সোমবার রাতের টানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত কলকাতা শহর। বৃষ্টি কমলেও এখনও জলমগ্ন শহরের বেশ কিছু এলাকা। জল জমে রয়েছে আমহার্স্ট স্ট্রিট, ঠনঠনিয়া, গড়িয়াহাট, জোকা, সরশুনা, মেটিয়াবুরুজ এলাকায়।
সেই আবহে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সাংবাদিক বৈঠক করে মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানালেন, সকালের বানভাসি পরিস্থিতির খানিকটা হলেও উন্নতি হয়েছে। পুরসভার কন্ট্রোল রুম থেকে সর্বক্ষণ নজরদারি চলছে। রাতের মধ্যেই সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করা হবে। মেয়র বলেন, ‘‘এটা একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি। এর আগে ১৮০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু কাল থেকে ৩০০ মিলিমিটারেরও বেশি বৃষ্টি হয়েছে। পাম্প বসিয়ে পুরসভা জল নামানোর চেষ্টা করেছে। এখন ঠনঠনিয়া-সহ কয়েকটা জায়গা বাদ দিয়ে অনেক জায়গাতেই জল নেমে গিয়েছে।’’ তবে বৃষ্টির কারণে গঙ্গার জলস্তর বেড়ে গিয়েছে। পাশাপাশি, কানায় কানায় ভরে গিয়েছে সবক’টি নিকাশি খাল। ফলে নিকাশি খালে জল ফেলা হলেও আবার তা শহরের মধ্যেই ফিরে আসছে। ফিরহাদের কথায়, ‘‘ক্যানালে জল ফেললে তা আবার ব্যাক ফ্লো হয়ে ফিরে আসছে। সকালে এই কারণে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। সেই জলটাকে আবার সরাতে হয়েছে আমাদের।’’
আরও পড়ুন:
কলকাতায় সোমবার রাতের বৃষ্টি প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে দেহরাদূন কিংবা জম্মুর সাম্প্রতিক পরিস্থিতির কথারও উল্লেখ করেছেন ফিরহাদ। কারণ, কলকাতায় এর আগে এত বৃষ্টি শেষ কবে হয়েছে, মনে করতে পারছেন না অনেকেই। আবহাওয়া দফতরের তথ্য বলছে, সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত কলকাতায় গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২,৬৬৩ শতাংশ বেশি। এর আগে ১৯৭৮ এবং ১৯৮৬ সালের সেপ্টেম্বরে ২৫১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল কলকাতায়। সেই হিসাবে এটি শহরে বৃষ্টির ষষ্ঠ রেকর্ড। এ হেন পরিস্থিতিতে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ করেছে পুরসভা। সে জন্য নিকাশি বিভাগের কর্মচারী থেকে শুরু করে পুরসভার সমস্ত আধিকারিককেও ধন্যবাদ জানিয়েছেন মেয়র। তিনি বলেন, ‘‘আমরা পরিস্থিতির সঙ্গে লড়ছি। ওঁরা সারা দিন লড়াই করেছেন এবং এখনও লড়ে যাচ্ছেন। কিছু জায়গায় আমরা সহ-নাগরিকদের হারিয়েছি। তবে পুলিশ এবং প্রশাসনের সহযোগিতা পেয়েছি।’’
রাত গড়ালেও এখনও পর্যন্ত ঠনঠনিয়া, আমহার্স্ট স্ট্রিট, এন্টালি, গড়িয়াহাট, বিজন সেতুর নীচের এলাকা, জোকা-সহ বেশ কিছু এলাকায় জল জমে রয়েছে। ১০৪, ১০৯, ১১০, ১২৬ নম্বর ওয়ার্ডের কোথাও কোথাও জল জমে রয়েছে বিক্ষিপ্ত ভাবে। তবে মেয়র পারিষদ (নিকাশি) তারক সিংহ জানিয়েছেন, পাতিপুকুর, আলিপুরে জল নেমে গিয়েছে। তারাতলা, ভিক্টোরিয়া চত্বর, রেসকোর্সেও আস্তে আস্তে জল নামছে। দিনের বেলা কিছুটা সময় সিইএসসি-র বিদ্যুৎ ছিল না। তাই কোথাও কোথাও জলের সমস্যা হয়েছিল। কিন্তু এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে বলে জানিয়েছেন মেয়র।
আরও পড়ুন:
মঙ্গলবার দিনভর শহরের কোথাও হাঁটুসমান, আবার কোথাও কোমর ছুঁইছুঁই জল ছিল। কসবা, লেনিন সরণি, বিধান সরণি, মহাত্মা গান্ধী রোড, সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ— কলকাতার উত্তর এবং দক্ষিণের প্রায় সর্বত্র দেখা গিয়েছিল একই ছবি। পুজোর মুখে আবার নিম্নচাপের আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর। সম্ভাব্য সব রকম পরিস্থিতির জন্য পুরসভা তৈরি রয়েছে বলে জানিয়েছেন ফিরহাদ।