একটি দুর্ঘটনা থমকে দিয়েছিল জীবনের সাঁতার! অসাড় শরীরে সঙ্গী হয়েছিল বিছানা। হাত-পায়ের সাড় ফিরে আবার উঠে দাঁড়াতে পারবেন কি না, তা নিয়ে দেখা দিয়েছিল সংশয়। কিন্তু অদম্য ইচ্ছাশক্তির কাছে হার মেনেছে সব বাধা। এসএসকেএম হাসপাতালের চিকিৎসায় হাত-পা কিছুটা সচল হতেই ফের স্বাভাবিক জীবনে ফেরার চেষ্টা শুরু করেছেন ভবানীপুরের অভিষেক চট্টোপাধ্যায়। করোনা-কালে ঘরে বসেই তিন পড়ুয়াকে নিয়ে শুরু করেছেন অনলাইন ক্লাস। অবসর সময়ে সুর তুলছেন বেহালায়।
২০১৮ সালের জুন মাস। সাঁতার কাটতে গিয়েই বদলে গিয়েছিল রুবি পার্কের বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের শিক্ষক অভিষেকের জীবন। জলে ঝাঁপ দিতেই সুইমিং পুলের নীচের কংক্রিটে ধাক্কা লাগে। গুরুতর চোট পান ঘাড়ে। মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয় মেরুদণ্ড। অসাড় হয়ে যায় গোটা শরীর। দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে অস্ত্রোপচারে তেমন কোনও উন্নতি না হওয়ায় একমাত্র ছেলেকে ভেলোরে নিয়ে যান বাবা প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিন মাস সেখানে চলে চিকিৎসা। হাতে সামান্য জোর ফিরলেও শরীরের নীচের অংশ তখনও অসাড়। অগত্যা কলকাতায় বাড়িতে ফিরে আসেন অভিষেক। বিছানাতেই কাটে আরও তিন মাস। কোমরে হয়ে গিয়েছিল বেডসোর।
এক দিকে সেই ক্ষতের ব্যথা-বেদনা, অন্য দিকে হাত-পায়ের শক্তি ফিরে না আসার মানসিক যন্ত্রণায় ক্রমশ ভেঙে পড়তে থাকেন অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস, ট্রেকিংয়ে অংশ নেওয়া অভিষেক। বললেন, ‘‘একটা সময়ে মানসিক জোরটাও একেবারে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছিল।’’ ২০১৯ –এর মে থেকে ফের শুরু হয় লড়াই। এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি হয়ে ফিজ়িক্যাল মেডিসিন বিভাগে চিকিৎসা শুরু হয় অভিষেকের। ওই বিভাগের প্রধান চিকিৎসক রাজেশ প্রামাণিক বলেন, ‘‘একটা তরতাজা জীবন স্তব্ধ হতে বসেছিল। তাই লড়াইটা শক্ত ছিল। কিন্তু রোগী ও চিকিৎসক উভয়ের ইচ্ছাশক্তিই আজকের সাফল্য এনেছে।’’