ভেঙে যাওয়া সেই জানলা। সোমবার। — নিজস্ব চিত্র
চারতলা বাড়ির একতলার ফ্ল্যাট। সেখানে একা থাকেন ৭৯ বছরের বৃদ্ধা অঞ্জলি ঘোষ।
পাড়ায় কালীপুজো। ফ্ল্যাটের জানলার গায়েই জলসার মঞ্চ বাঁধা। অভিযোগ, নিয়মের তোয়াক্কা না করে রাত দশটার পরেও সেই জলসায় মাইক বাজছিল তারস্বরে। রবিবার রাতে প্রতিবাদ করেছিলেন দোতলার বাসিন্দা অঞ্জলিদেবীর ছেলে বাসুদেব ঘোষ। সোমবার সকালে দেখা যায়, ‘কে বা কারা’ ভেঙে দিয়ে গিয়েছে অঞ্জলিদেবীর জানলার কাচ। কাচ ভেঙেছে বাসুদেববাবুর দোতলার ফ্ল্যাটের জানলারও। গড়িয়াহাট এলাকার বালিগঞ্জ প্লেসের ঘটনা।
বাসুদেববাবুর স্ত্রী কেয়া চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘রাতে বারংবার গড়িয়াহাট থানায় ফোন করি, অথচ কোনও পুলিশ আসেনি। তখন বাধ্য হয়ে ফোন করি কলকাতা পুলিশের সাউথ-ইস্ট বিভাগের কন্ট্রোল রুমে। তার পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। আর গড়িয়াহাট থানা থেকে আমাদের বলা হয়, কালীপুজোর সময়ে এই রকম একটু হয়, মেনে নিন না।’’
আইনের রক্ষক যাঁরা, তাঁরা নিজেরাই কী করে এ ভাবে মুখ বুজে মেনে নিতে বলেন?
কলকাতা পুলিশের ডিসি (সাউথ-ইস্ট) গৌরব শর্মা বলেন, ‘‘যাঁরা এই অভিযোগ করছেন, তাঁরা আমার কাছে এসে লিখিত অভিযোগ জানালে আমরা তদন্ত করে দেখব।’’
অভিযোগ, রাত দশটার অনেক পরেও মাইক বেজেছে। বাসুদেববাবু বারবার অনুরোধ করাতেও তা থামেনি। গৌরব শর্মার কথায়, ‘‘মাইক বাজানোর খবর পাওয়া মাত্র থানা থেকে পুলিশ গিয়ে বন্ধ করে দেয়।’’ সোমবার সকালে গড়িয়াহাট থানায় গিয়ে বাসুদেববাবু লিখিত অভিযোগও জানিয়েছেন। তবে সেই অভিযোগে নির্দিষ্ট করে পাড়ার ক্লাবের নাম বা কোনও ব্যক্তির নাম তিনি উল্লেখ করেননি। শুধু জানিয়েছেন, অপরিচিত কিছু যুবক তাঁর বাড়ি লক্ষ করে ইট ছুড়ে কাচ ভেঙে দিয়েছে।
যে পুজো কমিটির বিরুদ্ধে রাত পর্যন্ত মাইক বাজানোর এই অভিযোগ, তার কর্মকর্তা রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন, কাচ ভাঙার সঙ্গে পুজো কমিটি বা ক্লাবের কেউ যুক্ত নন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘শ্রোতাদের সঙ্গে বাসুদেববাবু এবং তাঁর স্ত্রী কেয়াদেবীর বচসা হয়। তাঁদেরই কেউ হয়তো করে থাকবেন।’’ রাত দশটার পরেও কেন জলসা চলছিল? এ প্রশ্নের উত্তরে রাহুলবাবুর দাবি, একটা অনুষ্ঠান চললে দুম করে বন্ধ করে দেওয়া যায় না। অভিযোগ পাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
যুগ্ম কমিশনার (সদর) সুপ্রতিম সরকার বলেন, ‘‘ঘটনার তদন্ত হচ্ছে।’’
এ দিন অঞ্জলিদেবীর ফ্ল্যাটে গিয়ে দেখা যায়, ঘরে খাটের পাশে জানলার কাচ ভাঙা। অঞ্জলিদেবী বলেন, ‘‘শেষ রাতে কাচ ভাঙার আওয়াজে আচমকাই ঘুম ভেঙে যায়। ঘরের আলো না জ্বেলে চুপ করে শুয়ে থাকি। আলো ফুটলে দেখি, জানলার কাচটা কারা ভেঙে দিয়ে গিয়েছে।’’
দোতলার ফ্ল্যাটে থাকেন বাসুদেববাবু ও তাঁর স্ত্রী কেয়াদেবী। দু’জনেই শিক্ষকতা করেন। বাসুদেববাবুর অভিযোগ, ফ্ল্যাটের পাশেই তারস্বরে মাইকের শব্দ রাত দশটা পর্যন্ত ঘরের দরজা, জানলা বন্ধ করে সহ্য করেছেন। কিন্তু তার পরেও মাইক থামছে না দেখে ক্লাবকর্তাদের কাছে মাইক বন্ধের আর্জি জানান।
বাসুদেববাবু জানান, রবিবার সন্ধ্যা সাতটা থেকে মাইকে শুরু হয় চটুল হিন্দি গানের সঙ্গে নাচ। বাসুদেববাবু বলেন, ‘‘রাত দশটার পরে গিয়ে বলি, ‘অনেক হয়েছে। এ বার থামান।’ কিন্তু, ওরা জলসা থামাননি। উল্টে আরও জোরে গান বাজতে শুরু করেন। আমি ঘরে ফিরে এসেছিলাম।’’ গানের তীব্রতা না কমায় দ্বিতীয় বার নীচে নামেন বাসুদেববাবু। আবার গান বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করেন পাড়ার ক্লাবের সদস্যদের। অভিযোগ, এই সময়ে জনা কুড়ি যুবক তাঁকে ঘিরে ধরে হুমকি দিয়ে বলেন, ‘‘ভাল চান তো ঘরে চলে যান। না হলে দেখে নেব।’’
বাসুদেববাবু বাঘা যতীনের শ্রীকলোনির বাণীভবন উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক। কেয়াদেবী ডায়মন্ড হারবার ফকিরচাঁদ কলেজের অধ্যাপিকা। তাঁদের মেয়ে একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। ঘটনার পর থকেই আতঙ্কে রয়েছে গোটা পরিবার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy