পরিবারকে হারানোর পরে পুজোর আগে ‘নতুন ঠিকানা’ পাচ্ছে ট্যাংরার দে পরিবারের কিশোর। হাসপাতাল ও সরকারি হোমে কাটিয়ে অবশেষে সাত মাস পরে সে যেতে চলেছে নতুন ঠিকানায়। আইনি এবং প্রশাসনিক সমস্ত প্রক্রিয়া কার্যত শেষ। হোমে এসে কিশোরের সঙ্গে দেখাও করে গিয়েছেন দাদু-দিদিমা (কিশোরের কাকিমার বাবা-মা)। সব কিছু ঠিক থাকলে দাদু-দিদিমার সঙ্গে নতুন ঠিকানায় পুজো কাটাবে সে।
ফেব্রুয়ারির এক রাতে তছনছ হয়ে গিয়েছিল ট্যাংরার দে পরিবারের ১৪ বছরের ওই কিশোরের জীবন। মা-কাকিমা এবং বোনের মৃত্যু দেখেছিল সদ্য কৈশোরে পা দেওয়া ছেলেটি। এক রাতে পরিবারের প্রিয় সবাইকে হারিয়ে বাঁচার শেষ ইচ্ছেটুকু তার ছিল না বলে শিশু সুরক্ষা কমিশনের প্রতিনিধিদের জানিয়েছিল কিশোর। বেঁচে থেকে আর কী হবে?— এই ভেবেই বাবা এবং কাকার সঙ্গে আত্মহত্যায় রাজি হয়ে গিয়েছিল সে। কিশোরকে সঙ্গে নিয়ে তার বাবা-কাকা গাড়ি করে সে রাতে বেরিয়েছিল। তাকে সঙ্গে নিয়ে পরিকল্পনামাফিক ই এম বাইপাসে মেট্রোর স্তম্ভে ধাক্কাও দেয় গাড়িটি।
১৯ ফেব্রুয়ারি রাতে এই ‘দুর্ঘটনা’য় আহতদের উদ্ধার করতে গিয়ে ট্যাংরার বাড়িতে পরিবারের বাকি তিন জনের দেহ পড়ে থাকার কথা জানতে পেরেছিল পুলিশ। দুর্ঘটনায় আহত কিশোরের বাবা প্রণয় দে, কাকা প্রসূন দে পুলিশকে সে কথা জানিয়েছিলেন। ট্যাংরা থানার পুলিশ দে পরিবারের তেতলা বাড়িতে গিয়ে একে একে উদ্ধার করে কিশোরের মা সুদেষ্ণা, কাকিমা রোমি এবং বোন প্রিয়ম্বদার নিথর দেহ।
দুর্ঘটনায় আহত কিশোর-সহ তিন জনকে ই এম বাইপাসের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল প্রথমে। পরে তাদের এন আর এস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বাবা-কাকার সঙ্গে সেখানেই ছিল কিশোর। পরে পরিবারের তিন সদস্যকে খুনের অভিযোগে কিশোরের বাবা প্রণয় এবং কাকা প্রসূনকে গ্রেফতার করে ট্যাংরা থানা। দু’জনেই জেল হেফাজতে।
বাবা-কাকার গ্রেফতারির পরে ‘অনাথ’ হয়ে যাওয়া কিশোরের দায়িত্ব নিতে আত্মীয়দের তরফে কেউ এগিয়ে আসেননি প্রথমে। কিশোরের মামাকে রাজি করানোর চেষ্টা হলেও বিফল হয় পুলিশ। বার বার চেষ্টা করেও বিফল হয়েছিল রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনও। বাধ্য হয়ে কিশোরকে সরকারি হোমে রাখতে হয়। গত চার মাসের বেশি সময় ধরে সেই হোমই কিশোরের ঠিকানা। যদিও রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনের তরফে কিশোরের ‘নতুন ঠিকানা’র ব্যবস্থা করতে তার কাকিমার বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলা হয়। তাঁরা রাজি হয়েছেন বলে জানানো হয়েছিল। যদিও আইনি প্রক্রিয়ার কারণে কিশোরকে সেই দাদু-দিদিমার সঙ্গে নতুন ঠিকানায় ফেরানো যায়নি। অবশেষে প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে।
জানা গিয়েছে, কিশোরের ভরণ-পোষণের জন্য মাসে চার হাজার টাকা সরকারি সাহায্যের ব্যবস্থা হয়েছে। কিশোরের বয়স ১৮ বছর না হওয়া পর্যন্ত দাদু-দিদিমা এই সাহায্য পাবেন। আরও কী ভাবে ওই কিশোরের পাশে থাকা যায়, সেই চেষ্টা করা হচ্ছে। দাদু-দিদিমা একাধিক বার কিশোরের সঙ্গে হোমে এসে দেখাও করেছেন। গত সপ্তাহেও এসেছিলেন। সিডব্লিউসি (কলকাতা)-র চেয়ারপার্সন মহুয়া শূর বলেন, ‘‘আমরা প্রথম থেকেই চেয়েছিলাম ছেলেটি ওর পরিজনদের ফিরে পাক। আপাতত সব প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। দাদু-দিদিমাও এসে দেখা করে গিয়েছেন। আমরাও সব রকম ভাবে কিশোরের পাশে আছি। আশা করছি পুজো ও দাদু-দিদিমার সঙ্গে কাটাবে।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)