Advertisement
E-Paper

আবেশ-কাণ্ডে ‘শিক্ষা’ নিয়ে কড়া হচ্ছে স্কুল

আবেশ দাশগুপ্তের মৃত্যু ঘিরে রহস্য এখনও কাটেনি। তার পরিবার বলছে, এটা অবশ্যই খুন। পুলিশি তদন্তের গতিপ্রকৃতি আবার দুর্ঘটনার দিকেই ইঙ্গিত করছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৬ ০১:৫৮

আবেশ দাশগুপ্তের মৃত্যু ঘিরে রহস্য এখনও কাটেনি। তার পরিবার বলছে, এটা অবশ্যই খুন। পুলিশি তদন্তের গতিপ্রকৃতি আবার দুর্ঘটনার দিকেই ইঙ্গিত করছে। মৃত্যুর কারণ যা-ই হোক, আবেশ ও তার বন্ধুদের উচ্ছৃঙ্খল ও বেহিসেবি জীবনযাপন যে অনেকাংশেই এই মৃত্যুর জন্য দায়ী, তা অস্বীকার করছেন না কেউ। এই ঘটনা কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে শহরের অভিভাবকদের। স্কুলগুলিও এই প্রবণতা রুখতে কোমর বাঁধছে।

সেই লক্ষ্যেই এ বার প়ড়ুয়াদের সচেতন করতে বিধিনিষেধের কড়াকড়ির পাশাপাশি কাউন্সেলিং-এর উপরেও জোর দিচ্ছে শহরের একাধিক স্কুল। স্মার্ট ফোন নিয়ে স্কুলে ঢোকার ক্ষেত্রে যে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, তা-ও এ বার কঠোর ভাবে বলবৎ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। বন্ধু বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য দফায় দফায় পড়ুয়াদের বোঝানোর উদ্যোগ শুরু করেছেন বিভিন্ন স্কুলের কর্তৃপক্ষ। তবে শুধু কাউন্সেলিং নয়, ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক ভাল থাকলে সমাজের যে কোনও ধরনের খারাপ কাজ থেকেই যে পড়ুয়াদের দূরে রাখা সম্ভব, তা মানছেন অধিকাংশ শিক্ষকই।

গত শনিবার বালিগঞ্জের সানি পার্কে আবেশ দাশগুপ্তের মৃত্যুর পরেই কমবয়সীদের মধ্যে মদ খাওয়ার প্রবণতা নিয়ে নড়েচড়ে বসেন বিভিন্ন স্কুল-কর্তৃপক্ষ। একটি স্কুলের তরফে জানানো হয়, কিশোর-কিশোরীরা অনেক ক্ষেত্রেই ভাল-মন্দের বিচার ঠিক মতো করতে পারছে না। সেই খামতি দূর করতে তারাও নিয়ম-শৃঙ্খলায় কড়াকড়ি করছে ও কাউন্সেলিং-এ জোর দিচ্ছে।

বরাহনগরের সেন্ট্রাল মডার্ন স্কুলের অধ্যক্ষ নবারুণ দে জানান, তাঁদের স্কুলে স্মার্ট ফোন নিয়ে আসার উপরে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। অভিভাবকদেরও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, অযথা বেশি টাকা সন্তানদের হাতে দেবেন না। সানি পার্কের ঘটনার পরে অভিভাবকদের আবার সতর্ক করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবারই এক ছাত্রকে ফোন নিয়ে হাতেনাতে ধরে ফেলেন তাঁরা। সেই ফোন কর্তৃপক্ষ রেখে দেন। একাদশ শ্রেণির ওই ছাত্রকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, দ্বাদশ শ্রেণি পাশ করার পরে ওই ফোন নিয়ে যেতে। নবারুণবাবু বলেন, ‘‘পড়ুয়াদের বোঝানো হয়েছে, ঠিকঠাক বন্ধু নির্বাচন করতে শেখো। বেসামাল জীবনযাপন থেকে দূরে থাকার শিক্ষাও দেওয়া হচ্ছে।’’ নেশা থেকে দূরে থাকার জন্য শিক্ষকেরা পড়ুয়াদের সঙ্গে আলোচনা করেন বলে জানান তিনি।

ফিউচার ফাউন্ডেশনের অধ্যক্ষ রঞ্জন মিত্র জানান, সানি পার্কের ঘটনার পরে আরও কড়া হাতে হাল ধরেছেন তাঁরা। তিনি বলেন, ‘‘শিক্ষকদের বলা হয়েছে, বেশি করে পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলতে। পড়ুয়াদের সমস্যা সমাধান করার বিষয়ে শিক্ষকেরা যাতে আরও বেশি সচেতন হন, সেই চেষ্টাই চলছে।’’ তাঁর দাবি, এখনও পর্যন্ত স্কুলের কোনও পড়ুয়া খারাপ কিছুর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েনি। ভবিষ্যতে যেন না হয়, সেই চেষ্টা চলছে।

সাউথ পয়েন্টের ট্রাস্টি কৃষ্ণ দামানি বলেন, ‘‘পড়ুয়াদের চরিত্র গঠনের বিষয়ে আমরা বরাবরই সচেষ্ট। সানি পার্কের ঘটনার ফলে যে আমরা আলাদা করে উদ্যোগী হয়েছি, এমনটা নয়। ছাত্রছাত্রীদের কাউন্সেলিং করার জন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।’’ ক্যালকাটা বয়েজ-এর অধ্যক্ষ রাজা ম্যাকগি বলেন, ‘‘আমার বিশ্বাস, শিক্ষক-ছাত্র সম্পর্ক সুস্থ ও স্বাভাবিক থাকলে সমাজের খারাপ কাজ থেকে পড়ুয়াদের দূরে রাখা সম্ভব।’’ তিনিও জানান, এটা তাঁদের স্কুলে নিয়মিতই হয়।

হেরিটেজ স্কুলের অধ্যক্ষ সীমা সাপ্রু জানান, ইতিমধ্যেই তাঁদের স্কুলে পাঁচ জন কাউন্সেলর রয়েছেন। যাঁদের প্রধান কাজ, পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের মনের অবস্থা জেনে নেওয়া। তার উপরে ভিত্তি করে পড়ুয়াদের সমস্যার সমাধান করা হয়। নেশা থেকে পড়ুয়াদের দূরে রাখতেও বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে।

তবে প্রতিটি স্কুলেরই বক্তব্য, তারা যতই ব্যবস্থা নিক, অভিভাবকদেরও যথেষ্ট সচেতন হতে হবে। এক শিক্ষকের কথায়, ‘‘স্কুলের পাশাপাশি অভিভাবকেরা সচেতন হলেই কমবয়সী পড়ুয়াদের ঠিক পথে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। না হলে সব চেষ্টাই বৃথা যাবে।’’

aabesh dasgupta schools
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy