Advertisement
E-Paper

কেউ বলছেন ‘ব্যবস্থা রয়েছে’, কারও মুখে কুলুপ! অগ্নিকাণ্ডের পরে বড়বাজারের হোটেলগ্রহে খোঁজ নিল আনন্দবাজার ডট কম

মেছুয়ার হোটেলে আগুন লাগার পরে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে। সেখানকার অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তার পরেই বড়বাজার এলাকার কিছু হোটেল ঘুরে দেখল আনন্দবাজার ডট কম।

সারমিন বেগম

শেষ আপডেট: ০১ মে ২০২৫ ১৬:০৫
বড়বাজারের সেই হোটেল।

বড়বাজারের সেই হোটেল। ছবি: পিটিআই।

মঙ্গলবার রাতে বড়বাজারের মেছুয়ায় একটি হোটেলে আগুন লেগে প্রাণ হারিয়েছেন ১৪ জন। অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন অনেকে। এমন ঘটনা সাম্প্রতিককালে কলকাতায় ঘটেনি। তবে হোটেলের ওই অগ্নিকাণ্ড মনে পড়িয়ে দিয়েছে অতীতের অনেক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাকে। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, অগ্নিদগ্ধ হোটেলটির ‘ফায়ার লাইসেন্স’-এর মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল তিন বছর আগে। কিন্তু তার নবীকরণ হয়নি। বড়বাজার এলাকায় ছড়িয়েছিটিয়ে রয়েছে এমনই বেশ কিছু হোটেল। যেখানে ভিন্‌রাজ্য থেকে এসে ওঠেন অনেকে। সেই হোটেলগুলির অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা সম্পর্কে বৃহস্পতিবার খোঁজ নিল আনন্দবাজার ডট কম। হোটেলের মালিক এবং কর্মীদের কেউ আগুন নেবানোর ব্যবস্থা সম্পর্কে সটান জানিয়ে দিলেন, ‘সব রকম ব্যবস্থা’ রয়েছে। কেউ আবার জানিয়ে দিলেন, এ নিয়ে কিছু বলবেন না। বলার ‘এক্তিয়ার’ তাঁর নেই।

মঙ্গলবার রাতে বড়বাজারের যে হোটেলে আগুন লেগে ১৪ জনের প্রাণ গিয়েছিল, তার ৫০০ মিটারের মধ্যে রয়েছে অন্তত চারটি হোটেল। দু’টি রয়েছে মুন্সি সাদরুদ্দিন লেনে। দু’টি হোটেলই চার-পাঁচতলা। তার মধ্যে ঘটনাস্থল থেকে ২৫০ মিটার দূরে একটি হোটেলে ঢুকে দেখা গেল, প্রতিটি তলায় একটি করে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র রয়েছে। যদিও প্রত্যেক তলায় ঘর রয়েছে চার থেকে পাঁচটি। প্রশ্ন উঠছে, কোনও তলায় আগুন লাগলে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের একটি মাত্র সিলিন্ডার চার থেকে পাঁচটি ঘরের আগুন নেবাতে কতটা কার্যকরী হবে? এই প্রশ্নে অবশ্য নীরব হোটেলের কর্মীরা। তাঁরা জানিয়েছেন, গোটা হোটেলে ‘সেন্ট্রালাইজ়ড ফায়ার ফাইটিং সিস্টেম’ নেই। এই প্রযুক্তি থাকলে আগুন লাগলে অ্যালার্ম বেজে ওঠে। স্বয়ংক্রিয় ভাবে আগুন নেবানোর জন্য প্রযুক্তিও থাকে। সিলিংয়ে থাকা পাইপের মাধ্যমে জল ছেটানো হয়। মুন্সি সাদরুদ্দিন লেনের ওই হোটেলে এ ধরনের কোনও ব্যবস্থা নেই। নেই ফায়ার অ্যালার্মও। আগুন লাগলে অতিথিদের কী ভাবে সতর্ক করা হবে? এক কর্মী বললেন, ‘‘আমরা নিজেরা অ্যালার্ম বাজিয়ে দেব।’’ ওই হোটেলের রিসেপশনেও অগ্নিনির্বাপক সিলিন্ডার দেখা গিয়েছে।

মেছুয়ার ঘটনাস্থল থেকে মেরেকেটে ১৫০ মিটার দূরে সাদরুদ্দিন লেনের অন্য একটি হোটেলের ঘর বা করিডর অবশ্য ঘুরে দেখতে দেননি সেখানকার কর্মীরা। তবে ওই হোটেলের রিসেপশনেও একটি অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের সিলিন্ডার চোখে পড়েছে। কর্মীরা জানান, ওই হোটেলেও কোনও ‘ফায়ার অ্যালার্ম’ নেই। প্রশাসনের তরফে কেউ সম্প্রতি এসে কি হোটেলের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা খতিয়ে দেখে গিয়েছেন? হোটেলের এক কর্মী বলেন, ‘‘কর্তৃপক্ষ জানেন।’’

ঘটনাস্থল থেকে ৪০০ মিটার দূরে এমজি রোডে রয়েছে আরও একটি হোটেল। বাড়িটির চারতলা থেকে অতিথিদের থাকার ব্যবস্থা। ছাদে রেস্তরাঁ। হোটেলে ঢুকতেই দরজার উপরে চোখে পড়েছে ফায়ার অ্যালার্ম। হোটেলের কর্মী অরিন্দম রায় জানান, অগ্নিনির্বাপণের সব রকম ব্যবস্থাই রয়েছে তাঁদের হোটেলে। ‘সেন্ট্রাল ফায়ার ফাইটিং সিস্টেম’ও রয়েছে। যথাসময়ে প্রশাসনের ছাড়পত্র (এনওসি) নেওয়া হয়েছে। অরিন্দম জানিয়েছেন, হোটেলের সিঁড়ির দরজা বন্ধ হলে ধোঁয়া আর বার হতে পারবে না। প্রত্যেক তলায় করিডরের দু’পাশে দু’টি করে বড় জানলা রয়েছে। সেই জানলা দিয়ে ধোঁয়া বেরিয়ে যেতে পারবে। প্রসঙ্গত, মেছুয়ার হোটেলে আগুন লাগার পরে ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়েছিল সমস্ত তলায়। তার জেরেই দম আটকে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

এমজি রোডে আরও একটি হোটেলের কর্মীরা আবার গোটা বিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। ওই হোটেলের রিসেপশনে কয়েকটি পাইপ দেখা গিয়েছে। তবে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের সিলিন্ডার চোখে পড়েনি। এ সব নিয়ে প্রশ্ন করা হলে কর্মীরা বিভিন্ন জায়গায় ফোন করতে শুরু করেন। তার পরে তাঁরা জানান, এ সব নিয়ে এই সময়ে বলার কেউ নেই। এই বিষয়ে কথা বলার এক্তিয়ার যাঁর রয়েছে, তিনিও নেই। হোটেলে কি ফায়ার অ্যালার্ম রয়েছে? জবাবে এক কর্মী বলেন, ‘‘এ সব বলতে পারব না।’’

মেছুয়ার হোটেলে আগুন লাগার পরে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে। দমকলের ডিজি রণবীর কুমার জানান, ওই হোটেলের ‘ফায়ার লাইসেন্স’-এর মেয়াদ শেষ হয়েছিল তিন বছর আগে। তার পরে তা আর নবীকরণ করাননি হোটেল কর্তৃপক্ষ। হোটেলে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা থাকলেও অগ্নিকাণ্ডের সময় তা কাজ করেনি। দমকলের প্রাথমিক অনুমান, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা আদৌ কার্যকর ছিল না ওই হোটেলে। আনন্দবাজার ডট কম যে হোটেলগুলি ঘুরে দেখেছে, সেখানে অগ্নিনির্বাপক সিলিন্ডার নডরে পড়েছে বটে। কিন্তু সেগুলির অবস্থা মেছুয়ার হোটেলের মতো কি না বা সেগুলি নিরন্তর পরীক্ষা করানো হয় কি না, আগুন লাগলে কী করা হবে, তার মহড়া দেওয়া হয় কি না, সেই প্রশ্ন হোটেলের কর্মী বা প্রশাসনিক স্তরের কেউ এড়িয়েই গিয়েছেন। তবে অনেকেই জানিয়েছেন, মেছুয়ার ঘটনা বিভিন্ন হোটেলের কর্তৃপক্ষকে নড়েচড়ে বসতে বাধ্য করেছে। নিজেদের বাণিজ্যিক স্বার্থেই হোটেল কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে সচেতন হবেন।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy