Advertisement
১১ মে ২০২৪
Alapan Bandyopadhyay

আলাপনের সঙ্গে যা হল তা শুধু অশোভনই নয়, সম্পূর্ণ বেআইনি

সন্দেহ হয় যে কেন্দ্র-রাজ্যের মনোমালিন্যের দায় চাপিয়ে দেওয়া হল আলাপনের উপর। এ রকম ঘটনা কোনও দিন দেখব তা ভাবতেও পারিনি।

আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় ও প্রসাদরঞ্জন রায়।

আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় ও প্রসাদরঞ্জন রায়।

প্রসাদরঞ্জন রায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০২১ ১৮:৩৩
Share: Save:

বাংলা একটি প্রবাদ আছে— রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয়, উলুখড়ের প্রাণ যায়। আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে সম্প্রতি যে ঘটনাটি ঘটেছে বা এখনও ঘটে চলেছে, তা নিয়ে এই প্রবাদটিই মাথায় চলে এল।

প্রথমেই বলি, কোনও রাজনৈতিক আলোচনা আমার উদ্দেশ্য নয়। ৪১ বছর সরকারের সঙ্গে নানা কাজ করে কেন্দ্র-রাজ্য সঙ্ঘাতের বহু ঘটনা আমার দেখা বা জানা আছে। কিন্তু সেই সঙ্ঘাতের সঙ্গে কোনও উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মচারীর জড়িয়ে পড়ার (বা তাঁকে জড়িয়ে দেওয়ার) মতো ঘটনা আমার জানা নেই।

আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় আমার অনুজপ্রতিম এবং দীর্ঘ দিন তাঁকে বেশ কাছ থেকেই দেখেছি। এ রকম শান্ত, বিনয়ী, বুদ্ধিমান ও পরিশ্রমী মানুষ সরকারি চাকরিতে কমই দেখা যায়। সোমবার, ৩১ মে তাঁর চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার কথা। খবরে দেখেছি রাজ্য সরকার তাঁর চাকরির তিন মাসের মেয়াদ বাড়াতে চেয়েছিল, মুখ্যসচিব হিসেবে এ রাজ্যে কোভিড অতিমারি সামলানোর কাজে এবং ঘূর্ণিঝড় বিধ্বস্ত এলাকাগুলোর পুনর্গঠনে নেতৃত্ব দেবার জন্য। খবরে এ-ও দেখেছি যে ভারত সরকার তাঁর কার্যকালের মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাবে সম্মতি জানায় এবং সম্ভবত ২৫ মে এ বিষয়ে আদেশনামা জারি হয়। এ ঘটনাটি বিরল বটে, কিন্তু অনেক রাজ্যেই এ রকম ঘটনা আগে ঘটেছে (পশ্চিম বাংলায় খুব কম) এবং সব কিছুই ঘটেছে ভারত সরকারের বিধি অনুসারে।

এর পর ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী সময়ে যা ঘটেছে তা প্রায় সকলেই দেখেছেন। এই পরিস্থিতিতে অন্য কিছু করা সম্ভব ছিল কি না তা-ও আমার আলোচ্য নয়।

এর পরে কী ঘটল? আলাপনকে ৩১ মে দিল্লিতে প্রশাসন মন্ত্রকে হাজির হতে বলা হল। রাজ্য আর কেন্দ্রের সঙ্গে আইএএস ইত্যাদি কৃত্যকের অফিসারদের সম্পর্ক বেঁধে দেওয়া আছে কয়েকটি বিধিতে। আইএএস অফিসাররা রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকারে (এমনকি ভিন্ন রাজ্য সরকারেও) কাজ করতে পারেন। কোনও কেন্দ্রীয় পদ খালি হলে (বা খালি হওয়ার আগে) কেন্দ্র রাজ্য সরকারকে জানিয়ে দেয় এবং রাজ্য প্রয়োজনীয় সিনিয়রিটির অফিসারদের সম্মতি জেনে, রাজ্য সরকারের মত সমেত তা দিল্লিকে জানায়। তার পর আদেশনামা বেরোয় এবং সেই অফিসারকে দিল্লিতে যোগ দিতে বলা হয়।

এ ক্ষেত্রে তার কিছুই হয়নি, এমনকি কোন পদে যোগ দিতে হবে সে রকম আদেশনামাও বেরোয়নি। কেবল বলা হয়েছে আলাপন যেন ৩১ মে সকাল ১০টার মধ্যে দিল্লির প্রশাসন মন্ত্রকে যোগ দেন। লক্ষণীয় হল, আদেশনামার শেষে যে বিধিটি জুড়ে দেওয়া হয়েছে, তাতে বলা আছে যে রাজ্য আর কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে মতপার্থক্য থাকলে কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তই বহাল থাকবে। কিন্তু যে বদলির আদেশ বেরোয়নি, যেখানে কোনও পদের উল্লেখই নেই, সেখানে এই বিধি প্রযোজ্যই নয়। আদেশনামাটি জারি হয় ২৮ মে, সম্ভবত সন্ধ্যায়। তার পরের ২ দিন অর্থাৎ ২৯ এবং ৩০ মে ছুটি (জরুরি সরকারি কাজ ছাড়া)।

অবশ্যই ৩১ মে আলাপনের স্বাভাবিক কর্মজীবনের শেষ। পরবর্তী তিন মাসের মেয়াদ বৃদ্ধি কেবল পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব হিসেবে এবং এই সর্বশেষ আদেশনামার পরে এটি চালু থাকবে কি না আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। এ-ও লক্ষণীয় যে দিল্লির কেবল প্রশাসন মন্ত্রক নয়, অধিকাংশ মন্ত্রকের সচিবরাই পদমর্যাদায় আলাপনের সমান কিংবা তার নীচে।

সব কিছু দেখে এই সিদ্ধান্তে আসতেই হল যে, এই আদেশনামাটি কেবল অশোভন নয়, সম্পূর্ণ বেআইনি। কারণ বদলির কোনও নিয়মকানুনই এ ক্ষেত্রে মানা হয়নি। সন্দেহ হয় যে কেন্দ্র-রাজ্যের মনোমালিন্যের দায় চাপিয়ে দেওয়া হল আলাপনের উপর। এ রকম ঘটনা কোনও দিন দেখব তা ভাবতেও পারিনি।

(লেখক অবসরপ্রাপ্ত আইএএস এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রাক্তন অতিরিক্ত মুখ্যসচিব)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Alapan Bandyopadhyay Prasad Ranjan Roy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE