আইসিএসই এবং আইএসসি পাশ করার উদ্যাপন ক্যামেরাবন্দি করা হচ্ছে প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের একটি স্কুলে। ছবি: সুমন বল্লভ
কলকাতায় ৯৯ শতাংশের বেশি নম্বর পেয়েছে একাধিক স্কুলের পরীক্ষার্থীরা। ৯০ শতাংশের বেশি নম্বরেরও ছড়াছড়ি। করোনাকালে আইসিএসই এবং আইএসসি-র বিশেষ মূল্যায়নে খুশি অনেকেই। কিছু পরীক্ষার্থীর অবশ্য বক্তব্য, আইসিএসই এবং আইএসসি-র মতো গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার ফল স্কুল-ভিত্তিক হয়ে গেল। যে সমস্ত স্কুলের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষায় সহজ প্রশ্ন এসেছে, তাদের নম্বর বেশি উঠেছে। আবার যে সমস্ত স্কুলে প্রশ্ন কঠিন হয়েছে, সেখানে তত নম্বর ওঠেনি। বেশ কিছু পরীক্ষার্থীর ধারণা, পরীক্ষা দিলে তারা হয়তো চার-পাঁচ শতাংশ বেশি পেত।
পরীক্ষা বাতিল হওয়ায় আইসিএসই এবং আইএসসি-তে এ বার বিশেষ পদ্ধতিতে মূল্যায়ন হয়েছে। আইসিএসই-র ক্ষেত্রে স্কুলের নবম ও দশম শ্রেণির সারা বছরের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা, ২০২১ সালের প্রজেক্ট এবং প্র্যাক্টিক্যাল পরীক্ষার নম্বরের ভিত্তিতেই মূল্যায়ন করা হয়েছে। অন্য দিকে, আইএসসি-র ক্ষেত্রে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে স্কুলের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা, দশম শ্রেণির সেরা চার বিষয়ের পরীক্ষার নম্বর, ইংরেজির নম্বর এবং ২০২১ সালের প্র্যাক্টিক্যাল ও প্রজেক্টের নম্বরের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হয়েছে।
মডার্ন হাইস্কুলের ডিরেক্টর দেবী কর জানিয়েছেন, নতুন পদ্ধতিতে মূল্যায়নের পরে তাঁদের স্কুলের ফলাফল অন্যান্য বারের প্রথাগত লিখিত পরীক্ষার মতোই হয়েছে। তফাত বিশেষ নেই। ওই স্কুলে
আইএসসি-তে সর্বোচ্চ ৯৯.৫ শতাংশ পেয়েছে তিন জন। আবার আইসিএসই-তে সর্বোচ্চ নম্বর ৯৯.৪ শতাংশও পেয়েছে তিন জন পরীক্ষার্থী। আইএসসি-তে ওই স্কুলে গড় নম্বর উঠেছে ৯৪.৩ শতাংশ। আর আইসিএসই-তে ৯৩.৪ শতাংশ। দেবী কর বলেন, “নতুন এই পদ্ধতিতে একটি পরীক্ষার উপরে নির্ভর করে এক জনের মূল্যায়ন হল না। বরং এক জন পরীক্ষার্থীর ধারাবাহিকতার মূল্যায়ন হল। এই মূল্যায়ন পদ্ধতি খুবই ভাল।”
লা মার্টিনিয়ার স্কুল ফর গার্লসে আইসিএসই-তে সর্বোচ্চ নম্বর উঠেছে ৯৮.৮ শতাংশ। আইএসসি-র সর্বোচ্চ নম্বর ৯৯ শতাংশ। হেরিটেজ স্কুলে আইএসসি-তে সর্বোচ্চ নম্বর উঠেছে ৯৯.৭৫ শতাংশ এবং আইসিএসই-তে ৯৮.৮ শতাংশ। ডন বস্কো স্কুলে আইসিএসই-তে সর্বোচ্চ নম্বর উঠেছে ৯৯.৪০ শতাংশ, আইএসসি-তে ৯৯.২৫ শতাংশ। ওই স্কুলের প্রিন্সিপ্যাল, ফাদার বিকাশ মণ্ডল বলেন, “আমাদের স্কুলে অভ্যন্তরীণ মূল্যায়নে কড়াকড়ি হয়। প্রশ্ন কঠিন হয়। ছেলেরা স্কুলের পরীক্ষার থেকে বোর্ডের পরীক্ষায় বেশি নম্বর পায়। এ বারের মূল্যায়ন যে হেতু প্রায় পুরোটাই স্কুলের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষার উপরে ভিত্তি করে হয়েছে, তাতে মনে হয়, পরীক্ষা হলে আমাদের স্কুলের সার্বিক ফল আরও ভাল হতে পারত।” সেন্ট জ়েভিয়ার্স কলেজিয়েট স্কুলের প্রিন্সিপ্যাল, ফাদার থমাসিন আরুলাপ্পান বলেন, “আমাদের স্কুলে আইসিএসই-তে সর্বোচ্চ নম্বর ৯৮.৮০ শতাংশ পেয়েছে তিন জন। আইএসসি-তে সর্বোচ্চ নম্বর উঠেছে ৯৮.২৫ শতাংশ। নতুন মূল্যায়নে দুই পরীক্ষার ফলই সার্বিক ভাবে ভাল হয়েছে।”
পরীক্ষার ফল ওয়েবসাইটে দেখা গেলেও এ দিন পরীক্ষার্থীরা অনেকেই স্কুলে চলে আসে। উত্তর কলকাতার একটি স্কুলে আসা এমনই কিছু পরীক্ষার্থী জানাল, তারা নিজেদের নম্বরে খুশি। দক্ষিণ কলকাতার রামমোহন মিশন হাইস্কুলের প্রিন্সিপ্যাল সুজয় বিশ্বাস বললেন, “বহু দিন বাদে অনেকেই অভিভাবকদের নিয়ে স্কুলে এসেছিল। আমাদের স্কুলের সার্বিক ফল ভাল হয়েছে। নতুন মূল্যায়নে যে ফল হয়েছে, লিখিত পরীক্ষা হলে মোটামুটি এমনই হত।”
নতুন মূল্যায়নে মাঝারি মানের পড়ুয়াদের ফল ভাল হলেও মেধাবী পড়ুয়ারা কেউ কেউ মনে করছে, ফল আরও ভাল হতে পারত। এমনটাই জানালেন ন্যাশনাল ইংলিশ স্কুলের প্রিন্সিপ্যাল মৌসুমী সাহা। তিনি বলেন, “কিছু কিছু মেধাবী পড়ুয়া ফোন করে বলছে, তাদের ফল ভাল হয়েছে। কিন্তু লিখিত পরীক্ষা হলে আরও ভাল হতে পারত।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy