Advertisement
E-Paper

প্রিয় হাতিদের ছেড়ে চলে গেলেন ধৃতিকান্ত লাহিড়ী চৌধুরী

আপাদমস্তক জঙ্গলপ্রেমী ধৃতিকান্তের শেষ দিকের সব লেখাতেই ধরা পড়ছিল জঙ্গল বাঁচানোর আর্তি। বলতেন, হাতি বাঁচানো বড় কথা নয়, জঙ্গল বাঁচানোর জন্যই হাতিকে দরকার। দেশের বিভিন্ন জঙ্গলের বুক চিরে রেলপথ বানানো আর সেই রেলপথ হাতিদের বধ্যভূমিতে পরিণত হওয়া নিয়ে সরব হয়েছেন বহুবার। কিন্তু সেই কথা শোনারও বোধহয় কেউ ছিল না।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৯ ২০:২৯
ধৃতিকান্ত লাহিড়ী চৌধুরী। (১৯৩১-২০১৯)। ফাইল চিত্র

ধৃতিকান্ত লাহিড়ী চৌধুরী। (১৯৩১-২০১৯)। ফাইল চিত্র

প্রয়াত হলেন হস্তি বিশেষজ্ঞ ধৃতিকান্ত লাহিড়ী চৌধুরী।শুক্রবার সকালে ভবানীপুরে নিজের বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ধৃতিকান্তবাবু। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। কিছু দিন ধরে শ্বাসকষ্টজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন তিনি। তাঁর এক ছেলে ও স্ত্রী বর্তমান।

হাতি আর জঙ্গল ছিল ধৃতিকান্ত লাহিড়ী চৌধুরীর জীবন। তাঁর সাহিত্যচর্চাও জঙ্গল জীবনকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়েছে। তাঁর প্রকাশিত ‘হাতি ও বনজঙ্গলের কথা’, ‘হাতির বই’, ‘বৈঠকী’, ‘জঙ্গলগাথা ও রসনাবিলাস’, ‘জীবনের ইন্দ্রধনু’, ‘আ ট্রাঙ্ক ফুল অব টেলস’, ‘দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান এলিফ্যান্ট বুক’ ইত্যাদি। তাঁর অসংখ্য প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পত্রিকায় ও সংকলনে। ‘হাতির বই’-এর জন্য ২০০৭ সালে আনন্দ পুরস্কার পেয়েছিলেন ধৃতিকান্ত।

অধুনা বাংলাদেশের ময়মনসিংহে যে-বাড়িতে জন্মেছিলেন ধৃতিকান্ত, সেই বাড়ির নিজস্ব হাতির সংখ্যাই ছিল পনেরো। বড়দের সঙ্গে জমিদারি এলাকা পরিদর্শন আর শিকারের অভিযানে গিয়ে বাড়ির হাতি শর্মিলা আর চন্দ্রচূড়দের পিঠে চাপার শুরু তখন থেকেই। গৌরীপুরের রাজ পরিবারের কিংবদন্তিসন্তান প্রকৃতীশচন্দ্র বড়ুয়ার কাছে হাতি নিয়ে হাতেখড়ি তখনই। দেশভাগের সময় ষোলো বছর বয়সে ময়মনসিংহ ছেড়ে কলকাতায় চলে এলেও হাতির সঙ্গে তাঁর সম্পর্কে কখনও বিচ্ছিন্নতা আসেনি। বিচ্ছিন্নতা এল শুক্রবার সকাল ৮টায়।

শৈশব পূর্ববঙ্গে কাটালেও দেশভাগের পর থেকেই কলকাতার স্থায়ী বাসিন্দা। হাতি, জঙ্গল, সাহিত্য আর হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সঙ্গীত—এই ছিল ধৃতিকান্তের জীবনের বিচরণভূমি। নিজে থেকে শিখেছিলেন লাতিন ভাষাও। প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইংরেজিতে স্নাতক, স্নাতকোত্তর পড়াশোনা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে, ইংল্যান্ডের লিডস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি, কেমব্রিজের অভিজাত ক্লেয়ার হল কলেজের আজীবন সদস্য এবং রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা।

শুধু সাহিত্য নয়, তাঁর কর্মজীবনের সঙ্গেও নিবিড় ভাবে জড়িয়ে আছে হাতি। ১৯৭৭ থেকে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার-এর হস্তি বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্য এবং ১৯৭৮ থেকে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বন্যপ্রাণী উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য। ভারত সরকারের হস্তি প্রকল্প চালু হওয়ার আগে তার রূপরেখা নির্ধারণের জন্য নিযুক্ত টাস্ক ফোর্সেরও সদস্য ছিলেন তিনি।

হাতিদের খোঁজে, হাতিদের রূপকথার খোঁজে ধৃতিকান্ত বেরিয়ে পড়তেন গারো-জয়ন্তিয়া পাহাড়, বিহার, ওড়িশা, মধ্যপ্রদেশ-সহ সারা দেশে। পাড়ি দিতেন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতেও। সেই জঙ্গল জীবন ধরা পড়েছে তাঁর আমেজি কলমে।

আপাদমস্তক জঙ্গলপ্রেমী ধৃতিকান্তের শেষ দিকের সব লেখাতেই ধরা পড়ছিল জঙ্গল বাঁচানোর আর্তি। বলতেন, হাতি বাঁচানো বড় কথা নয়, জঙ্গল বাঁচানোর জন্যই হাতিকে দরকার। দেশের বিভিন্ন জঙ্গলের বুক চিরে রেলপথ বানানো আর সেই রেলপথ হাতিদের বধ্যভূমিতে পরিণত হওয়া নিয়ে সরব হয়েছেন বহুবার। কিন্তু সেই কথা শোনারও বোধহয় কেউ ছিল না।

Dhriti Kanta Lahiri Choudhury Elephant Expert
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy