আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং হত্যার প্রায় ১১ মাস পরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে চাইল মৃতার পরিবার। মঙ্গলবার এই মর্মে শিয়ালদহ আদালতে আবেদন করেন মৃতার পরিবারের আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি এবং অমর্ত্য দে। যদিও তাতে একসঙ্গে আপত্তি জানিয়েছেন রাজ্য, টালা থানার তৎকালীন ওসি অভিজিৎ মণ্ডল এবং আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ। রাজ্যের যুক্তি, আরজি কর মামলা এখনও হাই কোর্টে বিচারাধীন। তাই আপাতত ঘটনাস্থল পরিদর্শনে কারও যাওয়ার অনুমতি নেই। যদিও সিবিআই জানিয়েছে, মৃতার পরিবারের আবেদনে আপত্তি নেই তাদের।
মঙ্গলবার শিয়ালদহের অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট (এসিজেএম) অরিজিৎ মণ্ডলের এজলাসে ওঠে মৃতার পরিবারের মামলা। এর আগে আর জি কর কাণ্ডের ঘটনাস্থলে যাওয়ার আর্জি জানিয়ে কলকাতা হাই কোর্টে গিয়েছিলেন নির্যাতিতার কৌঁসুলি ফিরোজ এডুলজি। তবে ওই সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব শিয়ালদহ কোর্টকেই দেয় উচ্চ আদালত। মঙ্গলবার নির্যাতিতার পরিবারের আইনজীবী কৌঁসুলি এডুলজি এবং অমর্ত্য দে জানান, তাঁরা হাসপাতাল ও ঘটনাস্থল ঘুরে দেখতে চান। রাজ্যের তরফে আপত্তি জানানো হলে মৃতার পরিবারের আইনজীবীরা বলেন, সেমিনার রুম বাদ দিয়েই তাঁরা আরজি কর ঘুরে আসবেন। আবেদনে তাঁরা এ-ও জানান, কলকাতা পুলিশের তদন্তে যে ত্রুটি ছিল বলেই হাই কোর্ট এই মামলার তদন্তভার সিবিআইকে দিয়েছে। এখন পরিবার দেখতে চায় কী হয়েছিল ঘটনাস্থলে।
রাজ্যের আইনজীবী শীর্ষেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, এতে তাঁদের আপত্তি আছে। তিনি সওয়ালে বলেন, হাই কোর্টে তদন্ত সম্পর্কিত শুনানি বাকি। এমতাবস্থায় ঘটনাস্থল ঘুরে দেখার অধিকার কারও নেই। এই ধরনের আবেদন গ্রহণযোগ্য নয়। তা ছাড়া আবেদনে স্পষ্ট নয়, কোথায় কী ঘুরে দেখতে চান আবেদনকারীরা। তিনি এ-ও জানান, পরিবারই (মৃতের) সিবিআই তদন্তে ত্রুটি রয়েছে বলে দাবি করেছে। তাই পুনর্তদন্তের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সুতরাং ওই আবেদনে বাতিল করা হোক।
রাজ্যের সুরে সুর মিলিয়েছেন আরজি কর কাণ্ডের সময়কার ওসি অভিজিৎ এবং মেডিক্যাল কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ সন্দীপের আইনজীবীও। উল্লেখ্য, আর জি কর কাণ্ডে প্রমাণ লোপাটের অভিযোগে ধৃত সন্দীপ এবং অভিজিৎকে জামিন দিয়েছে আদালত। কিন্তু দুর্নীতি মামলায় এখনও জেল হেফাজতে রয়েছেন সন্দীপ। অভিজিতের আইনজীবী জানান, তদন্ত এখনও চলছে। হাই কোর্টে পুনরায় তদন্তের আবেদনের শুনানি বাকি। তাঁদের আপত্তি রয়েছে এই (পরিবারের) আবেদনে। সন্দীপের আইনজীবী জোয়েভ রউফ যুক্তি দেন, নিম্ন আদালত এই আবেদন শুনতেই পারে না। একই সঙ্গে তাঁর দাবি, যদি আদালত এই আবেদনে অনুমোদন দেয়, সে ক্ষেত্রে গোটা প্রক্রিয়ার যেন ভিডিয়োগ্রাফি হয়।
আরও পড়ুন:
পরিবারের আইনজীবী পাল্টা প্রশ্ন তোলেন আদালতে। আইনজীবী এডুলজিদের প্রশ্ন, রাজ্য কী লুকোতে চাইছে? কেন তারা আপত্তি জানাচ্ছে? সিবিআই তদন্ত করছে। তারা কোনও আপত্তি জানায়নি। তা হলে রাজ্যের আপত্তি কোথায়?
বস্তুত, সিবিআইয়ের তরফে আইনজীবী আদালতকে জানিয়েছেন, শুধু সেমিনার রুম ঘুরে দেখায় আপত্তি রয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের। আদালত পরিবারের আবেদন মঞ্জুর করতে চাইলে করতে পারে। যার প্রেক্ষিতে মামলাকারীর পক্ষে আইনজীবী জানান, নির্যাতিতার পরিবারের জানার অধিকার রয়েছে যে, সঠিক তদন্ত হচ্ছে কি না।
সমস্ত পক্ষের সওয়াল শোনার পর আদালত জানিয়েছে, মামলার পরবর্তী শুনানি। আগামিকালই নির্দেশ দিতে পারেন বিচারক।