E-Paper

জয়ন্ত-সঙ্গীর জামিন খারিজে পুলিশ যাবে উচ্চ আদালতে

পুলিশের দাবি, প্রসেনজিতের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা আইনের ১২৬/২ (বলপূর্বক আটকানো), ১১৭/২ (গুরুতর আঘাত), ১১০ (অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা) ধারায় স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে মামলা দায়ের করা হয়েছিল।

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০২৪ ০৭:৪৭
কলকাতা হাই কোর্ট।

কলকাতা হাই কোর্ট। —ফাইল চিত্র।

আড়িয়াদহের ‘ত্রাস’ জয়ন্ত সিংহের শাগরেদ প্রসেনজিৎ দাস ওরফে লাল্টুকে অন্তর্বর্তী জামিন দিয়েছে ব্যারাকপুর আদালত। যদিও, ‘জায়ান্ট’-কাণ্ডে বিভিন্ন ভিডিয়ো (আনন্দবাজার যেগুলির সত্যতা যাচাই করেনি) প্রকাশ্যে এসেছে। পুলিশ জানিয়েছে, তারই একটিতে দেখা গিয়েছিল, চোর সন্দেহে এক জনকে রীতিমতো বিবস্ত্র করে তাঁর যৌনাঙ্গে সাঁড়াশি চেপে অত্যাচার চালাচ্ছে প্রসেনজিৎ। ভিডিয়োয় তাকে স্পষ্ট দেখা গেলেও কী ভাবে সে জামিন পেল, তা নিয়ে উচ্চ আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশ। পাশাপাশি, সেই ভিডিয়োটি ফরেন্সিক পরীক্ষাতেও পাঠানোর পরিকল্পনা করেছে তারা।

পুলিশের দাবি, প্রসেনজিতের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা আইনের ১২৬/২ (বলপূর্বক আটকানো), ১১৭/২ (গুরুতর আঘাত), ১১০ (অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা) ধারায় স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে মামলা দায়ের করা হয়েছিল। মঙ্গলবার ব্যারাকপুর আদালতে প্রসেনজিতের আইনজীবী মাধব চট্টোপাধ্যায় শুনানিতে দাবি করেন, ২০১৯ সালে ভিডিয়োটি কে তুলেছিলেন কিংবা কাকে মারধর করা হচ্ছে, তার কিছুই চিহ্নিত করতে পারেনি পুলিশ। এমনকি, পাঁচ বছর আগের ওই ঘটনা সম্পর্কে পুলিশের কাছে কোনও অভিযোগ বা নির্যাতিতের শারীরিক পরীক্ষার নথিও নেই। তাই জামিন দেওয়া যেতে পারে। এর পাল্টা হিসাবে সরকারি কৌঁসুলি শুধু জানান, তদন্ত প্রক্রিয়া চলায় এখন জামিন দেওয়া ঠিক হবে না।

যদিও পুলিশকর্তাদের প্রশ্ন, যেখানে প্রসেনজিৎকে ওই ভিডিয়োয় স্পষ্ট ভাবে ‘অপরাধ’ করতে দেখা যাচ্ছে, সেখানে তদন্তের স্বার্থে তাকে পুলিশি বা জেল হেফাজতে রাখা হবে না কেন? তাঁদের আরও দাবি, ভিডিয়োটি বিকৃত করা হয়েছে, এমন প্রমাণও মেলেনি। তা হলে সেটিকেই প্রাথমিক প্রমাণ হিসাবে ধরে নেওয়া হবে না কেন? সূত্রের খবর, জিজ্ঞাসাবাদে প্রসেনজিৎ দাবি করেছে, পাঁচ বছর আগের এক রাতে ক্লাবে কাকে ধরে এনে মারধর করা হয়েছিল, তা তার মনে নেই। অর্থাৎ, প্রকারান্তরে মারধরের কথা সে স্বীকার করেছে। এই সমস্ত বিষয়ের উল্লেখ করেই ব্যারাকপুর আদালতের অতিরিক্ত জেলা দায়রা বিচারকের কাছে জামিন খারিজের আবেদন করবে ব্যারাকপুর পুলিশ।

হাই কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী মিলন মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘জামিন বিচারকের নিজস্ব সিদ্ধান্ত। তা নিয়ে কিছু বলার নেই। তবে, পুলিশ যে দাবিগুলি করছে, সরকারি আইনজীবীর সেগুলি জোর দিয়ে আদালতে বলা উচিত ছিল। এবং সেগুলি কেস রেকর্ডে থাকলে তা পেশ করাও উচিত ছিল।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘পুলিশ দায়রা বিচারকের কাছে জামিন খারিজের আবেদন করতেই পারে। এ বার তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন, পরবর্তী ক্ষেত্রে কী করণীয়।’’ আবার, হাই কোর্টের আইনজীবী সুদীপ্ত দাশগুপ্তের মতে, এই মামলায় পুলিশের তরফে আগেই ভিডিয়োটির ফরেন্সিক পরীক্ষা করিয়ে, তা যে বিকৃত নয়, সে ব্যাপারে প্রাথমিক রিপোর্ট পেশ করা উচিত ছিল এবং নির্যাতিতকে খুঁজে বার করতে কী কী পদক্ষেপ করা হচ্ছে, তা-ও সবিস্তার আদালতে জানানো উচিত ছিল।

পুলিশ সূত্রের খবর, প্রসেনজিতের মামলায় পরবর্তী সময়ে পুলিশ পকসো আইন যুক্ত করতে চাইলেও আদালত তা মঞ্জুর করেনি। যদিও প্রসেনজিতের বিরুদ্ধে যে তিনটি ধারা দেওয়া হয়েছে, তার সঙ্গে পকসো আইনে মামলা দায়ের করা পুলিশের আগেই উচিত ছিল বলে মত সুদীপ্তের। তিনি বলেন, ‘‘পকসো থাকলে জামিন হওয়া মুশকিল ছিল। আর মামলাটিও স্পেশ্যাল কোর্টে উঠত।’’ পুলিশের দাবি, ভিডিয়োর ভিত্তিতে প্রথমেই মামলা দায়ের করে প্রসেনজিৎকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার পরে ভিডিয়ো খতিয়ে দেখে নির্যাতিত যে নাবালক, তা সামনে আসায় পকসো আইন যুক্ত করতে চাওয়া হয়েছিল। তবে, মিলনের মতো সিনিয়র আইনজীবীরা জানাচ্ছেন, জামিন হয়েছে অন্তর্বর্তী। তাই, পুলিশ আরও যথোপযুক্ত কোনও তথ্যপ্রমাণ জোগাড় করে আদালতে পেশ করলে, পরবর্তী সময়ে জামিন খারিজ হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Calcutta High Court Barrackpore Court Jayant Singh police

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy