Advertisement
E-Paper

দশ দিন পরে খোঁজ মিলল শিক্ষকের

পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুরের একটি গ্রামের বাসিন্দা বিপ্লব এখন শারীরিক এবং মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত। বাড়ি ফেরার পরে কোনও কথা বলছেন না তিনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৯ ০১:৩৪
মেধাবী ছাত্র ও গুণী শিক্ষকের এমন অন্তর্ধান চিন্তায় রেখেছে পরিজনদের।

মেধাবী ছাত্র ও গুণী শিক্ষকের এমন অন্তর্ধান চিন্তায় রেখেছে পরিজনদের।

বেরিয়েছিলেন বাড়ি ফিরবেন বলে। কিন্তু বাড়িতে তো নয়ই, কোনও আত্মীয়ের বাড়িতেও যাননি নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন বিবেকানন্দ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মানুষটি। থানার দ্বারস্থ হয়েও খোঁজ মেলেনি তাঁর। মাঝে মোবাইলের টাওয়ার জানায়, তিনি বারাণসীতে। কিন্তু সেখানে গিয়েও তাঁর সন্ধান মেলেনি। শেষ পর্যন্ত দিন দশেক পরে, গত শনিবার বিধ্বস্ত অবস্থায় বাড়ি ফিরেছেন ওই শিক্ষক বিপ্লব পাল।

পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুরের একটি গ্রামের বাসিন্দা বিপ্লব এখন শারীরিক এবং মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত। বাড়ি ফেরার পরে কোনও কথা বলছেন না তিনি। মোবাইল, ব্যাঙ্কের ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড সহ কোনও নথিও ছিল না তাঁর কাছে। সেগুলি খোয়া গিয়েছে, না চুরি হয়েছে, তা বলতে পারছেন না বিপ্লব। তবে তাঁর কাছে বারাণসী থেকে ফেরার ট্রেনের টিকিট মিলেছে। যদিও কী ভাবে বিপ্লব বারাণসী পৌঁছলেন, সে বিষয়ে কিছুই জানাতে পারেননি।

দুর্গাপুরের লাউদোহার পানশিউলি গ্রামে বাড়ি বিপ্লবের। কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এগ্রিকালচারে পিএইচডি করেছেন তিনি। তিনি মেধাবী ছাত্র হিসেবে পরিচিত। দিদি মল্লিকা পাল জানিয়েছেন, মাস সাতেক আগে নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন বিবেকানন্দ বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি পান বিপ্লব। নরেন্দ্রপুরেই একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন।

আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

মল্লিকা জানান, গত ১৪ মার্চ বাড়ি যাওয়ার জন্য ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়েছিলেন বিপ্লব। সে দিন তাঁর বাড়ি ফেরার কথা ছিল না। সহকর্মীদের বলেছিলেন, বাড়ি ফিরে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। কিন্তু সহকর্মীরা বিপ্লবের কোনও খবর না পেয়ে তাঁর বাড়িতে যোগাযোগ করেন। বাড়ির লোকজন সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজ করেন। কিন্তু, কোথাও সন্ধান মেলেনি ওই শিক্ষকের।

পরদিন নরেন্দ্রপুরে চলে আসেন বিপ্লবের বাড়ির লোকেরা। কোনও খোঁজ না পাওয়ায় শেষমেশ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হন তাঁরা। কর্তৃপক্ষের পরামর্শেই দু’দিন পরে নরেন্দ্রপুর থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন। সম্প্রতি এক পরিচিতের মাধ্যমে বিপ্লবের বাড়ির লোকজন জানতে পারেন হ্যাম রেডিয়ো ক্লাবের কথা। মল্লিকা জানান, এর পরেই তিনি হ্যাম রেডিয়ো ক্লাবের ওয়েবসাইটে বিপ্লবের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি নথিভুক্ত করেন।

ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিয়ো ক্লাবের সম্পাদক অম্বরীশ নাগবিশ্বাস বলেন, ‘‘আমরা দেখি, বিপ্লবের দু’টি মোবাইলই বন্ধ। দু’টি নম্বরেই এসএমএস পাঠিয়ে রাখি। দিন ছয়েক আগে ভোরে একটি নম্বর থেকে এসএমএস ডেলিভারি রিপোর্ট পাই। দেখা যায়, ওই মোবাইলটি রয়েছে বারাণসীতে।’’ অম্বরীশবাবু জানান, এর পরেই তাঁরা বারাণসী পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

এ দিকে বিষয়টি জানার পরে বিপ্লবের বাড়ির লোকেরাও বারাণসী রওনা দেন। কিন্তু, সেখানে তাঁর খোঁজ মেলেনি। বারাণসীর যে ঘাটের কাছে মোবাইল টাওয়ারের অবস্থান দেখিয়েছিল, সেই ঘাট-সহ আশপাশের সব ঘাট ঢুঁড়েও পুলিশ খুঁজে পায়নি বিপ্লবকে। মল্লিকা জানান, সেখানকার থানায় সব কাগজ এবং ভাইয়ের ছবি জমা দিয়ে ফিরে আসেন তাঁরা।

কিন্তু, কয়েক দিন কেটে গেলেও বিপ্লবের খোঁজ না পেয়ে ভেঙে পড়েন বাড়ির লোকেরা। অম্বরীশবাবু জানান, এক বারই মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন পাওয়া গিয়েছিল। তার পর থেকে ফের মোবাইল বন্ধ। মল্লিকা বলেন, ‘‘শনিবার দুপুরে ভাই নিজেই ফিরে আসে। ও কথা বলতে পারছে না। মনে হচ্ছে, ওর উপর দিয়ে ঝড় বয়ে গিয়েছে। চিকিৎসা শুরু হয়েছে।’’

বিপ্লবের পরিবারের লোকেরা জানিয়েছেন, খুব চাপে থাকলে তিনি বাড়ি ফিরে আসতেন। বাড়ির লোকেরা মনে করছেন, হয়তো নিজে থেকেই বারাণসী গিয়েছিলেন বিপ্লব। সেখানে বা পথে কারও খপ্পরে পড়ে সব খোয়ান। বিপ্লব সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত রহস্য ভেদে অপেক্ষা ছাড়া আর কোনও পথ দেখছেন না তাঁর আত্মীয়েরা।

Narendrapore নরেন্দ্রপুর Mental Stress Disappearance
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy