে যায় না। তবে এর অত্যন্ত বিপজ্জনক দিকটা হল, এতে দেশের অভ্যন্তরীণ ক্রেতাবাজারটা খণ্ডবিখণ্ড হয়ে যায়। তার ফলে, বিনিয়োগে উৎসাহ হারিয়ে ফেপেলেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। তাঁর কথায়, ‘‘সেটা হতে শুরুও করেছে। বিদেশি বিনিয়োগ বাড়া তো দূরের কথা, বরং কমছে।’’
বিকল্প জোট মানেই তো ঘোঁট! তা হলে?
বিকল্পের কথা ভাবতে বসলেই তো ভোটারদের স্মৃতিতে আসে কেন্দ্রে কোনও একটা দুর্বল সরকারকে ক্ষমতায় বসাতে হবে। যার মাথায় থাকবে কংগ্রেস। কিন্তু তাকে প্রায় পুরোটাই নির্ভর করে থাকতে হবে জোটের (‘কোয়ালিশন’) শরিক দলগুলির উপর। যাদের অনেকগুলিই আঞ্চলিক। তাদের দর কষাকষির ফলে জোট সরকারটা দুর্বল হয়ে থাকবে সব সময়। আজ এক জন প্রধানমন্ত্রী তো কাল অন্য জন। ‘আয়ারাম গয়ারাম’ সরকার!