Advertisement
০৮ অক্টোবর ২০২৪
Calcutta News

এ বার কলকাতা, মূর্তি ভাঙল শ্যামাপ্রসাদের

হাতুড়ির ঘায়ে মূর্তিটির ডান কান, চোখ ও গালের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ত্রিপুরায় লেনিনের মূর্তি ভাঙার প্রতিত্রিয়া দেখাতেই শ্যামাপ্রসাদের মূর্তি ভাঙা হয়েছে বলে মনে করছে পুলিশ। ঘটনাস্থলে যে পোস্টার মিলেছে তার নীচে সংগঠনের নাম লেখা ছিল ‘র‌্যাডিক্যাল’।

হাতুড়ির ঘায়ে মূর্তিটির ডান কান, চোখ ও গালের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। —নিজস্ব চিত্র।

হাতুড়ির ঘায়ে মূর্তিটির ডান কান, চোখ ও গালের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৮ ১০:২৮
Share: Save:

ত্রিপুরা, তামিলনাড়ুর পর মূর্তি ভাঙার অসহিষ্ণু আঘাত পড়ল এই রাজ্যেও। খাস কলকাতায়, মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির কয়েকশো মিটারের মধ্যে, দিনের আলোয় প্রকাশ্যে ভাঙা হল শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের মূর্তি।

কেওড়াতলা শ্মশান সংলগ্ন সিআর দাশ পার্কে এই ঘটনা ঘটেছে বুধবার সকাল আটটা নাগাদ। সাত তরুণ-তরুণী হঠাত্ই পার্কে ঢুকে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করতে থাকেন শ্যামাপ্রসাদের আবক্ষ প্রস্তরমূর্তিতে। মুখের বেশ খানিকটা অংশ ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়। মূর্তিতে কালিও মাখিয়ে দেন তাঁরা। সাত জনকেই গ্রেফতার করেছে টালিগঞ্জ থানার পুলিশ। ধৃতেরা নিজেদের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী বলে দাবি করেছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, এ দিন সকাল ৮টা নাগাদ স্লোগান দিতে দিতে পার্ক ঢুকে পড়েন ছয় তরুণ এবং এক তরুণী। হাতে ছিল পোস্টার। পার্কের ভিতরে শ্যামাপ্রসাদের আবক্ষ মূর্তির একেবারে সামনে এসে আচমকাই ছেনি-হাতুড়ি দিয়ে মূর্তিটি ভাঙতে শুরু করেন। ওই ঘটনার যে ভিডিও রেকর্ডিং আমাদের হাতে এসেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে সেকেন্ড চল্লিশেকের মধ্যে ভাঙাভাঙি, কালি মাখানোর কাজ শেষ করে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন ওই তরুণ-তরুণীরা। কিন্তু স্থানীয় মানুষজন পার্কের গেট বন্ধ করে দিয়ে তাঁদের ভিতরে আটকে রাখেন। পরে পুলিশ এসে তাঁদের গ্রেফতার করে।

আরও পড়ুন: শ্যামাপ্রসাদের মূর্তি ভাঙা প্রসঙ্গে কে কী বললেন?

আরও পড়ুন: লজ্জা লাগছে! অশিক্ষিত লোকজনে রাজনৈতিক দলগুলো ভরে যাচ্ছে’

দেখুন মূর্তি ভাঙার সেই ভিডিও

হাতুড়ির ঘায়ে মূর্তিটির ডান কান, চোখ ও গালের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ত্রিপুরায় লেনিনের মূর্তি ভাঙার প্রতিক্রিয়া দেখাতেই শ্যামাপ্রসাদের মূর্তি ভাঙা হয়েছে বলে মনে করছে পুলিশ। ঘটনাস্থলে যে পোস্টার মিলেছে তার নীচে সংগঠনের নাম লেখা ছিল ‘র‌্যাডিক্যাল’।

রাজ্য সরকার এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই ঘটনায় কড়া প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার জানিয়েছেন, “ধৃতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি পদক্ষেপ করা হবে। এ ধরনের তাণ্ডব কোনও মতেই বরদাস্ত করা হবে না।”

ত্রিপুরা-সহ অন্য রাজ্যগুলিতে মূর্তি ভাঙা নিয়ে এর আগেই রীতিমতো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। এমন ঘটনা আর যাতে না ঘটে সে জন্য রাজ্য সরকারগুলিকে কড়া হাতে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দোষীদের বিরুদ্ধে আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানিয়েছে মন্ত্রক। এ ব্যপারে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

এ দিন মূর্তি ভাঙার খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে যান স্থানীয় বিধায়ক এবং মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় এবং স্থানীয় কাউন্সিলর মালা রায়। দু’জনেই নিন্দা করেন এই ঘটনার। শোভনদেব বলেন, “কোনও রাজনৈতিক দলের এটা সংস্কৃতি হতে পারে না। লেনিনের মূর্তি ভাঙার প্রতিবাদে শ্যামাপ্রসাদের মূর্তি ভাঙব, এটা কোনও যুক্তি হতে পারে না। এই ধরনের অপপ্রয়াস রুখে দেব।”

ভাঙচুরের পর মূর্তির পাদদেশে রেখে দেওয়া হয় এই পোস্টার। —নিজস্ব চিত্র।

ত্রিপুরায় বিধানসভা ভোটে বামফ্রন্টকে হারিয়ে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পরই, বেশ কয়েক জায়গায় সিপিএমের অফিস ভাঙচুর বা আগুন লাগানোর ঘটনা যেমন ঘটেছে, তেমনই ভেঙে ফেলা হয়ে মার্কসবাদী আইকন লেনিনের দু’টি মূর্তি। এই মূর্তি ভাঙা নিয়ে শোরগোল পড়ে যায় দেশ জুড়েই। এর মধ্যেই মঙ্গলবার রাতে তামিলনাড়ুর ভেলোরে দ্রাবিড় জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের নেতা এবং সমাজসংস্কারক প্রয়াত ই ভি আর রামস্বামীর মূর্তি ভাঙা হয়, যিনি পেরিয়ার নামেই বেশি পরিচিত। এই ঘটনায় উস্কানির অভিযোগ উঠেছে এক বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে।

আরও পড়ুন: ত্রিপুরা জুড়ে সন্ত্রাসের আবহ, লেনিনের মূর্তি ভাঙতে বুলডোজার

আরও পড়ুন: লেনিনের পাশে মমতা

ভেলোরের ঘটনা নিয়ে হইচই শুরু হতে না হতেই, খবর হয়ে যায় কলকাতাও। বুধবার সকালে হাতুড়ির ঘা পড়ল শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের মূর্তিতে। দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ এবং রাজনীতিবিদ শ্যামাপ্রসাদ একটা সময় জাতীয় কংগ্রেস করলেও, পরে বেরিয়ে এসে ১৯৫১ সালে ভারতীয় জনসঙ্ঘ তৈরি করেন। বছর দু’য়েক পর ১৯৫৩ সালে মারা যান শ্যামাপ্রসাদ। আরএসএস-এর রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম ভারতীয় জনসঙ্ঘ ১৯৭৭ সালে কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসা জনতা পার্টিতে মিশে যায়। তবে বছর তিনেকের মধ্যে এই পুরনো জনসঙ্ঘীরাই জনতা পার্টি ভেঙে বেরিয়ে তৈরি করেন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। লেনিন যেমন বামপন্থীদের কাছে অন্যতম আইকন, শ্যামাপ্রসাদেরও জনসঙ্ঘীদের কাছে তেমন আসন।

দক্ষিণ কলকাতায় শ্যামাপ্রসাদের যে মূর্তিটি ভাঙা হল বুধবার, সেটি বসানো হয় ১৯৮৬ সালের ২৩ জুন। ওই দিনটি শ্যামাপ্রসাদের মৃত্যুদিন। শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় স্মারক সমিতি, সিআর দাশ পার্কে মূর্তিটি বসায় কলকাতা পুরসভার অনুমতি নিয়ে। সংলগ্ন কেওড়াতলা শ্মশানেই শেষকৃত্য হয়েছিল শ্যামাপ্রসাদের।

(আরও আপডেট পেতে এই পাতায় নজর রাখুন।)

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE