Advertisement
০৪ জুন ২০২৪
Russia Ukraine War

Russia Ukraine War: ‘শৌচাগারের জল খাচ্ছি, আমাদের একাধিক বন্ধুকে মেরেছে রুশ সেনা, তুলে নিয়ে যাচ্ছে মেয়েদের!’

আর এ দেশের বাসিন্দা আমার অনেক সহপাঠী, যাঁদের সঙ্গে এই ক’দিন ছিলাম, আজকের ঘটনার পরে তাঁরাও দেশের স্বার্থে বাহিনীতে যোগ দিয়েছেন। আমরা কী করব জানি না।’’

রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হানার পরে খারকিভের সিটি কাউন্সিল ভবনের  চেহারা। মঙ্গলবার।

রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হানার পরে খারকিভের সিটি কাউন্সিল ভবনের চেহারা। মঙ্গলবার। ছবি: দীপশিখা দাসের সৌজন্যে।

বিতান ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০২২ ০৫:০৩
Share: Save:

বোমারু বিমান হানার আগাম সঙ্কেত দিত যে সাইরেনটা, সেটার আওয়াজ গত দু’দিন ধরে বন্ধ খারকিভে। শোনা যাচ্ছে, রুশ সেনারা নষ্ট করে দিয়েছে সেন্সরগুলো। শহর জুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তারা। ইউক্রেনের গেরিলা বাহিনীর অতর্কিত হানার সঙ্গে পাল্লা দিতে রুশ বাহিনীও সামরিক পোশাক ছেড়ে দিয়েছে। কে শত্রু, কে মিত্র বোঝার উপায় নেই। মঙ্গলবার সকালে যেমন বুঝতে পারেননি দমদমের দীপশিখা দাসরাও।

দিনভর কার্ফুর মাঝে দোকান- বাজার করার জন্য একটু ছাড় মিলেছিল। বেকেটোভার যে শেল্টারে দীপশিখারা আছেন, সেখান থেকে দেখা যায় খারকিভ সিটি কাউন্সিল ভবন। এ দিন ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাত এসেছে সেখানেও। খারকিভের একদল ডাক্তারি পড়ুয়া তখন কার্ফু উঠেছে বলে তড়িঘড়ি বেরিয়েছিলেন রসদ মজুত করার জন্য। তাঁদের মধ্যেই ছিলেন দীপশিখার বন্ধু, কর্নাটকের শেখরাপ্পা জ্ঞানগউধর নবীন। স্‌প্লিন্টারের আঘাতে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় তাঁর দেহ। আর খাবার কেনা হয়নি দীপশিখাদের। বাড়ি ফেরানোর আশ্বাস সংবাদমাধ্যমেই জানছেন তাঁরা। খারকিভের বহু ভারতীয় পড়ুয়া এখনও আতঙ্কে। তাঁদের যোগাযোগের মাধ্যম শুধু স্বজন-বন্ধুরা। দূতাবাস বা সরকারের পক্ষ থেকে কেউই এখনও যোগাযোগ করেননি বলে জানিয়েছেন হালিশহরের চয়ন কুমার, নির্মল কুমারেরা।

যদিও খারকিভে ভারতীয় ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। ভারতে নিযুক্ত ইউক্রেন ও রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠানো হয় এবং ইউক্রেনে আটকে থাকা সব ভারতীয়কে অবিলম্বে ফেরানোর আশ্বাস দেওয়া হয়। দীপশিখা বলেন, ‘‘আশ্বস্ত হওয়ার মানসিক অবস্থাতেই নেই, সেটা কি দেশের নেতা, কূটনীতিকেরা বুঝতে পারছেন না? চোখের সামনে বন্ধুকে হারালাম। খাওয়ার জল নেই, শৌচাগারের জল যেটুকু আছে সেটাই খাচ্ছি। রুশ সৈন্য ভারতীয়-অভারতীয় মানছে না। আমাদের একাধিক বন্ধুকে ওরা মেরেছে, মেয়েদের তুলে নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের দেশ কূটনৈতিক সিদ্ধান্ত নেবে এর পরেও!’’

খারকিভে আটকে থাকা পড়ুয়াদের অনেকেই আজ, বুধবার মরিয়া হয়ে ইউক্রেনের পূর্ব দিকের বেলারুস সীমান্ত দিয়ে পার হওয়ার চেষ্টা করবেন বলে জানাচ্ছেন। নিজেদের পোশাকে ভারতের জাতীয় পতাকা এঁকেছেন তাঁরা। যদি রুশ সেনারা অন্তত তাতে প্রাণভিক্ষা দেন, সেই ভেবে। কেউ ট্রেন, কেউ আবার ক্যাব ভাড়া করেছেন। মঙ্গলবার হালিশহরের গোয়ালাপাড়ার পূজা ঘোষ-সহ জ়েপোরিঝিয়া স্টেট মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির ১৪৯৭ জন পড়ুয়াকে নিয়ে জ়েপোরিঝিয়া স্টেশন থেকে একটি ট্রেন ইউক্রেনের পশ্চিম সীমান্তে রওনা হয়েছে। পূজা বলেন, ‘‘হাঙ্গেরিতে ঢুকে আমরা বুদাপেস্টে যাব। সেখান থেকে দেশে ফেরা যাবে।’’ সীমান্তে অবশ্য প্রথমে ইউক্রেনের মহিলা ও শিশু, তার পরে বিদেশিদের মধ্যে থেকে গর্ভবতী, শিশু, মহিলা, বৃদ্ধ, সব শেষে পুরুষদের পার করানো হচ্ছে। ফলে অনেকেই শরীরের তাপমাত্রা নেমে যাওয়ায় অসুস্থ হচ্ছেন বলে জানা গিয়েছে।

দীপশিখা বলেন, ‘‘এখান থেকে তিন ঘণ্টার পথ মস্কো। রাশিয়া যদি ভারতীয়দের প্রতি উদারই হবে, তবে তো মস্কো হয়েও ফিরতে পারতাম। আমাদের যে বন্ধুরা চেষ্টা করেছিলেন, তাঁদের কোনও হদিস নেই। এখান থেকে হাঙ্গেরি বা পোল্যান্ড ২২ ঘণ্টার পথ। এই পরিস্থিতিতে অসম্ভব সেই যাত্রা। আর এ দেশের বাসিন্দা আমার অনেক সহপাঠী, যাঁদের সঙ্গে এই ক’দিন ছিলাম, আজকের ঘটনার পরে তাঁরাও দেশের স্বার্থে বাহিনীতে যোগ দিয়েছেন। আমরা কী করব জানি না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Russia Ukraine War Medical Students
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE