হাওড়া স্টেশন চত্বরে পড়ে রয়েছে ব্যবহৃত পিপিই। ফাইল চিত্র
করোনা সংক্রমণ এড়াতে সকলেই পরছেন মাস্ক। সংক্রমিতের সংস্পর্শে আসার আশঙ্কা থাকলে পরা হচ্ছে পিপিই। সংক্রমণ এড়াতে এ ছাড়াও রয়েছে গ্লাভস, টুপি। কিন্তু অসচেতন ভাবে এ সব থেকেই সংক্রমণ ছড়াচ্ছে না তো?
প্রতিদিন যে হারে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে তাতে এই প্রশ্নই বড় হয়ে উঠছে, মানছেন চিকিৎসকেরা। তাঁদের আশঙ্কা, যত্রতত্র মাস্ক, টুপি, গ্লাভস ও পিপিই ফেলে দিয়ে মানুষ নিজের অজান্তে সংক্রমণ ছড়াচ্ছেন। অভিযোগ, কয়েক দিন ব্যবহারের পরে অনেকেই মাস্ক, গ্লাভস যেখানে সেখানে ফেলে দিচ্ছেন। এমনকি ময়দান, হাওড়া স্টেশন চত্বর এবং বিমানবন্দরেও দেখা গিয়েছে সেই ছবি। চিকিৎসকদের বড় অংশ এই প্রবণতাকেই সংক্রমণ ছড়ানোর একটি কারণ মনে করছেন।
সংক্রমণ রুখতে বিভিন্ন পদ্ধতির কথা বার বার প্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু মাস্ক, গ্লাভস বা পিপিই কী ভাবে নষ্ট করতে হবে তা নিয়ে সচেতন করা হচ্ছে না, এমনই অভিযোগ উঠছে। পিপিই নিয়ে কী ভাবে সচেতন থাকবেন, জানাচ্ছেন এসএসকেএমের শল্য চিকিৎসক দীপ্তেন্দ্র সরকার। তাঁর কথায়, ‘‘করোনা রোগীর সংস্পর্শে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলেই পিপিই পরা হয়। তাই সেটি নষ্ট করতে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে। এটি পরার সময় থেকেও বেশি সতর্কতার সঙ্গে নিয়ম মানতে হয় খোলার সময়ে।” তিনি জানান, প্রথমত, পিপিই পরা ও খোলার জন্য নির্দিষ্ট ঘর প্রয়োজন। সেটি একাই পরতে-খুলতে হবে। খোলার সময়ে গ্লাভস পরতে হবে। খোলার প্রতি ধাপে হাত স্যানিটাইজ় করতে হবে। শুধু তাই নয়, কর্মস্থলেই নিয়ম মেনে পিপিই খুলে হলুদ রঙের বিনে তা ফেলতে হবে।
রক্ষাকবচ নষ্টের নিয়ম
পিপিই ফেলতে
•কর্মক্ষেত্রে ব্যবহারের পরে নিয়ম মেনে সেখানেই ফেলে দিন।
•পৃথক ঘরে গ্লাভস পরে একাই খুলুন।
•খোলার প্রতি ধাপে হাত স্যানিটাইজ় করুন।
•উল্টিয়ে মুড়ে ছোট করে তা হলুদ ডাস্টবিনে ফেলুন।
মাস্ক-গ্লাভস ফেলতে
•ফুটন্ত বা সাবান জলে ২০ মিনিট ভেজান বা সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইট ব্যবহার করুন।
•হলুদ প্লাস্টিকে ভরে মুখ বেঁধে ডাস্টবিনের কাছে রাখুন।
•কিছু দিন ঘরে ওই বর্জ্য জমালেও গৃহস্থালি বর্জ্যের সঙ্গে রাখবেন না।
পিপিই-র ক্ষেত্রে অবশ্যই অতিরিক্ত সতর্ক থাকা উচিত, বলছেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদারও। তাঁর পরামর্শ, ‘‘পিপিই উল্টিয়ে ছোট করে মুড়ে নিয়ে হলুদ রঙের নির্দিষ্ট বিনে ফেলতে হবে। যাতে রাজ্য পরিবেশ দফতরের তালিকাভুক্ত চিকিৎসা বর্জ্য সংগ্রহকারী সংস্থা সেটি নিয়ে যেতে পারে।’’
যত্রতত্র মাস্ক-গ্লাভস পড়ে থাকার ছবি আরও সাঙ্ঘাতিক। সাধারণ মানুষের ব্যবহৃত সেই সব বাতিল জিনিস স্থান পাচ্ছে ডাস্টবিন, নর্দমায়। চিকিৎসকদের বক্তব্য, ওই মাস্ক বা গ্লাভস কোনও উপসর্গহীন কোভিড পজ়িটিভ রোগীর ব্যবহৃত হতেই পারে। তেমন হলে যে সাফাইকর্মী ওই বর্জ্য তুলছেন তিনিও সংক্রমিত হতে পারেন।
আরও পড়ুন: সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী, আতঙ্ক আলিপুরের দুই আদালতে
দীপ্তেন্দ্রবাবুর মতে, স্পষ্ট নির্দেশিকা না থাকলেও মাস্ক-গ্লাভস গরমে জল কিংবা সাবান জলে অন্তত ২০ মিনিট ভিজিয়ে প্লাস্টিকে ভরে পুরসভার ডাস্টবিনে ফেলা উচিত। ফুটন্ত গরম জলে ভিজিয়ে রাখলে ভাইরাস বাঁচতে পারবে না বলেই মত বক্ষরোগ চিকিৎসক ধীমান গঙ্গোপাধ্যায়েরও। তিনি বলছেন, ‘‘ব্যবহৃত গ্লাভস বা মাস্ক ফেলার জন্য নির্দিষ্ট বালতি থাকা উচিত। তা যেন গৃহস্থালির বর্জ্যের সঙ্গে কোনও ভাবেই মিশে না যায়। এক শতাংশ সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইট দিয়ে স্যানিটাইজ় করেও মাস্ক বা গ্লাভস ফেলা যেতে পারে।’’
বাড়িতে ব্যবহৃত চিকিৎসা-বর্জ্য অর্থাৎ মাস্ক, গ্লাভস ফেলার জন্য হলুদ রঙের প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার করতে বলছেন অরুণাংশুবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘চিকিৎসা বর্জ্য ফেলার জন্য মাস্ক, গ্লাভস একটি ঠোঙায় ভরে রাখতে হবে। পরে ঠোঙাগুলি হলুদ ব্যাগে ভরে নিন। কয়েক দিন তাতে চিকিৎসা-বর্জ্য জমানোর পরে ব্যাগটির মুখ বেঁধে ডাস্টবিনের পাশে রাখতে হবে, যাতে সাফাইকর্মী দেখেই বোঝেন চিকিৎসা-বর্জ্য আছে ওতে।”
রাজ্যের পুরমন্ত্রী তথা কলকাতা পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘শহরের কয়েকটি জায়গায় হলুদ বিন রয়েছে। সেখানেই কোভিড-বর্জ্য ফেলার জন্য সকলকে বলা হচ্ছে। মুম্বই থেকে আরও দু’হাজার হলুদ বিন দ্রুত আনানো হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy