Advertisement
E-Paper

রাজ্য-রেল বোর্ডের সাঁড়াশি চাপে মেট্রো 

কলকাতার পাতালে আতঙ্ক-সফরের ধাক্কায় সরাসরি মেট্রো-কর্তৃপক্ষের দিকে আঙুল তুলেছে রাজ্য সরকার। একটি নোটিসও দিয়েছে। আর দিল্লি থেকেই বৃহস্পতিবারের ওই বিপর্যয়ের তদন্তে মাঠে নেমেছে রেল বোর্ড।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৪:০৬
চলন্ত মেট্রোয় আগুনের ঘটনায় অসুস্থ হয়ে পড়েন প্রায় ৪০ জন যাত্রী। ছবি: এএফপি।

চলন্ত মেট্রোয় আগুনের ঘটনায় অসুস্থ হয়ে পড়েন প্রায় ৪০ জন যাত্রী। ছবি: এএফপি।

কলকাতার পাতালে আতঙ্ক-সফরের ধাক্কায় সরাসরি মেট্রো-কর্তৃপক্ষের দিকে আঙুল তুলেছে রাজ্য সরকার। একটি নোটিসও দিয়েছে। আর দিল্লি থেকেই বৃহস্পতিবারের ওই বিপর্যয়ের তদন্তে মাঠে নেমেছে রেল বোর্ড। সংশ্লিষ্ট সূত্রের পর্যবেক্ষণ, রাজ্য ও রেল বোর্ড, দু’দিক থেকেই বেজায় চাপের মুখে কলকাতা মেট্রো।

শুক্রবার সকালে কলকাতা মেট্রো রেলের জিএম পিসি মিশ্রকে দিল্লিতে তলব করেন রেল বোর্ড কর্তৃপক্ষ। ঠিক কী কারণে দুর্ঘটনা ঘটল, তাঁর কাছে তা জানতে চাওয়া হয়। সন্ধ্যায় ঘোষণা করা হয়, দেশে রেল দুর্ঘটনার তদন্ত যাঁরা করেন, সেই কমিশনার অব রেলওয়ে সেফটি-কে মেট্রো-বিভ্রাটের তদন্ত করতে বলা হয়েছে। দুপুরেই দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু বলেন, ‘‘মেট্রোর গাফিলতির বিরুদ্ধে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেবো।’’

কলকাতায় মেট্রোর মুখপাত্র অবশ্য দাবি করেন, ময়দান স্টেশনে ঢোকার মুখে এসি রেকে যে-আগুন লেগেছিল, সেটা নিছকই দুর্ঘটনা। রক্ষণাবেক্ষণের গাফিলতি নেই। ওই ট্রেনের যাত্রীদের আরও আগে উদ্ধার করা গেল না কেন, দিল্লিতে জিএমের কাছে তা জানতে চায় রেল বোর্ড। মেট্রোর রক্ষণাবেক্ষণের হাল কী, তা-ও জানতে চাওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট মহলের অভিমত, মেট্রোর ঘটনাটিকে যে তাঁরা সর্বোচ্চ পর্যায়ের গুরুত্ব দিচ্ছেন, তা বোঝাতে কসুর করছেন না রেল বোর্ড কর্তৃপক্ষ।

আরও পড়ুন: পরিকাঠামো আছে কি? মেলে না জবাব, মেট্রো-বিপর্যয়ে ভগবানই ভরসা

মেট্রোয় অগ্নিকাণ্ড ঘিরে চাপান-উতোরের প্রেক্ষিতেতেই উঠে আসছে কয়েকটি প্রশ্ন। কেন আগুন লাগল? ঠিক কী ভাবে থেমে গেল মেট্রো? এই সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন দমকল, পুলিশ বা মেট্রো-কর্তৃপক্ষ। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, কামরার ডান দিকের লাইনে আগুন দেখা গিয়েছিল (থার্ড রেলের উল্টো দিকে)। স্টেশনের মুখে এমন কিছু ঘটলে অনেক সময় চালক দ্রুত ট্রেন চালিয়ে ঢুকে যান। এ ক্ষেত্রে ট্রেন থমকে গেল কেন? মেট্রো সূত্রের দাবি, ট্রেনের সুরক্ষা ব্যবস্থার অঙ্গ ইমার্জেন্সি ব্রেকই সক্রিয় হয়ে ট্রেনটিকে রুখে দেয়। কিন্তু কেন আগুন লাগল, তা স্পষ্ট নয়। ট্রেন থামার সময় পটকা ফাটার মতো আওয়াজ পেয়েছিলেন যাত্রীরা। বিপদের সময় কামরার ডান দিকে হাতের মতো বেরিয়ে থাকা, ‘থার্ড রেল কারেন্ট কালেক্টর’-এর অংশ যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, প্রত্যক্ষদর্শীদের তোলা ছবিতেই সেটা স্পষ্ট। মেট্রোর সূত্র বলছে, ময়দান স্টেশনের কাছের ওই দিকটায় লাইনের উপরে কোনও ভারী বস্তুর সংস্পর্শেও আগুন লেগে থাকতে পারে। তবে বস্তুটা কী, তা জানা যায়নি। লাইনে কিছু পড়ে থাকলে তার দায় মেট্রো-কর্তৃপক্ষ এড়িয়ে যেতে পারেন না বলেই দমকলের একাংশের অভিমত।

আরও পড়ুন: ৪টি রেক পড়ে, ঠাঁই নেই নতুন রেকেরও

আতঙ্কিত যাত্রীদের উদ্ধারে গড়িমসির যে-অভিযোগ উঠছে, সেই বিষয়ে কী বলছেন মেট্রো-কর্তৃপক্ষ?

উদ্ধারে তাঁদের তরফে কোনও গাফিলতি দেখতে পাচ্ছেন না মেট্রোর মুখপাত্র ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘‘যাঁরা জানলা থেকে লাফিয়ে বেরোনোর চেষ্টা করছিলেন, জখম হয়েছেন তাঁরাই। অন্য যাত্রীরা অক্ষত অবস্থায় বেরিয়েছেন,’’ বলেন ইন্দ্রাণীদেবী। কিন্তু যাত্রীরা কেন কলকাতা মেট্রো রেলের উদ্ধারকাজে আস্থা রাখতে পারলেন না, দিল্লিতে সেই প্রশ্ন তুলেছেন রেল বোর্ডের কর্তারাও। রেল বোর্ডের পর্যবেক্ষণ, দেশের মধ্যে কলকাতা মেট্রোতেই বারবার এই ধরনের ঘটনা ঘটে এবং মেট্রো-কর্তৃপক্ষ তা দিল্লিতে জানান না। কেন জানান না? সদুত্তর নেই।

রাজ্য সরকার অবশ্য মেট্রোর বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলেই ক্ষান্ত হচ্ছে না। মেট্রোর বিরুদ্ধে আইনেরও দ্বারস্থ হচ্ছে তারা। দমকল আইনের ৩৫ নম্বর ধারা অনুযায়ী মেট্রো-কর্তৃপক্ষকে নোটিস পাঠিয়ে তাঁরা কী ব্যবস্থা নিয়েছিলেন, তা-ও জানতে চেয়েছে রাজ্য। মেট্রোর জবাবের ভিত্তিতেই তারা ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছে দমকল। লালবাজারে এ দিন দমকল-পুলিশের বৈঠকে ঠিক হয়েছে, মেট্রো স্টেশনের লাগোয়া থানাগুলিকে আরও সক্রিয় করা হবে।

Kolkata Metro Fire Rail Board Investigation
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy