রিয়াল লাইফে না হোক, রিল লাইফেই অক্সিজেন খুঁজছে ট্রাম কোম্পানি!
অর্থসঙ্কটে বেসামাল কলকাতা ট্রাম সংস্থার (সিটিসি) কাছে আশার আলো হয়ে উঠেছে সিনেমার শ্যুটিং। শুধু শ্যুটিংই নয়, বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্যও ট্রাম ভাড়া দিতে চান কর্তৃপক্ষ। শ্যুটিং এবং বিয়ে বাবদ ট্রাম ভাড়া দিয়ে গত আর্থিক বছরে ২০ লক্ষ টাকা পেয়েছে সিটিসি। তার আগে এই বাবদ আয় হত তিন লক্ষ টাকা। কর্তৃপক্ষের আশা, এ বছর এই পরিমাণ গত বারের চেয়েও বেশি হবে।
সিটিসি-তে বাসের সংখ্যা ৩৮০। ট্রামের সংখ্যা ২৬০। সকালের দিকে চলে ২১০টি বাস। বিকেলে চলে প্রায় ১৯০টি। বেশির ভাগ বাসই মেরামতির অভাবে বসে রয়েছে। একই ভাবে ট্রামের সংখ্যা আড়াইশোর উপর থাকলেও প্রতি দিন চলে ১১০টি। সংস্থার আয় বাড়াতে হলে নতুন বাস নামানো দরকার। পুরনো বাসের মেরামতিও জরুরি। ঠিক সময়ে মেরামতি না হওয়ায় সরকারি কর্তারাই বাস চালাতে ভয় পাচ্ছেন। সেই কারণেই পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র সরকারি বাসের ক্ষেত্রে ‘সার্টিফিকেট অব ফিটনেস’ বা সিএফ করার কথা ঘোষণা করেছেন।
সিটিসি-র এক কর্তার কথায়, দৈনিক টিকিট বিক্রি বাবদ সিটিসি পাচ্ছে মাসে বড়জোর তিন কোটি টাকা। আর ৫৯০০ শ্রমিক-কর্মীর বেতন দিতেই চলে যাচ্ছে মাসে ১১ কোটি টাকা। এই বিস্তর ব্যবধান কমাতে আড়াই বছর ধরে হরেক চেষ্টা করেও সে ভাবে সুফল পায়নি সিটিসি। তাই টিকিটবিহীন যাত্রী ধরে কিছু আয় বাড়াবার চেষ্টা করছেন কর্তৃপক্ষ। বিনা টিকিটের যাত্রীদের কাছ থেকে ১০০ টাকা করে জরিমানা নেওয়া শুরু হয়েছে।
ট্রামের মধ্যে শ্যুটিং হওয়ায় অবশ্য আয় বেড়েছে সিটিসি-র। কত টাকা মিলছে ছবি পিছু? ট্রামকর্তাদের হিসাবে, ৫০-৬০ হাজার টাকা চাইলেও অনেকে দিচ্ছেন। ছোট বাজেটের ছবি হলে ২০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা চাওয়া হচ্ছে। ‘বুলেট রাজা’র শ্যুটিংয়ে ট্রাম ভাড়া দিয়ে আয় হয়েছে ৭০ হাজার টাকা। সিটিসি-র এক কর্তা বলেন, “ব্যোমকেশ-এর শ্যুটিংয়ে কেবল ভাড়াই পেয়েছি ১ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা। এ ছাড়া, ওঁদের প্রয়োজনমতো কাঠামো সংস্কার করে দিয়ে আয় হয়েছে আরও কয়েক লক্ষ টাকা।” সিটিসি-র হিসাবে, ’১২-’১৩ অর্থবর্ষে সিনেমার দৌলতে ঘরে এসেছে অন্তত ১০ লক্ষ টাকা। এ বার পরিমাণটি অনেকটা বাড়বে বলে আশা।
বরযাত্রী অথবা কনেযাত্রীদের কাছেও ট্রাম-কর্তৃপক্ষ অভিনবত্বের খোঁজে ট্রামের কথা মাথায় রাখার আর্জি জানিয়েছেন। এর জন্য তৈরি রয়েছে সাজানো ট্রাম ‘বনলতা’। কয়েক বছর আগে চিৎপুর থেকে বেহালায় ট্রামে ‘বিবাহ অভিযান’ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় নামে এক ট্রামকর্মী। তাঁর ঠাকুর্দা বঙ্কিম বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯২৩ সালে চিৎপুর থেকে কালীঘাট ট্রামে বরযাত্রী নিয়ে গিয়েছিলেন।
সিটিসি সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১২-’১৩ সালে ট্রামে বিয়ে হয়েছিল তিনটি। চার ঘণ্টার জন্য ট্রামের সিঙ্গল বগির ভাড়া ১১ হাজার টাকা। সিটিসি-র বাসও বিয়েবাড়ির জন্য ভাড়া দেওয়া হয়। তার থেকেও ভালই আয় হচ্ছে। বিদেশি পর্যটকদের শহর ঘোরানোর জন্য আলাদা করে ভাড়া দেওয়া হচ্ছে।
সিটিসি-র ম্যানেজিং ডিরেক্টর নীলাঞ্জন শান্ডিল্য বলেন, “আমরা আয় বাড়াতে বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা করছি।” তা সত্ত্বেও শীতাতপনিয়ন্ত্রিত ট্রাম, হেরিটেজ সফর প্রভৃতি চালিয়েও আয় বাড়ছে না। কর্তৃপক্ষ অবশ্য দাবি করেছেন, নতুন বাস না নামালে আয় বাড়ানো সম্ভব নয়। ট্রামের আয় বাড়াতে হলে আলাদা লাইন দরকার। বন্ধ থাকা ট্রামরুটগুলিও চালু করা জরুরি। এই মুহূর্তে শ্যামবাজার থেকে গ্যালিফ স্ট্রিট, টালিগঞ্জ থেকে বালিগঞ্জ, বেহালা, ধর্মতলা থেকে বিড়লা তারামণ্ডল এবং ইলিয়ট রোড রুট খোলা দরকার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy