Advertisement
০৩ মে ২০২৪
Study Cicle

খিদিরপুরের অবস্থানেও পাঠচর্চা

এ দিন দেখা গেল, পার্ক সার্কাসের আদলে খিদিরপুরেও অবস্থানকারীদের জন্য একটি পাঠচর্চার কোণ তৈরি করা হচ্ছে।

 নবাব আলি পার্কে পড়ার জায়গা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায়। ছবি: সুমন বল্লভ

নবাব আলি পার্কে পড়ার জায়গা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায়। ছবি: সুমন বল্লভ

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৪:২১
Share: Save:

পথ দেখিয়েছিল পার্ক সার্কাস। কিন্তু সেই প্রতিবাদের রং ক্রমশ ছড়িয়ে পড়েছে শহর জুড়ে। মঙ্গলবার বিকেলে তার আঁচ পড়ল খিদিরপুরের নবাব আলি পার্কেও। সেখানেও বেশ কয়েক দিন ধরে পার্কে অবস্থানে শামিল হয়েছিলেন প্রতিবাদীরা। এ দিন দেখা গেল, পার্ক সার্কাসের আদলে খিদিরপুরেও অবস্থানকারীদের জন্য একটি পাঠচর্চার কোণ তৈরি করা হচ্ছে।

ইদানীং পার্ক সার্কাসের মাঠে গেলেই যে কোনও সন্ধ্যায় দেখা যাচ্ছে, বই নিয়ে মগ্ন বি-কম পড়ুয়া এক তরুণকে। গলায় ক্রুশচিহ্ন, কপালে তিলক ও মাথায় ফেজ় টুপিতে সেজে আসা ওই যুবককে নাম জিজ্ঞাসা করলেই গম্ভীর মুখে বলেন, ‘‘জাভেদ খান চৌরাসিয়া রবার্ট।’’ গত কয়েক দিনে পার্ক সার্কাসে বসেই সীমান্ত গাঁধীকে নিয়ে লেখা রাজমোহন গাঁধীর বইটির অর্ধেকের বেশি পড়ে ফেলেছেন তিনি। এ দিন দেখা গেল, প্রতিবাদীদের বই দিতে ইচ্ছুক সহমর্মীরা অনেকেই পার্ক সার্কাসের মাঠে খিদিরপুরের খবর পেয়ে সে দিকে গেলেন। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতার শিক্ষক মহম্মদ রিয়াজ় বেশ উজ্জীবিত। বললেন, ‘‘আমরা ডাক দিতেই এতটা সাড়া পাব, ভাবিনি!’’

এর আগে পার্ক সার্কাসে বই দিতে এগিয়ে এসেছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপিকা সজনী মুখোপাধ্যায়, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তাজুদ্দিন আহমেদের মতো অনেকে। খিদিরপুরে এ দিন সন্ধ্যায় ‘রিডার্স কর্নার’ শুরু হওয়া মাত্র বাংলা, ইংরেজি, হিন্দি, উর্দু— বিভিন্ন ভাষার বই জমা পড়েছে। বইয়ের তালিকায় নির্মলা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পরিবার, কাজ ও মেয়েরা’ কিংবা সুকান্ত চৌধুরীর ‘নগর ও নাগরিক’-এর মতো সমাজতত্ত্ব বা অর্থনীতির বইও আছে। আবার এনআরসি প্রতিরোধের বিভিন্ন

মঞ্চের ডাকে সচেতনতামূলক পুস্তিকারও ছড়াছড়ি। দিল্লির শাহিনবাগের পথ ধরে কলকাতায় বিভিন্ন অবস্থানের এক মাস হতে চলল। জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের উপরে হামলার পরেই ধৈর্যের বাঁধ ভেঙেছিল কলকাতার। প্রতিবাদীরা বলছেন, ‘‘এটা ভাববেন না, আমরা শুধু বসে আছি বা স্লোগান-বক্তৃতার মধ্যে দিন কাটাচ্ছি।’’ পার্ক সার্কাসের মাঠে মসজিদের দিকের দেওয়ালে কিছু দিন হল রেখায়-রঙে প্রতিবাদের ভাষা ফুটিয়ে তুলছেন অনামী শিল্পীরা। আবার খিদিরপুরে

প্রতিবাদীরা মেতেছেন ‘রাইট ইয়োর রাইটস’ বলে খেলাচ্ছলে নিজেদের অধিকার লেখার এক প্রতিযোগিতায়। ইতিমধ্যে সাদা এবং গেরুয়া— দু’ফালি কাপড়ে যা খুশি লিখতে বলা হয়েছিল অবস্থানকারীদের। তাতে দেখা যাচ্ছে, কেউ ইংরেজিতে রবীন্দ্রনাথের ‘চিত্ত যেথা ভয়শূন্য’র ভাষান্তরটি গোটা গোটা করে লিখেছেন। বাংলায় লেখা নজরুলের উদ্ধৃতি, ‘বিদ্রোহী রণক্লান্ত, আমি সেই দিন হব শান্ত / যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দনরোল আকাশে-বাতাসে ধ্বনিবে না!’ এর পরে একটি সবুজ কাপড়েও উর্দু, হিন্দি, বাংলা, ইংরেজিতে মনের কথা লেখা হবে। রাজাবাজার, বেলাগাছিয়া-সহ নানা জায়গায় অবস্থান চলছে। পাটুলিতেও প্রতিরোধ মঞ্চ গড়েছেন বাসিন্দারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Khidirpore Study Circle
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE