Advertisement
E-Paper

প্রেসিডেন্সি আবার উত্তাল, সমাবর্তন সরাতে হল নন্দনে

প্রেসিডেন্সি-কর্তৃপক্ষ জানান, সাত শতাধিক পড়ুয়ার ডিগ্রি পাওয়ার কথা ছিল। নন্দনে সমাবর্তন হলেও সেগুলো দেওয়া যাচ্ছে না। শুধু সাম্মানিক ডিএসসি এবং ডিলিট ডিগ্রি দেওয়া হবে

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:৪১
করজোড়ে: গেট খোলার আর্জি এক শিক্ষিকার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

করজোড়ে: গেট খোলার আর্জি এক শিক্ষিকার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

যাদবপুর আর প্রেসিডেন্সিতে কেন এত গোলমাল, বারবার সেই বিরক্ত ও বিভ্রান্ত প্রশ্ন তুলতে দেখা গিয়েছে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে।

পড়ুয়াদের আন্দোলনে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলমাল এ বার এমনই আকার নিল যে, ক্যাম্পাসের ডিরোজিও হলে সমাবর্তনের পরিকল্পনা বাতিল করতে বাধ্য হলেন কর্তৃপক্ষ। নজিরবিহীন ভাবে নন্দনে সমাবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। আজ, মঙ্গলবার বেলা ১১টা নাগাদ নন্দন-৩ প্রেক্ষাগৃহে সমাবর্তন হবে বলে জানান রেজিস্ট্রার দেবজ্যোতি কোনার। কিন্তু আচার্য-রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী সমাবর্তনে থাকছেন না বলে রাজভবনের খবর।

প্রেসিডেন্সি-কর্তৃপক্ষ জানান, সাত শতাধিক পড়ুয়ার ডিগ্রি পাওয়ার কথা ছিল। নন্দনে সমাবর্তন হলেও সেগুলো দেওয়া যাচ্ছে না। শুধু সাম্মানিক ডিএসসি এবং ডিলিট ডিগ্রি দেওয়া হবে। আন্দোলনকারীরা প্রেসিডেন্সির মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে যে-ভাবে সমাবর্তন সরিয়ে নিতে বাধ্য করিয়েছেন, কর্তৃপক্ষ তার সম্পূর্ণ দায় চাপাচ্ছেন ওই পড়ুয়াদের উপরেই। উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়া বলেন, ‘‘এ-সব বরদাস্ত করা যায় না। যা ইচ্ছে তা-ই করবে? বিশ্ববিদ্যালয় অবরুদ্ধ করে দেবে? এটা চলতে পারে না। তাই ক্যাম্পাসে সমাবর্তন করা হবে না।’’ এ রাজ্যে ছাত্র আন্দোলনের ধাক্কায় কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন শেষ মুহূর্তে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যেতে হয়েছে কি না, তা মনে করতে পারছে না শিক্ষা শিবির।

রাজ্য সরকার যে প্রেসিডেন্সি-কর্তৃপক্ষ ও আন্দোলনকারী দু’পক্ষের প্রতিই বিরক্ত, তা স্পষ্ট করে দেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তো কারখানার গেট নয় যে, তালা লাগালাম, চলে গেলাম। আসলে ওরা এই রাজনীতি ৩৪ বছর ধরে শিখে এসেছে! সেই প্রভাব থেকে ওরা মুক্ত হতে পারেনি। কর্তৃপক্ষও প্রভাবমুক্ত হতে পারেননি। দেখছেন, কিন্তু ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না।’’

হিন্দু হস্টেল চালু করার দাবিতে ৩ অগস্ট থেকে আন্দোলন চালাচ্ছেন এক দল পড়ুয়া। ওই হস্টেল চালু না-হওয়ায় প্রেসিডেন্সি ক্যাম্পাসকেই অস্থায়ী হিন্দু হস্টেল ঘোষণা করে থাকতে শুরু করেন তাঁরা। সোমবার তাঁদের ক্ষোভ তুঙ্গে ওঠে। প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন তাঁরা। সকাল পৌনে ১০টা নাগাদ উপাচার্য অনুরাধাদেবী, রেজিস্ট্রার দেবজ্যোতি কোনার ও শিক্ষকেরা ঢুকতে গেলে আন্দোলনকারীরা বাধা দেন। চলতে থাকে স্লোগান, হাততালি। পাশের ছোট গেট দিয়ে ঢুকতে দেওয়া হয় শুধু আন্দোলনকারীদের। ঢুকতে না-পেরে উপাচার্য ও শিক্ষকেরা ফিরে যান। শিক্ষক-শিক্ষিকারা ভিতরে ঢুকতে না-পারায় এ দিন ক্লাস বন্ধ ছিল।

ছাত্র আন্দোলনের জেরে এ ভাবে পঠনপাঠন ব্যাহত হওয়ায় শিক্ষা শিবির উদ্বিগ্ন। হস্টেল সংস্কারে দেরি নিয়ে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ঢিলেমির অভিযোগ করছে ওই শিবিরও। এক দল পড়ুয়ার জন্য যে-ভাবে সমাবর্তন নিয়ে জটিলতা তৈরি হল, তার নিন্দায় মুখর হয়েছেন বিশিষ্ট জনেরা।

সমাবর্তনের আগের দিন ক্যাম্পাসে এই অস্থিরতায় কর্তৃপক্ষ আর ঝুঁকি নিতে চাননি। আচার্যকে ফোন করে উপাচার্য অনুরাধাদেবী প্রথমে জানান, আচার্য সম্মতি দিলে তাঁরা রাজভবনেই সমাবর্তন করবেন। তাঁদের মধ্যে ঠিক কী কথা হয়েছে, তা জানা যায়নি। তবে প্রেসিডেন্সি-কর্তৃপক্ষ পরে জানান, রাজভবন নয়, সমাবর্তন হবে নন্দনে। অনুরাধাদেবীকে আচার্য জানান, তিনি থাকতে পারছেন না। তাঁর তরফে উপাচার্যই যেন যথাবিহিত ভাবে সমাবর্তন সম্পন্ন করেন। রাজ্যপালের ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর, আন্দোলনের জেরে সমাবর্তন নিয়ে এই যে-টানাপড়েন, তার সঙ্গে আচার্য নিজেকে জড়াতে চাননি বলেই দূরে সরে থাকছেন।

রেজিস্ট্রার জানান, কর্তাব্যক্তিরা এ দিন ক্যাম্পাসে ঢুকতে না-পারায় গভর্নিং বোর্ডের বৈঠক হয়নি। তাই সমাবর্তনে পড়ুয়াদের ডিগ্রি দেওয়া যাবে না। কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার পরে প্রেসিডেন্সিতে এ বারেই প্রথম পিএইচ ডি ডিগ্রি দেওয়ার কথা ছিল। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ঠিক হয়েছে, বিজ্ঞানী সিএনআর রাওকে সাম্মানিক ডিএসসি এবং অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে সাম্মানিক ডিলিট দেওয়া হবে।

ছাত্রনেতা সায়ন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘সমাবর্তন আমাদের নিশানা নয়। অনির্দিষ্ট কাল ক্যাম্পাস অবরুদ্ধ করে রাখাও আমাদের উদ্দেশ্য নয়। আমরা চাই হিন্দু হস্টেল। সেটাই ফিরিয়ে দেওয়া হোক।’’ কর্তৃপক্ষ জানান, পূর্ত দফতর সংস্কারের কাজ শেষ করলে তবেই হস্টেল ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব। পড়ুয়াদের অভিযোগ, তিন বছর ধরে সংস্কার চলছে। কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছার অভাবেই কাজ শেষ হচ্ছে না। ক্যাম্পাসে দিনরাত পড়ে থাকায় কয়েক জন পড়ুয়ার ম্যালেরিয়া এবং ভাইরাল জ্বর হয়েছে। তাঁদের দাবি, হিন্দু হস্টেলের একটি অংশ তো প্রায় প্রস্তুত হয়ে গিয়েছে। সেখানে অন্তত থাকতে দেওয়া হোক।

‘‘হস্টেলের ব্যাপারে আমি খুব পরিষ্কার। মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এটা দেখতে হবে। হস্টেলটা যাতে দ্রুত সংস্কার করা হয়, তার ব্যবস্থা করতে হবে,’’ বলেন শিক্ষামন্ত্রী।

তিনি কি মঙ্গলবার নন্দনের সমাবর্তনে থাকবেন?

পার্থবাবু জানিয়ে দেন, তাঁকে ওই অনুষ্ঠানে আদৌ আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে কি না, সোমবার রাত পর্যন্ত তিনি তো সেটাই জানেন না! এমনকি অবরুদ্ধ ক্যাম্পাসে সারা দিনের গোলমাল, আচার্য-উপাচার্য সংবাদের বিষয়েও সরকারি ভাবে তাঁকে কিছু জানানো হয়নি।

Presudency University Protest Student Hindu Hostel Convocation Nandan
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy