Advertisement
E-Paper

সিঁদুরে মেঘের আতঙ্কে সিন্ডিকেট

বার্তাটি যেন রটে গিয়েছে ক্রমে! তাই, ঝাঁপে লাঠি। সিন্ডিকেটের জুলুম বন্ধ করতে পুলিশকে ইতিমধ্যেই নির্দেশ দিয়েছে নবান্নের শীর্ষ স্তর। তোলাবাজি, হুমকির অভিযোগে জেলে ভরা হয়েছে সল্টলেকের কাউন্সিলর অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়কে।

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায় ও কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৬ ০১:০৭

বার্তাটি যেন রটে গিয়েছে ক্রমে! তাই, ঝাঁপে লাঠি।

সিন্ডিকেটের জুলুম বন্ধ করতে পুলিশকে ইতিমধ্যেই নির্দেশ দিয়েছে নবান্নের শীর্ষ স্তর। তোলাবাজি, হুমকির অভিযোগে জেলে ভরা হয়েছে সল্টলেকের কাউন্সিলর অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়কে। বৃহস্পতিবার গ্রেফতার হল তাঁর দুই শাগরেদকেও। নিউ টাউনের খবর, প্রশাসন যে সিন্ডিকেট-রাজে লাগাম পরাতে চাইছে, তা বুঝতে পেরেছেন এলাকার চাঁইয়েরা। তাই আপাতত আড়ালেই রয়েছেন তাঁরা।

বৃহস্পতিবার নিউ টাউন-রাজারহাটের ইমারতি সিন্ডিকেটের আখড়াগুলিতেও একই দৃশ্য।

নিউ টাউনের বড় এক সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রক থাকদাঁড়ি এলাকা। যে সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রক শাসক দলের ঘনিষ্ঠ সমীর সর্দার ওরফে ভজাই। এতকাল দিনভর থাকদাঁড়ি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পাশে ভজাইয়ের অফিসের চত্বরে ভিড় করে থাকতেন স্থানীয় যুবকেরা। এ দিন কিন্তু সেই ছেলেদের দল উধাও। দেখা নেই ভজাইয়েরও। তাঁর তিন-তিনটি মোবাইল ফোনের সব ক’টিই বন্ধ। অফিসের অদূরেই দেখা মিলল তিন যুবকের। ভজাই কোথায়? এক যুবকের জবাব, ‘‘জানি না।’’ সিন্ডিকেট নিয়ে প্রশ্ন করতেই আর কথা বাড়াতে চাইলেন না ওই যুবকেরা।

নিউ টাউনের যেমন ভজাই, তেমনই রাজারহাটের চাঁদপুর পঞ্চায়েত এলাকায় সিন্ডিকেট বললেই উঠে আসে গফ্‌ফর মোল্লার নাম। তাঁর বাড়ির সামনেও দিনভর সিন্ডিকেট-চক্রে জড়িত যুবকদের আনাগোনা লেগে থাকত। এ দিন সেখানেও জনমনিষ্যির দেখা নেই। বাড়িতে যেতে পরিবারের লোকেরা জানালেন, গফ্‌ফর সকালে বেরিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু কোথায়? মোবাইলে ধরা যাবে কি? সে সবের কিছুই জানাতে পারেননি বাড়ির লোক। ফোনে সাড়া মেলেনি নিউ টাউনের আর এক সিন্ডিকেট চাঁই সইফুলেরও। বারবার ফোন করার চেষ্টা হলেও এক বারের জন্যও লাইন মেলেনি।

রাজারহাট-নিউ টাউনের ইমারতি সিন্ডিকেট কারবারে জড়িত অনেকেই জানান— এই ব্যবসা নিয়ে প্রশাসন যে এ বার কড়া ব্যবস্থা নেবে, তা ভোটের পর থেকেই আঁচ করতে পেরেছিলেন অনেকে। কিন্তু তার শুরুটা যে একেবারে কাউন্সিলরকে দিয়ে হবে, তা ভাবতে পারেননি চাঁইয়েরা। অনিন্দ্য গ্রেফতারের পরেই অবশ্য তাঁরা বুঝতে পেরেছেন, এ বার সিন্ডিকেট-রাজে লাগাম পরাতে পুলিশ-প্রশাসন কোমর বেঁধেছে। কাউন্সিলর যখন গ্রেফতার হন, তখন চাঁইদের গ্রেফতার করতে পুলিশ দু’মিনিটও ভাববে না— এমন আশঙ্কা থেকেই ভজাই-গফফর-সইফুলেরা লোকচক্ষুর আড়ালে থাকতে চাইছেন বলে ধারণা অনেকের।

এলাকার সিন্ডিকেটের হাঁড়ির খবর রাখা এক রাজনৈতিক কর্মীর কথায়, ‘‘শোনা যাচ্ছে, পুলিশ নাকি সিন্ডিকেট সদস্যদের নামের তালিকা তৈরি করেছে। তা ধরে ধরেই এ বার জেলে পোরা হবে।’’ পুলিশ সূত্রে অবশ্য এমন তালিকার কথা স্বীকার করা হয়নি। তবে ইতিমধ্যেই নিউ টাউনের সিন্ডিকেট চক্রের সঙ্গে জড়িত এবং দুষ্কৃতী হিসেবে পরিচিত রুইস মণ্ডলকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

‘‘নিউ টাউনে জুলুমবাজি রুখতে অভিযুক্তদের তালিকা তৈরি হবে আর তাতে রুইসের নাম থাকবে না, এমনটা হতে পারে না। রুইসের গ্রেফতারের পরে সিন্ডিকেটের মধ্যে আরও বেশি করে ভয় ঢুকেছে,’’ বলছেন ওই এলাকার শাসক দলের এক নেতা।

অনেকে অবশ্য বলছেন, ভজাই-রুইসদের মতো সিন্ডিকেট চাঁইদের আগেও গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। কিন্তু বিষয়টি একটু থিতিয়ে যেতেই জামিনে ছাড়া পেতেন ওঁরা। তার পরে ফের রাজারহাট-নিউ টাউনে ফিরে আসত সিন্ডিকেটের জুলুমবাজি। এ বারও ফের তেমনটা হবে না তো?

প্রশ্নটা ঘুরপাক খাচ্ছে নিউ টাউনে।

Syndicate
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy