Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Road Accident

আচমকা চালু রোলার, চাকায় পিষ্ট হয়ে মৃত্যু

দ্বিতীয় কোনও ব্যক্তি রোলারটি চালিয়ে দিয়েছিলেন কি না এবং সেটির পিছনে খোকন থাকায় তিনি পিষ্ট হন কি না, সেই আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না তদন্তকারীরা।

মর্মান্তিক: এই রোড রোলার হঠাৎ চলতে শুরু করায় পিষ্ট হয়ে যান এক ভ্যানচালক। শনিবার, গোয়াবাগানে।

মর্মান্তিক: এই রোড রোলার হঠাৎ চলতে শুরু করায় পিষ্ট হয়ে যান এক ভ্যানচালক। শনিবার, গোয়াবাগানে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০২১ ০৬:৫৬
Share: Save:

রাতের খাওয়াদাওয়া শেষ করে শোয়ার তোড়জোড় করছিলেন বাসিন্দারা। হঠাৎই চিৎকার এবং একটি আওয়াজ শুনতে পান তাঁরা। বাইরে বেরিয়ে তাঁরা দেখেন, রাস্তার ধারে দাঁড় করানো একটি রোড রোলারের পিছনের ডান দিকের চাকায় চাপা পড়ে আছেন এক ব্যক্তি। তাঁকে সেখান থেকে উদ্ধার করতে না পেরে বাসিন্দারা খবর দেন পুলিশকে। পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে পৌঁছে একটি পণ্যবাহী গাড়ি দিয়ে রোড রোলারটি সরিয়ে ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করে। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। কিন্তু দাঁড়িয়ে থাকা একটি রোলার কী ভাবে আচমকা চালু হল এবং সেটির চাকায় কী ভাবেই বা ওই ব্যক্তি হঠাৎ পিষ্ট হলেন, তা নিয়ে রহস্য তৈরি হয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, শুক্রবার রাত ১২টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে বড়তলা থানা এলাকার বিডন স্ট্রিটের গোয়াবাগানে। মৃত ব্যক্তির নাম খোকন দাস (৪০)। তিনি ওই এলাকায় ফুটপাতে থাকতেন। সাইকেল ভ্যান চালিয়ে উপার্জন করতেন।

প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জানতে পেরেছে, গোয়াবাগান এলাকায় একটি রাস্তা পিচ ঢালার কাজ হচ্ছে। সে জন্যই ওই রোড রোলারটি পুরসভার তরফে আনা হয়েছিল। শুক্রবার কাজের শেষে রাস্তার ধার ঘেঁষে রোলারটি দাঁড় করিয়ে ইঞ্জিন বন্ধ করে চলে যান চালক। স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিশকে জানিয়েছেন, চিৎকার শুনে তাঁরা যখন ঘটনাস্থলে পৌঁছন, তখন রোলারের ইঞ্জিন চালু ছিল। তবে পুলিশ আসার আগে ইঞ্জিন বন্ধ করা হয়। ঘটনাস্থলের কাছ থেকে একটি মদের বোতলও উদ্ধার করেছেন তদন্তকারীরা।

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, খোকন কোনও ভাবে রোলারটি চালু করে দিয়েছিলেন। ওই অবস্থায় সেটি পিছনে গড়াতে থাকে। রোলারে চালকের বসার জায়গা অনেক উঁচুতে। অনুমান, সেখান থেকে নামতে গিয়ে ভারসাম্য হারিয়ে পড়ে গেলে রোলারের চাকায় পিষ্ট হয়ে যান খোকন। এর পাশাপাশি, দ্বিতীয় কোনও ব্যক্তি রোলারটি চালিয়ে দিয়েছিলেন কি না এবং সেটির পিছনে খোকন থাকায় তিনি পিষ্ট হন কি না, সেই আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না তদন্তকারীরা। যদিও তাঁরা জানিয়েছেন, ঠিক কী ঘটেছিল জানতে ঘটনাস্থলের আশপাশে থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখা হবে। তবে শনিবার দুপুর পর্যন্ত এলাকায় কোনও সিসি ক্যামেরার খোঁজ মেলেনি। একই সঙ্গে খোঁজা হচ্ছে ঘটনার কোনও প্রত্যক্ষদর্শীকে। প্রাথমিক ভাবে রোলারের চালকের সঙ্গে কথা বলেছে পুলিশ। তিনি জানিয়েছেন, শুক্রবার কাজ শেষে তিনি রোলার লক করে গিয়েছিলেন।

শনিবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, পুলিশকর্মীরা স্থানীয় বাসিন্দাদের থেকে ওই রাতের ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইছেন। বাসিন্দারা জানান, তাঁরা আওয়াজ শুনে বাইরে এসেছিলেন। তখনই খোকনকে চাকার নীচে চাপা পড়ে থাকতে দেখেন। খোকনের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে পুলিশ জেনেছে, দীর্ঘদিন ধরেই একা থাকতেন ওই ব্যক্তি। তাঁর স্ত্রী অসীমা দাস থাকেন রাজারহাটে। স্বামীর মৃত্যুর খবর পেয়ে এ দিন থানায় আসেন তিনি।

পরে অসীমা ফোনে জানান, তাঁর সঙ্গে খোকনের গত এক বছর যোগাযোগ ছিল না। তিনি মেয়েকে নিয়ে দিদির বাড়িতে থাকেন। পুলিশ জানিয়েছে, রহস্যের জট কাটাতে দেহটি ময়না-তদন্তে পাঠানো হয়েছে। আপাতত একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত চলছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Road Accident Footpath Dwellers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE