E-Paper

বর্ষায় বিপজ্জনক আটক করা গাড়ির ‘জঙ্গল’, সরানোর উদ্যোগ

শহরের বিভিন্ন থানার বাইরে এমন বাতিল গাড়ির ‘ভিড়’ ফাঁকা করতে সেগুলি ডাম্পিং গ্রাউন্ডে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে লালবাজার। এর জন্য ডাম্পিং গ্রাউন্ড থেকে সরানো হবে জমে থাকা পুরনো গাড়িগুলিকে।

চন্দন বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২৫ ০৭:৩৭
বোঝা: প্রগতি ময়দান থানার সামনে পড়ে রয়েছে বিভিন্ন মামলায় আটক, ভাঙাচোরা বহু গাড়ি। শুক্রবার।

বোঝা: প্রগতি ময়দান থানার সামনে পড়ে রয়েছে বিভিন্ন মামলায় আটক, ভাঙাচোরা বহু গাড়ি। শুক্রবার। ছবি: সুমন বল্লভ।

থানা সংলগ্ন রাস্তার ধারে দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া গাড়ি আর মোটরবাইকের সারি। মাসের পর মাস কোনও রকম নড়াচড়া নেই। সেই ‘গাড়ির জঙ্গল’ ঢেকে যাওয়ার উপক্রম লতাপাতায়! বর্ষার কয়েক দিনের বৃষ্টিতেই বাতিল গাড়ির ভিতরে বিভিন্ন জায়গায় জল জমে মশার প্রজননের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়েছে। শহরের বিভিন্ন থানার বাইরে এমন বাতিল গাড়ির ‘ভিড়’ ফাঁকা করতে সেগুলি ডাম্পিং গ্রাউন্ডে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে লালবাজার। এর জন্য ডাম্পিং গ্রাউন্ড থেকে সরানো হবে জমে থাকা পুরনো গাড়িগুলিকে।

লালবাজার সূত্রের খবর, বিদ্যাসাগর সেতু এবং সিক লেনের ডাম্পিং গ্রাউন্ড থেকে আপাতত গাড়িগুলি সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ওই দু’টি ডাম্পিং গ্রাউন্ডে দীর্ঘ বেশ কয়েক বছর ধরে পড়ে থাকা ২৪৭টি গাড়ি আপাতত সরিয়ে দেওয়া হবে। মোটরবাইক, স্কুটার, ট্যাক্সি থেকে শুরু করে লরি ও ব্য়ক্তিগত গাড়িও এই তালিকায় রয়েছে। ইতিমধ্যেই লালবাজারের তরফে নিলামের মাধ্যমে গাড়ি বিক্রির দরপত্র ডাকা-সহ প্রয়োজনীয় তৎপরতা শুরু করা হয়েছে।

লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্ঘটনা, মামলা-মোকদ্দমা-সহ নানাবিধ কারণে গাড়িগুলি দীর্ঘদিন ধরে পড়ে রয়েছে। কেউ সেগুলি দাবি করেননি। ফলে, কার্যত ‘বোঝা’ হয়ে কলকাতা পুলিশের ডাম্পিং গ্রাউন্ডে পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে সেগুলি। গাড়িগুলি ঘিরে ঝোপ-জঙ্গল তৈরি হয়ে যাওয়ায় সেখানে মশা-মাছির উপদ্রবও বাড়ছিল বলে অভিযোগ। শুধু তা-ই নয়, ডাম্পিং গ্রাউন্ড ফাঁকা না থাকায় শহরের বিভিন্ন থানার আশপাশে জমে থাকা গাড়ি সরিয়ে সেখানে নিয়ে যাওয়া যাচ্ছিল না।

এ দিকে, প্রতি বছরই বর্ষার সময়ে শহরে ডেঙ্গির সংক্রমণ বাড়ে। এ বছরও বর্ষার শুরুতে শহরে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে এক জনের মৃত্যুর ঘটনা সামনে এসেছে। বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে অনেকের ভর্তির খবরও মিলছে। এই আতঙ্কের মধ্যেই বাতিল গাড়িগুলি ঘিরে বিপজ্জনক অবস্থা সৃষ্টি হওয়ার আঁচ মিলেছে শহরের বিভিন্ন থানা থেকে। থানার পাশেই রাখা বাতিল গাড়ির নীচে কোথাও জল জমেছে, কোথাও গাড়ির ভাঙা কাচ দিয়ে জল ঢুকেছে ভিতরে। তালতলা, ওয়াটগঞ্জ, কসবা, শ্যামপুকুর, প্রগতি ময়দান, আনন্দপুর থানা— সর্বত্র কার্যত একই ছবি। ই এম বাইপাস সংলগ্ন প্রগতি ময়দান থানায় দেখা গেল, বাতিল সারি সারি বাইক ও গাড়ি ঘিরে ধরেছে লতা-পাতা। কয়েকটি গাড়ির এমনই অবস্থা, লতাপাতার ফাঁক দিয়েও গাড়ি দেখা যাচ্ছে না। একই ছবি কার্যত আনন্দপুর থানাতেও। কসবা থানায় আবার গাড়িগুলি সামনের রাস্তায় এমন ভাবে রাখা যে, রাস্তার পরিসরই ছোট হয়ে গিয়েছে। প্রগতি ময়দান থানার এক পুলিশকর্মী জানালেন, গাড়ির জঙ্গল ঘিরে মশা, সাপ, পোকামাকড়ের ভয় জেনেও কিছু করার থাকে না। তাঁর কথায়, ‘‘বর্ষা এ‌লে মশা না কামড়ানোর ক্রিমই আমাদের ভরসা। সকাল-বিকেল যখনই থানায় আসি, ওটা মেখেই ডিউটি করি।’’

জনস্বাস্থ্য বিষয়ক চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই বলেন, ‘‘ডেঙ্গির মশা সাধারণত অল্প এবং পরিষ্কার জলে জন্মায়। ফলে, বর্ষার এই দুই-এক পশলা বৃষ্টি ডেঙ্গির মশার ডিম পাড়ার জন্য আদর্শ। তাই এই সময়ে আমাদের চার দিক নিয়মিত পরিষ্কার রাখতেই হবে। নিয়মিত দেখতে হবে, কোথাও যেন কোনও ভাবে জল জমে না থাকে। সচেতন না হলে ডেঙ্গির মশার বাড়বাড়ন্তের আশঙ্কা থেকেই যাবে।’’

জানা গিয়েছে, দুর্ঘটনা বা অন্য কোনও কারণে গাড়িগুলিকে সাধারণত থানা আটক করে রাখে। মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সেগুলি রেখে দিতে হয়। থানায় এমন গাড়ির সংখ্যা বাড়লে সেখান থেকে লালবাজারের ডাম্পিং গ্রাউন্ডে নিয়ে গিয়ে সেগুলি রেখে আসা হয়। কিন্তু এমন গাড়ির চাপে ডাম্পিং গ্রাউন্ডও পূর্ণ হয়ে যাওয়ায় বহু থানাতেই গাড়ির চাপ বাড়ছিল। তাই আপাতত নিষ্পত্তি হয়ে যাওয়া বা মামলা শেষ হয়ে যাওয়া মালিকানাহীন গাড়িগুলি চিহ্নিত করে ডাম্পিং গ্রাউন্ড থেকে সরানোর কথা ভাবা হয়েছে। ডাম্পিং গ্রাউন্ড ফাঁকা হলেই বিভিন্ন থানায় পড়ে থাকা গাড়িগুলি সেখানে পাঠানো হবে। লালবাজারের এক কর্তার কথায়, ‘‘ইতিমধ্যেই দরপত্র ডাকা হয়ে গিয়েছে। দ্রুত যাতে গোটা প্রক্রিয়া শেষ হয়, সেই চেষ্টা করা হচ্ছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Lalbazar Monsoon

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy