হাহাকার: মঙ্গলবার থানায় ক্ষোভ ঋজুর মায়ের (মাঝখানে)। ইনসেটে ঋজু দাস। ছবি: রণজিৎ নন্দী
দুর্ঘটনাবশত জলের ড্রামে পড়ে গিয়ে মৃত্যু নয়, আট বছরের ঋজু দাসকে খুন করেছিল তার নিজের বৌদি। মৃতের বৌদি প্রিয়াঙ্কা দাস নিজেই সে কথা স্বীকার করে নিয়েছে বলে দাবি পুলিশের। প্রিয়াঙ্কাকে গ্রেফতার করে তার বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু করেছে পুলিশ। প্রিয়াঙ্কা পুলিশকে জানিয়েছে, তার স্বামীর তুলনায় দেওরকে শ্বশুরমশাই বেশি ভালবাসতেন বলে এই ঘটনা ঘটিয়েছে সে।
গত শুক্রবার দুপুরে পাহাড়পুর রোডে বাড়ির শৌচালয়ের জল ভর্তি ড্রামের মধ্যে ঋজুর দেহ উদ্ধার হয়। তাকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। ঘটনায় পুলিশ প্রথমে অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করে।
পুলিশ সূত্রে খবর, সোমবার রাতে প্রিয়াঙ্কা তার স্বামী সুব্রত দাসকে জানায় ঋজুর মৃত্যুর জন্য সেই দায়ী। শুক্রবার দুপুরে ঋজু স্নান করার জন্য জল ভর্তি লম্বা ড্রামে ঝাঁপ দেওয়ার পরেই সে ড্রামের ঢাকনা বন্ধ করে দিয়েছিল। তদন্তকারীদের সুব্রত জানিয়েছেন, সোমবার রাতে তাঁর স্ত্রী নিজের কুকীর্তির জন্য চরম অনুশোচনায় কেঁদেও ফেলেছিল। মঙ্গলবার সকালে সব ঘটনা মা-বাবাকে জানান সুব্রত। খবরটি ছড়াতেই ক্ষুব্ধ জনতা সুব্রতদের বাড়িতে জড়ো হয়ে প্রিয়াঙ্কাকে মারধর করতে উদ্যত হয়।
মৃতের বৌদি প্রিয়াঙ্কা দাস।
ইতিমধ্যে খবর পেয়ে মেটিয়াবুরুজ থানার পুলিশ এসে প্রিয়াঙ্কাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। এর পরেও উত্তেজিত জনতা প্রিয়াঙ্কার বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে বলে পুলিশ জানিয়েছে। পরে মেটিয়াবুরুজ-সহ বন্দর ডিভিশনের একাধিক থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
ক্ষুব্ধ জনতা প্রিয়াঙ্কার কঠোর শাস্তির দাবিতে মেটিয়াবুরুজ থানায় গিয়ে বিক্ষোভ দেখানো শুরু করে। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে মৃত ঋজুর মা ডলি দাস ও বাবা দুখিরাম দাসও ছিলেন। এ দিন ডলি বলেন, ‘‘আমার দুই ছেলে। গত অক্টোবরে বড় ছেলে সুব্রতর (২২) সঙ্গে প্রিয়াঙ্কার (২০) বিয়ে হয়েছে। বিয়ের পর থেকেই প্রিয়াঙ্কা ছোট ছেলে ঋজুকে দু’চোখে দেখতে পারত না। ঋজু একটু চঞ্চল প্রকৃতির ছিল। আগেও ও ড্রাম ভর্তি জলে ডুবে স্নান করেছে। আমি জানতে পেরে নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু ছেলে ড্রামে ডুবে মারা যেতে পারে এটা মানতে পারিনি। এখন সবটা বুঝতে পারছি।’’
পাহাড়পুর রোডে দুই ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে সংসার দুখিরাম দাসের। তিনি একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। বড় ছেলে সুব্রতও বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। শুক্রবারের ঘটনার সময় দুখিরাম ও সুব্রত বাড়িতে ছিলেন না। বাড়ির বৌমা যে এই ঘটনা ঘটাতে পারেন তা মেনে নিতে পারছেন না দুখিরাম। বললেন, ‘‘প্রিয়াঙ্কার কঠোর শাস্তি হোক এটাই চাইছি।’’
এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে, একটি শিশুর প্রতি এমন আক্রোশ কি আসলে এক ধরনের মানসিক রোগ?
মনোবিদ নীলাঞ্জনা সান্যাল বলেন, ‘‘মূলত চরম হিংসা থেকে এই ধরনের মানসিক বিকার বোধ জন্ম নেয়। অবাস্তবতার বোধে আক্রান্ত হয়ে এই ধরনের ঘটনা ঘটানোর সময়ে অভিযুক্তের হিতাহিত বোধও লোপ পায়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy