গ্যারাজে গাড়ি সারিয়ে ফিরছিলেন বছর তেত্রিশের যুবক। উল্টো দিক থেকে আসা লরির সঙ্গে মুখোমুখি ধাক্কা লাগে তাঁর ছোট গাড়ির। তীব্র ধাক্কায় লরির কাঠামোর একটি কাঠের অংশ খুলে গাড়িটির উইন্ডস্ক্রিন ভেঙে চালকের আসনে বসা যুবকের পেটে ঢুকে যায়। প্রায় পাঁচ ফুট লম্বা কাঠের টুকরোটি যুবকের পেট দিয়ে ঢুকে পিঠ ফুঁড়ে বেরিয়ে এসেছিল। দীর্ঘ অস্ত্রোপচারে সেটি বার করে যুবককে প্রাণে বাঁচাল এসএসকেএম। তিনি এখন ওই হাসপাতালের ট্রমা কেয়ারে চিকিৎসাধীন। তাঁর শারীরিক অবস্থা আপাতত স্থিতিশীল বলে খবর।
হাসনাবাদের বাসিন্দা, পেশায় স্কুলগাড়ির চালক সমরজিৎ ঘোষ গত ১৪ ফেব্রুয়ারি রাতে গাড়ি মেরামত করাতে নিয়ে যান। ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোরে ফেরার পথে বসিরহাটের মালঞ্চ সেতুর উপরে ঘটে দুর্ঘটনা। খবর পেয়ে সেখানে পৌঁছে মিনাখাঁ থানার পুলিশ ও ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীরা দেখেন, চালকের আসনে রক্তাক্ত অবস্থায় আটকে আছেন সমরজিৎ। পুলিশ জানাচ্ছে, পেট ফুঁড়ে কাঠ বেরিয়ে যাওয়ায় গাড়ি থেকে তাঁকে উদ্ধার করতে বেগ পেতে হয়। অবশেষে তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে মিনাখাঁ গ্রামীণ হাসপাতালে ও পরে পিজির ট্রমা কেয়ারে স্থানান্তরিত করা হয়।
সোমবার ওই যুবকের বোন সঞ্চিতা ঘোষ বলেন, ‘‘শনিবার সকালে মা ফোন করে দুর্ঘটনার খবর দেন। কলকাতা থেকে মিনাখাঁ যাওয়ার পথে খবর পাই, পুলিশের সাহায্যে দাদাকে পিজিতে আনা হয়েছে। সেখানে পৌঁছে শুনি, অস্ত্রোপচার শুরু হয়েছে।’’ হাসপাতাল সূত্রের খবর, এক দিকে কাত করে শুইয়ে সমরজিৎকে ট্রমা কেয়ারে আনার পরেই শল্য বিভাগের চিকিৎসকেরা অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন। শল্য বিভাগের প্রধান চিকিৎসক বিতান চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে শিক্ষক-চিকিৎসক সব্যসাচী বক্সী, সিনিয়র রেসিডেন্ট সুস্মিতা চাকী-সহ অন্যেরা এবং অ্যানাস্থেশিয়া, সিটিভিএস, অস্থি-শল্য বিভাগের চিকিৎসকদের দল প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা ধরে অস্ত্রোপচার করেন। হাসপাতাল সূত্রের খবর, প্রায় পাঁচ ফুট লম্বা, ছ’ইঞ্চি চওড়া, দেড় ইঞ্চি মোটা কাঠের টুকরোটি পেট ফুঁড়ে ঢুকে পিঠ দিয়ে বেরিয়ে ছিল। প্রথমে শরীরের দু’দিকে বাইরে বেরিয়ে থাকা কাঠের অংশ কাটা হয়। তার পরে পুরো পেট কেটে বাকি অংশ বার করা হয়।
জানা যাচ্ছে, পরীক্ষায় অস্ত্রোপচারকারী চিকিৎসকেরা দেখেন, সমরজিতের অগ্ন্যাশয় ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছে। পাকস্থলী, যকৃৎ, প্লুরা, ডায়াফ্রাম ও ডান দিকের কিডনিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অস্ত্রোপচারে অগ্ন্যাশয়-সহ ক্ষতিগ্রস্ত অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পুনর্গঠিত ও মেরামত করা হয়। কিডনিতে আঘাত লাগায় নেফ্রোলজির চিকিৎসকেরাও তাঁকে দেখেছেন। ট্রমা কেয়ারের রেড জ়োনে থাকা ওই যুবক এ দিন নিজে থেকে উঠে বসেছেন। নিজে খাবারও খাচ্ছেন। তাঁর ভাই কৌশিক ঘোষ বলেন, ‘‘চিকিৎসকদের কাছে ছবিতে দেখি, কী ভাবে কাঠের টুকরো দাদার পেট দিয়ে ঢুকে পিঠ ফুঁড়ে বেরিয়েছে। রবিবার থেকে দাদা আস্তে আস্তে কথাও বলছে।’’ চিকিৎসকেরা জানান, শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল থাকলেও সমরজিৎকে কড়া নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)