কলকাতার দূষণের প্রধান উৎস আর গাড়ির ধোঁয়া নয়, বরং শহরের সর্বত্র ছড়িয়ে থাকা রাস্তার ধুলো। এমনই চমকপ্রদ তথ্য উঠে এসেছে ‘দ্য এনার্জি অ্যান্ড রিসোর্সেস ইনস্টিটিউট’ (টেরি)-এর সাম্প্রতিক সমীক্ষায়। পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের (ডব্লিউবিপিসিবি) জন্য ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এই সমীক্ষাটি করা হয়েছে কলকাতা ও হাওড়া অঞ্চলে।
সমীক্ষা বলছে, রাস্তার ধুলো— অর্থাৎ, বাতাস বা যানবাহনের চলাচলে যে ধুলো বাতাসে মিশে যায়— তা কলকাতার বাতাসে দূষণের সবচেয়ে বড় উৎস। পিএম১০ কণার প্রায় ৩৫ শতাংশ এবং পিএম২.৫ কণার প্রায় ১৬ শতাংশ এই রাস্তার ধুলো থেকেই আসে। তুলনায়, যানবাহনের অবদান পিএ১০-এর ক্ষেত্রে ১০ থেকে ১২ শতাংশ এবং পিএম২.৫-এর ক্ষেত্রে ১৫ থেকে ১৮ শতাংশ। শিল্পাঞ্চলের অবদানও তুলনামূলক কম পিএম১০-এ ১৪ থেকে ১৬ শতাংশ এবং পিএম২.৫-এ প্রায় ১৭ শতাংশ। গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, শীতকালে বাতাসের চলাচল কমে যাওয়ায় দূষিত কণাগুলি মাটির কাছাকাছি থেকে যায়। ফলে শীতের মাসে কলকাতার বায়ুর মান ‘খারাপ’ থেকে ‘অত্যধিক খারাপ’ পর্যায়ে নেমে আসে। আবাসিক এলাকার বর্জ্য পোড়ানো ও বায়োমাস ব্যবহারও শীতকালে দূষণ বাড়ায়। অন্য দিকে, গরমকালে প্রতিবেশী রাজ্য বা দেশ থেকে আসা ধূলিকণা বড় ভূমিকা রয়েছে— সূক্ষ্ম কণার প্রায় ৪৬ শতাংশ বাইরের উৎস থেকে আসে বলে জানা গিয়েছে।
আরও পড়ুন:
সমীক্ষা অনুযায়ী, কলকাতা পুরসভার অন্তর্গত এলাকাগুলিতেই দূষণের ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি। এ অবস্থায় টেরি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ—শুধু যানবাহন বা শিল্প নিয়ন্ত্রণ নয়, বরং শহরের রাস্তাঘাটের উন্নয়নই এখন প্রধান চাবিকাঠি। রাস্তার ফাটল-গর্ত মেরামত, পুরনো রাস্তা পাকা করা, ধুলো নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত জল ছেটানো ও আধুনিক পরিকাঠামো তৈরির দিকেই জোর দিতে হবে। পাশাপাশি, শহরের শ্মশান (ক্রিমেটোরিয়াম) আধুনিকীকরণ, ই-গাড়ির চার্জিং স্টেশন বাড়ানো এবং পরিচ্ছন্ন পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নও জরুরি বলে মত গবেষকদের। টেরি-র এই রিপোর্টে স্পষ্ট, গাড়ি বা শিল্প নয়, বরং শহরে পড়ে থাকা ধুলোই এখন কলকাতার দূষণের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তাই টেকসই নগর পরিকল্পনা, নিয়মিত রাস্তা পরিষ্কার ও স্থানীয় প্রশাসনের সক্রিয় উদ্যোগই দূষণ রোধে সবচেয়ে কার্যকর পথ হতে পারে।