E-Paper

জলে পড়ার আগে কি একাই ছিলেন অনামিকা

এখনও পর্যন্ত পুলিশ যা জেনেছে, মেয়েটি শৌচাগারে যাওয়ার কিছু ক্ষণের মধ্যে আরও কয়েক জন মেয়ে ওই দিকে যান। তাঁরাই অনামিকার ডুবে যাওয়ার বিষয়টি বুঝে চেঁচামেচি করেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৫:৪৫

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

ঝিলে পড়ে মৃত্যুর কিছু ক্ষণ আগে একা একাই ইউনিয়ন রুম লাগোয়া মেয়েদের শৌচাগারের দিকে হেঁটে গিয়েছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই ছাত্রী। পুলিশের হাতে জমা পড়া সিসি ক্যামেরার ফুটেজে সেটাই ধরা পড়েছে বলে দাবি উঠে আসছে। একটি খটকাও এখানে তৈরি হচ্ছে। ঝিলের ধারে বেড়ার ফাঁকের যে অংশটি থেকে ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী অনামিকা মণ্ডল পড়ে গিয়েছিলেন, সেই অংশটি বেরোনোর পথের উল্টো দিকে। সেখানে সাধারণ ভাবে কারও যাওয়ার কথাই নয়। এ ক্ষেত্রে কোনও কারণে ওই ছাত্রীর দৃষ্টি বিভ্রম হয়েছিল কি না, সে-প্রশ্নও উঠছে। সবুজ পানায় ঢাকা ঝিলে ভুল করে তিনি মাঠ ভেবে পা রাখতে পারেন বলেও কেউ কেউ মনে করছেন।

এখনও পর্যন্ত পুলিশ যা জেনেছে, মেয়েটি শৌচাগারে যাওয়ার কিছু ক্ষণের মধ্যে আরও কয়েক জন মেয়ে ওই দিকে যান। তাঁরাই অনামিকার ডুবে যাওয়ার বিষয়টি বুঝে চেঁচামেচি করেন। ওই রাতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের চার নম্বর গেটে কর্তব্যরত নিরাপত্তারক্ষী অর্জুন দে জানান, তিনিও চিৎকার-চেঁচামেচি শুনেই ছুটে গিয়েছিলেন। অর্জুনের সঙ্গে ইতিমধ্যে পুলিশ এক প্রস্ত কথা বলেছে। অর্জুন শনিবার বলেন, ‘‘আমি মেয়েটিকে ভাসতে দেখিনি। ও ডুবে গিয়েছিল। দু’জন ছাত্র ঝিলে ঝাঁপিয়ে ছাত্রীটিকে তোলেন। তার পরে প্রাথমিক শুশ্রূষার চেষ্টারপরেই ওই ছাত্রীকে অ্যাম্বুল্যান্সে হাসপাতালে পাঠানো হয়। আমি গেট খুলে দিই। রাতেই পুলিশকে সব বলেছি। পুলিশ এসে ওই তল্লাট দড়ি দিয়ে ঘিরে দেয়।’’

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ঘটনাটি নিয়ে পুলিশি তদন্ত শুরু হলেও কেন, কী ভাবে এমন দুর্ঘটনা শিক্ষাঙ্গনের অন্দরে ঘটল, তা নিয়ে যাদবপুর কর্তৃপক্ষের তরফে এখনও কোনও অভ্যন্তরীণ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত হয়নি। সহ-উপাচার্য অমিতাভ দত্ত বলেন, ‘‘আমরা পুরো বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে শীঘ্রই বসব। তখনই সিদ্ধান্ত হবে, এ বিষয়ে আমরাআলাদা করে আরও কী কী করতে পারি!’’ বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষাঙ্গনে র‌্যাগিং বা যৌন হেনস্থার ক্ষেত্রে সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তরফেও কিছু পদক্ষেপ করা হয়। এর নির্দিষ্ট পদ্ধতি আছে। র‌্যাগিংয়ের ক্ষেত্রে অ্যান্টি র‌্যাগিং কমিটি বা স্কোয়াড অনুসন্ধান করে। যৌন হেনস্থার ক্ষেত্রেও অভ্যন্তরীণ অভিযোগ নিষ্পত্তি সমিতি বা আইসিসি পদক্ষেপ করে। কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনাটির ক্ষেত্রে কী করণীয় তা নিয়ে কিছুটা দ্বিধা রয়েছে যাদবপুরের অন্দরে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এই দৃষ্টিভঙ্গিতে কিছুটা ক্ষোভও রয়েছে শিক্ষকদের একাংশে।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির (জুটা) তরফে যাদবপুরের রেজিস্ট্রারকে এ দিন চিঠি দিয়েছেন জুটা-র সভাপতি পার্থপ্রতিম বিশ্বাস এবং সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায়। তাতে যাদবপুরের অন্দরে বার বারই যখন যেটা করার সেটা না-করা বা দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া নিয়ে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষোভের সুর উঠে এসেছে। কোনও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ঘটলে শিক্ষাঙ্গনে শৃঙ্খলা বজায় রাখা বা বেপরোয়া ভাবে মদ-মাদক সেবন বন্ধ করার ক্ষেত্রেও কর্তৃপক্ষের দায় তাঁরা মনে করিয়েছেন।

অন্য একটি অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু আবার যাদবপুরের অরাজক পরিস্থিতির জন্য কেন্দ্রের রাজনীতির দিকেও আঙুল তোলেন। তিনি বলেন, ‘‘ইচ্ছা করে যাদবপুরের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যকে সরিয়ে মস্তকহীন করে রাখা হল। এর ফলেও অরাজকতা তৈরি হচ্ছে।’’ তাঁর আশ্বাস, ‘যাদবপুরের সিসি ক্যামেরার বিষয়ে অর্থ দফতর সায় দিয়েছে। বিষয়টি নতুন উপাচার্য নেওযার সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর হবে বলে ব্রাত্য জানান। শুক্রবার রাতেই ছাত্রীটির শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় বলে জানা গিয়েছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Jadavpur University Student Death Jadavpur University police investigation

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy